শিল্পসভায় ভোটপ্রচার প্রধানমন্ত্রী মোদীর

বিশ্বব্যাঙ্কের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’-এর তালিকায় অনেকটা উঠে এলেও বিরোধীদের অভিযোগ, ব্যবসা শুরু বা লগ্নির জন্য জরুরি ক্ষেত্রগুলিতে ভারত পিছিয়েই রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৫
Share:

হিমাচলে মোদী। ছবি: পিটিআই।

সহজে ব্যবসা করা যায় এমন দেশের তালিকায় ভারতকে ১৪২ নম্বর থেকে এক ধাক্কায় ১০০-তে তুলে এনেছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। সেই সাফল্য উদ্‌যাপন করতে আজ শিল্পপতিদের ডেকেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। মঞ্চে হাজির ছিলেন বিশ্ব ব্যাঙ্কের সিইও ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। সুতরাং বক্তৃতাটা ইংরাজিতেই শুরু করেছিলেন মোদী। কিন্তু মাঝপথেই চলে গেলেন হিন্দিতে। বিরোধীদের আক্রমণ করে, নিজের সাফল্যের জয়গান করে পুরোদস্তুর নির্বাচনী বক্তৃতাই দিয়ে ফেললেন। রাজধানীর প্রবাসী ভারতীয় কেন্দ্র যেন হয়ে উঠল গুজরাত বা হিমাচলপ্রদেশ!

Advertisement

বিশ্বব্যাঙ্কের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’-এর তালিকায় অনেকটা উঠে এলেও বিরোধীদের অভিযোগ, ব্যবসা শুরু বা লগ্নির জন্য জরুরি ক্ষেত্রগুলিতে ভারত পিছিয়েই রয়েছে। এখনও নির্মাণের ছাড়পত্র পেতে বা সম্পত্তি নথিভুক্ত করাতে নানা হ্যাপা পোহাতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে তো মোদী-জমানায় পিছিয়ে পড়েছে দেশ।

এই সমালোচনা নিয়ে আজ কংগ্রেসকে কটাক্ষ করেছেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘১৪২-তম স্থান থেকে ১০০-তে উঠে আসার বিষয়টা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা কিছু মানুষ বুঝতেই পারছেন না। আমি এমন এক জন প্রধানমন্ত্রী, যে কখনও বিশ্বব্যাঙ্ক চোখে দেখেনি। অথচ এই পদে এমন লোক ছিলেন, যাঁরা এক সময় বিশ্বব্যাঙ্ক চালিয়েছেন। তাঁরাই এখন এমন তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন!’’ নাম না করলেও মোদীর লক্ষ্য যে মনমোহন সিংহ, সেটা স্পষ্ট।

Advertisement

বস্তুত সেই ইঙ্গিত আরও স্পষ্ট করে মোদীর অভিযোগ, এঁরা নিজেরা কিছু করেননি। আর কেউ কিছু করতে গেলেই প্রশ্ন তুলছেন। তাঁর কথায়, ‘‘যদি দেউলিয়া আইন, বাণিজ্যিক আদালতের মতো সংস্কার আপনাদের জমানায় হতো, তা হলে ভারতের স্থান আগেই ভাল হতে পারত। বিশ্বব্যাঙ্কের এই তালিকা তৈরি শুরু হয়েছে ২০০৪ থেকে। তার পর থেকে ২০১৪ পর্যন্ত কাদের সরকার ছিল, আপনারা সকলেই জানেন।’’

আরও পড়ুন: ‘শৌর্য-গাথা’য় চাঙ্গা কংগ্রেস, প্যাঁচে বিজেপি

বিরোধীদের পাল্টা বক্তব্য, নোট বাতিল, জিএসটি, আর্থিক বৃদ্ধির হারের অধোগতি নিয়ে চাপে থাকা মোদী গুজরাত ভোটের আগে বিশ্বব্যাঙ্কের সূচককেই খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরেছেন। আর সেই কারণেই স্থান-কাল-পাত্র ভুলে চলে গিয়েছেন নির্বাচনী বক্তৃতায়। কিন্তু তাঁর অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই। কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলের দাবি, ‘‘যেটুকু ভাল ফল তা দেউলিয়া আইন, অনলাইনে কর জমার দৌলতেই হয়েছে। এ দু’টির পরিকল্পনা হয়েছিল ইউপিএ আমলেই।’’

বিশ্বব্যাঙ্কের সূচককে সামনে রেখে সাফল্যের ঢাক পেটানো ছাড়া শিল্পের কী লাভ হবে, সেই প্রশ্নও উঠেছে। সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, দেশীয় শিল্পমহলকে লগ্নিতে উৎসাহিত করাও শিল্পোন্নয়ন মন্ত্রক আয়োজিত এই ‘ইন্ডিয়া’জ বিজনেস রিফর্মস’ সম্মেলনের উদ্দেশ্য। কিন্তু বিরোধীরা বলছেন, লগ্নিতে মোটেই উৎসাহ দেখাচ্ছেন না দেশের শিল্পপতিরা। তাঁদের আস্থা ফেরানো তো দূরস্থান, নোট বাতিল বা তাড়াহুড়ো করে জিএসটি চালু করতে গিয়ে শিল্প ও ব্যবসায়ী মহলকে আরও বিপাকে ফেলেছেন মোদী।

মোদী অবশ্য এ সব সমালোচনা কানে তুলতে নারাজ। নোট বাতিলের অস্ত্রে কালো টাকাকে ঘায়েল করার দাবি এর আগে বহু বার করেছেন তিনি। আজ সন্ধ্যায় হিমাচলপ্রদেশে গিয়ে এ বার বেনামি সম্পত্তির উপরে হামলা চালানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। মোদী বলেন, ‘‘গরিবদের কাছ থেকে যা লুঠ করা হয়েছে, তা তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে। আমি এমন পরিস্থিতি তৈরি করব যে ওঁদের (কংগ্রেস নেতাদের) আর বেনামি সম্পত্তি ভোগ করা হবে না।’’

মোদীর দাবি, তিনি রেলের টিকিট সংরক্ষণ, পাসপোর্ট করানো সহজ করে আমজনতার জীবনে বদল এনেছেন। পাশাপাশি তাঁর আশ্বাস, আগামী সপ্তাহেই জিএসটি পরিষদের বৈঠকে ওই কর নিয়ে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের প্রায় সব সমস্যা ও অভিযোগ মিটিয়ে ফেলা হবে।

এ দিন শিল্পপতিদের সামনে শুধু সরকারের সাফল্য নয়, নিজের ঢাকও পিটিয়েছেন মোদী। বলেছেন, ‘‘আপনারা জানেন, আমার ওয়ান লাইফ, ওয়ান মিশন। দেশ আর একশো কোটি নাগরিকের জীবনে কিছু পরিবর্তন আনাই আমার লক্ষ্য।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement