সূর্যগ্রহণ দেখতে না পেয়ে হতাশ প্রধানমন্ত্রী। নয়াদিল্লিতে। পিটিআই
চাঁদ ধরা হয়নি, নিরাশ করল সূর্যও। বাড়ির সুপ্রশস্ত সবুজ লনে দাঁড়িয়ে দৃষ্টিনন্দন রোদচশমা পরে আকাশে চোখ রেখেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। দশকের শেষ বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণের সাক্ষী থাকতে চেয়েছিলেন। মেঘ-কুয়াশা-দূষণজনিত ধোঁয়াশার চাদর কিছুই দেখতে দিল না। মাঝখান থেকে চর্চার বিষয় হয়ে উঠল ব্র্যান্ডেড চশমাটাই। দশলাখি স্যুটের মতো ‘দেড়লাখি চশমা’ ভাইরাল থাকল দিনভর।
এর আগে দ্বিতীয় দফায় সরকারে আসার ১০০ দিন পূর্ণ করার দিনটিতে চন্দ্রযানের চন্দ্রাবতরণ দেখতে হাজির হয়েছিলেন ইসরো-র দফতরে। মিশন সফল হয়নি। কিন্তু ইসরো-র চেয়ারপার্সন কে শিবনকে সান্ত্বনা দিয়ে বুকে টেনে মোদীই ছিলেন খবরের শীর্ষে। সূর্যগ্রহণেও তা-ই থাকলেন, তবে মোদীকে ছাপিয়ে নজর কেড়ে নিল মোদীর চশমা। মোদী নিজে ছবিটি পোস্ট করার পরেই এক টুইটার ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, এই ছবি অচিরেই ‘মিম’ হয়ে উঠবে। মোদী জবাব দিলেন, ‘সুস্বাগতম! আনন্দ করুন।’
শেষ অবধি মোদীর পক্ষে বিষয়টি কতটা আনন্দদায়ক হল, সেটা নিয়ে অবশ্য নানা মুনির নানা মত। কারণ শুধু ‘মিম’ নয়, মোদীর চশমা রীতিমতো রাজনৈতিক রং নিল নেটিজেন এবং বিরোধী শিবিরের তৎপরতায়। অনেকেই দাবি করলেন, জার্মান সংস্থার তৈরি রোদচশমাটির দাম দেড় লাখ টাকার বেশি। কেউ কেউ আবার পাল্টা ছবি দিয়ে প্রমাণ করতে চাইলেন, মোটেই দেড় লাখ নয়। চশমাটির দাম তিন থেকে চার হাজারের মধ্যে! আসল দাম যা-ই হোক, সারা দিন ধরে এক দিকে মোদীকে তাড়া করল ‘দশলাখির পর দেড়লাখি’র কটাক্ষ, অন্য দিকে নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি ‘পোশাক’ নিয়ে যে মন্তব্য করেছিলেন, তার পাল্টাও ফিরে এল তাঁর দিকে।
জার্মান সংস্থার তৈরি সেই রোদ চশমা। দাবি, এর দাম দেড় লক্ষ টাকারও বেশি। যদিও অনেকে বলছেন, এই ধরনের রোদ চশমা অনলাইনে ৫-৬ হাজার টাকাতেও মেলে। ডান দিকে, নিজের নাম লেখা দশ লাখি সেই স্যুট।
এর আগে সরকারের প্রথম দফায় প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে দেখা করার অনুষ্ঠানে সারা গায়ে সুতো দিয়ে ‘নরেন্দ্র মোদী’ লেখা দশলাখি স্যুট পরেছিলেন মোদী। তা নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। রাহুল গাঁধী তার পর থেকেই মোদী সরকারকে ‘স্যুট বুট কি সরকার’ বলতেন। পরেও মোদীর বহুমূল্য পেন আর মনমোহন সিংহের পেনের ছবি পাশাপাশি দিয়ে ‘মিম’ হয়েছিল অজস্র। এই সোমবারই রাজঘাটের সভা থেকে রাহুল ফের মোদীর স্যুটের কথা মনে করিয়ে বলেছিলেন, পোশাক দিয়েই চেনা যায় বটে! আজ মোদীর চশমা-চর্চা সেটাকেই আরও এগিয়ে নিয়ে গেল।
আরও পড়ুন: সেনাপ্রধানের মুখেও রাজনীতি, কাঠগড়ায় তুললেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে
বিজেপি শিবির সোমবারও বলেছিল, আজও বলছে, অন্য নেতারা কি কেউ দামি পোশাক পরেন না? রাহুলের জ্যাকেট, সনিয়া গাঁধীর শাল কি দামি নয়? উত্তরে বিরোধীরা মনে করাচ্ছেন, অন্য নেতারা নিজেদের বারংবার ফকির বলে প্রচার করেননি। মোদীই করেছেন, তাই প্রশ্ন উঠছে।
‘ব্র্যান্ডেড ফকির’ হ্যাশট্যাগ করেছেন বিরোধীরা। নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে কারা আন্দোলন করছেন, তা ‘পোশাক দিয়েই চেনা যাচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন মোদী। সিপিএম-এর প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ সেলিম ‘ব্র্যান্ডেড ফকির’ হ্যাশট্যাগ দিয়েই টুইট করে বলেছেন, ‘‘আমরা তো পোশাক দেখেই ফকিরকে চিনতে পারি! প্রায় দু’ লাখ টাকা দামের সানগ্লাস পরেই প্রধানমন্ত্রী বেকার যুবশক্তি, পতনশীল জিডিপি, মূল্যবৃদ্ধি, পরিবেশ বিপর্যয় এবং নাগরকিত্ব বিরোধী আন্দোলন কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না!’’ কংগ্রেসের কটাক্ষ, ‘মোদী দারুণ কুল! যখন গোটা দেশ জ্বলছে, উনি দিব্যি রয়েছেন।’
এ দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদই মোদী তাঁর গ্রহণ দেখতে বেরনোর ছবি টুইট করেন। সঙ্গে কেরলের বলয়গ্রাসের লাইভস্ট্রিম দেখার ছবি এবং বিজ্ঞানীদের সঙ্গে আলাপরত ছবিও ছিল। নিজেই লেখেন, মেঘে ঢাকা আকাশ তাঁকে গ্রহণ দেখতে দেয়নি। পুলওয়ামা হামলার পরে এই মেঘই অবশ্য তাঁর সহায় হয়েছিল। মেঘ দেখেই তিনি বালাকোটে বায়ুসেনা অভিযানের সবুজ সঙ্কেত দিয়েছিলেন। মেঘের আবরণ পাক-রাডারকে ঢেকে দেবে বলে মনে করেছিলেন তিনি। এ বার মেঘলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে মহাকাশবিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে, আর, পরে লাইভস্ট্রিম দেখেই তাঁকে সন্তুষ্ট থাকতে হল।