জাপানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। স্বাগত জানাতে হাজির খুদেরাও। সোমবার টোকিয়োয়। ছবি পিটিআই।
স্বামী বিবেকানন্দ জাপানে এসে বলেছিলেন, ভারতের প্রত্যেক যুবার জীবনে এক বার অন্তত জাপানে আসা জরুরি। স্বামীজির এই বক্তব্য উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সংযোজন, “আর আমি বলছি জাপানের প্রত্যেক যুবা একবার অন্তত তার জীবনে ভারত যাত্রা করুন।” তাঁর কথায়, “আমার লালনপালন এবং সংস্কার এমন যে মাখনে দাগ টেনে আনন্দ পাই না। পাথরে খোদাই করার অভ্যাস আমার!”
সোমবার টোকিয়ো পৌঁছে জাপানে বসবাসকারী ভারতীয়দের সামনে এ ভাবেই আসর গরম করলেন মোদী। সেই উত্তাপের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রতি পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে শোনা গেল উচ্চগ্রামে ‘মোদী মোদী’ ধ্বনি। প্রেক্ষাগৃহ থেকে ভেসে এল সেই স্লোগান, ‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’। বিদেশ সফরের মঞ্চকে নরেন্দ্র মোদী ঘরোয়া রাজনৈতিক বার্তার কাজে সার্থক ভাবেই ব্যবহার করেন, এমন উদাহরণ রয়েছে অজস্র। আজ সেই ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রেখেই কার্যত নিজের সরকারের শ্রেষ্ঠত্বকে তুলে ধরেছেন মোদী। সেই সঙ্গে নাম না করে কংগ্রেসকেও নিশানাও করেছেন সুযোগমতো, সম্মিলিত হর্ষধ্বনির মধ্যে। জাপান এবং ভারতের গভীর সংযোগ বোঝাতে তাঁর বক্তৃতায় আজ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বিবেকানন্দের প্রসঙ্গ এসেছে বারবার।
মোদীর কথায়, “আজকের ভারত নিজের সভ্যতা এবং হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি ও বিশ্বাসকে ফের অর্জন করেছে। আজ ভারতবাসী বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে নিজের মেরুদণ্ড সোজা করে, অন্যের চোখে চোখ রেখে গর্বের সঙ্গে নিজের দেশের কথা বলছে। এটাই পরিবর্তন।” ভারতের সনাতন আয়ুর্বেদ, যোগ, মশলা, হলুদ যে গোটা পৃথিবীর সুস্বাস্থ্যের জন্য গ্রহণ করছে, এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, “স্বাধীনতার পর খাদি তো ধীরে ধীরে নেতাদের পোশাক হয়ে থেকে গিয়েছিল। আজ তার পুনরুজ্জীবন ঘটেছে। খাদির আজ বিশ্বায়ন ঘটেছে। এটাই দেশের বদলে যাওয়ার ছবি।”
আত্মনির্ভর ভারত থেকে কোভিড কূটনীতি— তাঁর সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচিকে নিয়ে এসেছেন মোদী জাপানের মাটিতে দাঁড়িয়ে। সেই সঙ্গে জাপানের সঙ্গে ভারতের সেতুবন্ধন করতে চেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ-বিবেকানন্দের বাণী ব্যবহার করে। তাঁর কথায়, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন জাপান এমন এক দেশ যে একই সঙ্গে প্রাচীন ও আধুনিক। তাঁর বর্ণনায় জাপান একটি পদ্মফুলের মতো। যার শিকড় দেশের মাটির সঙ্গে গভীর ভাবে প্রোথিত, আর যে চার দিকে তার সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিচ্ছে।” বিবেকানন্দের প্রসঙ্গ তুলে মোদীর বক্তব্য, “স্বামীজী যখন তাঁর ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিতে শিকাগো যাচ্ছিলেন, তার আগে তিনি জাপানে আসেন। এখানকার দেশভক্তি, আত্মবিশ্বাস, অনুশাসন, স্বচ্ছতার প্রতি সচেতনতা তাঁর মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।”
‘আত্মনির্ভর ভারত’কে আজ মোদী জুড়েছেন বিশ্বের পণ্য বণ্টন ব্যবস্থার সঙ্গে। বলেছেন, “আজ ভারত যে গতিতে এবং পরিমাপে কাজ করে তা অভূতপূর্ব। যে গতিতে নিজেদের প্রতিষ্ঠানগুলির দক্ষতা বাড়াচ্ছে তারা, তা অভূতপূর্ব। আমরা যে আত্মনির্ভরতার সংকল্প তৈরি করেছি, তা কেবলমাত্র ভারতের জন্যই নয়। গোটা বিশ্বে পাকাপোক্ত পণ্যবণ্টন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য তা এক বিনিয়োগও বটে।”
মোদী জমানায় বিরোধী দলগুলির সবচেয়ে বড় অভিযোগ, বিজেপি সরকার গণতন্ত্র এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষয়সাধন করছে। সম্প্রতি উদয়পুরে কংগ্রেসের চিন্তন শিবিরেও এই অভিযোগ উঠে এসেছে। সংসদের ভিতরে ও বাইরে এই নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। আজ এই অভিযোগের মুখে দাঁড়িয়ে বিদেশের মাটি থেকে মোদীর বার্তা, “ভারতে এক শক্তিশালী গণতন্ত্র রয়েছে যা অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে। এমন সব স্তরের মানুষ এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে জুড়ে গিয়েছেন, যাঁরা আগে কখনও সেই সুযোগই পাননি। ভারতের গণতন্ত্র দেশের সাধারণ এবং দরিদ্র মানুষের অধিকারের প্রতি সমর্পিত।” প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত মহিলাদের মোদী এ কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন, ভারতে আজকাল পুরুষদের থেকে নারীরা বেশি সংখ্যায় ভোট দিচ্ছেন।