নিউ ইয়র্ক থেকে নয়াদিল্লিতে ফেরার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
‘হাউডি মোদী’ থেকে ফিরেই নতুন করে ‘হাউ ইজ দ্য জোশ’-এর আবেগ উস্কে দিলেন নরেন্দ্র মোদী।
মার্কিন সফর সেরে আজ দিল্লিতে ফিরেই প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দিলেন, তিন বছর আগে এই ২৮ সেপ্টেম্বরের রাতেই নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছিল ভারতীয় সেনা। রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কার্যত যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিলেও মোদী তাঁর বক্তৃতায় পাকিস্তানের নামও করেননি। কিন্তু দেশের মাটিতে পা দিয়েই সার্জিকাল স্ট্রাইকের কথা স্মরণ করিয়ে মোদী ইমরানকেই জবাব দিলেন বলে মনে করছেন বিজেপি নেতারা। মোদী বলেন, ‘‘তিন বছর আগে সে-ও এক ২৮ সেপ্টেম্বরের রাত ছিল। আমি গোটা রাত জেগে ছিলাম। চোখের পাতা এক করতে পারিনি, কখন টেলিফোন বাজবে। ভারতের বীর জওয়ানদের সার্জিকাল স্ট্রাইক সোনার অক্ষরে লেখা রয়েছে, যাঁরা মৃত্যুকে মুঠোয় নিয়ে রওনা হয়েছিলেন। আজ সেই রাতকে স্মরণ করে বীর জওয়ানদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।’’
প্রধানমন্ত্রী যখন পালাম টেকনিকাল এয়ারপোর্টের বাইরে এ কথা বলছেন, তখন সামনে হাজার হাজার বিজেপি সমর্থকের ভিড়ে কার্যত ‘হাউডি দিল্লি’-র চেহারা। রাত সওয়া আটটায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বিমান ‘এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান’ মাটি ছোঁয়ার পরে বিজেপির কার্যকরী সভাপতি জে পি নড্ডা-সহ দলীয় নেতারা তাঁকে স্বাগত জানান। বিমানবন্দরের সামনে ও বিমানবন্দর থেকে লোক কল্যাণ মার্গে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন পর্যন্ত রাস্তায় মোদীকে স্বাগত জানাতে ২০ থেকে ৩০ হাজার সমর্থক জোগাড়ের লক্ষ্য নিয়েছিলেন দিল্লির বিজেপি নেতারা। গোটা দেশ প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাচ্ছে, এমন বোঝাতে নানা প্রান্তের পোশাকে সজ্জিত নাচ-গানের শিল্পীদের নিয়ে আসা হয়েছিল।
বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেন, মোদীর আমেরিকা সফরের ফল কী মিলল? মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বন্ধুত্ব হল, মোদী ট্রাম্পের হয়ে ভোট-প্রচার করলেন। কিন্তু ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তিই হল না।
হরিয়ানভি, ভোজপুরী, অসমিয়া, পঞ্জাবি থেকে দক্ষিণ ভারতীয় গানের তালে নাচতে থাকা বিজেপি সমর্থকেরা অবশ্য এ সব শুনতে নারাজ। তাঁদের দাবি, ‘‘মোদীভাই দুনিয়া জয় করে ফিরছেন।’’ আর তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য তৈরি মঞ্চে চওড়া হাসি নিয়ে উঠে মোদী বলেছেন, তিনি ১৩০ কোটি দেশবাসীকে নতমস্তকে প্রণাম করছেন। অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। কিন্তু একই সঙ্গে নিজের ও সরকারের পিঠ চাপড়েছেন মোদী। বলেছেন, ‘‘২০১৪-তে ভোটে জেতার পরেও আমেরিকা, রাষ্ট্রপুঞ্জে গিয়েছিলাম। ২০১৯-এও গেলাম। যা ফারাক বুঝলাম তা হল, বিশ্বের নেতাদের নজরে ভারতের মান-সম্মান বেড়েছে। ভারতকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। এর প্রধান কারণ, ১৩০ কোটি ভারতীয় আরও সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে মজবুত সরকার বানিয়েছেন।’’ মোদী বলেন, হিউস্টনে ট্রাম্পের উপস্থিতিতে ‘হাউডি মোদী’-র সমারোহের পরে নিউ ইয়র্কে বিশ্বের যে কোনও নেতার সঙ্গেই দেখা হলেই তাঁরা ‘হাউডি মোদী’ বলে সম্ভাষণ জানিয়েছেন তাঁকে।
বাসভবনে রওনা হওয়ার আগে দেশবাসীকে নবরাত্রি-দুর্গাপুজোর শুভেচ্ছা জানিয়ে মোদী বলে যান, ‘‘আমি আবার নিজের কাজে লেগে পড়ছি।’’