Narendra Modi

Narendra Modi: আচার্যের ক্ষমতা খর্বে পথিকৃৎ মুখ্যমন্ত্রী মোদী! ২০১৩ সালে গুজরাতে আনা হয় বিল

বাংলা আজ যা করতে চাইছে, বহু আগেই কার্যত সেই পথে হেঁটেছে গুজরাত। ২০১৩ সালেই রাজ্যপালের ক্ষমতা খর্বে সূচনা হয়েছিল সে রাজ্যে।

Advertisement

দেবাশিস ভট্টাচার্য ও প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২২ ০৫:৩৭
Share:

ফাইল ছবি

বাংলা আজ যা করতে চাইছে, বহু আগেই কার্যত সেই পথে হেঁটেছে গুজরাত।

Advertisement

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদ থেকে রাজ্যপালকে সরাতে উদ্যোগী হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর গুজরাতে ২০১৩ সালেই তার সূচনা করে দিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যার ফলে রাজ্যপালকে সেখানে নাম-কা-ওয়াস্তে আচার্য রাখা হলেও উপাচার্য নিয়োগ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে কিছুমাত্র ক্ষমতা বা অধিকার তাঁর নেই। সেটিই ছিল প্রথম উদ্যোগ। তাই মোদীকে এই ব্যাপারে বস্তুত পথিকৃৎ বলা যেতে পারে।

আচার্যের পদ থেকে রাজ্যপালকে সরানো নিয়ে বাংলার রাজনীতি সরগরম। রাজ্যপালের বদলে মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করতে রাজ্য মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বার বিধানসভায় সেই বিল আসছে। তার পরে রাজ্যপালের অনুমোদন পেলে তা আইনে পরিণত হবে।

Advertisement

বিরোধীরা সকলেই এর বিরুদ্ধে সরব। স্বাভাবিক ভাবেই সবচেয়ে জোরালো প্রতিবাদ করছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী কেন আচার্য হবেন, সেই প্রশ্ন থেকে শুরু করে শিক্ষাক্ষেত্রে ‘দলতন্ত্র’ কায়েম করার অভিযোগ সবই উঠেছে। বিতর্কও জমজমাট।

এর মধ্যে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা গিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে ‘সৌজন্য’ সাক্ষাতে। সেখানে তাঁদের মধ্যে কথায়-কথায় আচার্য প্রসঙ্গ ওঠে। সামনে আসে গুজরাত। রাজ্যপালকে আচার্য না-রাখার বিল এলে ধনখড় তাতে সম্মতি দেবেন কি না, অনেকের কাছেই তা প্রশ্ন।

কিন্তু সূত্রের খবর, সেখানে বিজেপি-শাসিত গুজরাতের পদক্ষেপ একটি ‘দৃষ্টান্ত’ হিসাবে ধনখড়ের সামনে এসে পড়তে পারে। পাশাপাশি এই রাজ্যে বিরোধী বিজেপির কাছেও প্রতিবাদের বিষয়টি রাজনৈতিক ভাবে খুব স্বস্তিকর হবে না বলে মনে করছেন রাজনৈতির পর্যবেক্ষকদের অনেকে।।

কী করেছে গুজরাত? এই রাজ্যে এখন যেমন রাজ্যপালের সঙ্গে সরকারের নানা বিষয়ে বনিবনা হয় না, গুজরাতে তেমনই নরেন্দ্র মোদীর আমলে রাজ্যপাল কমলা বেনিওয়ালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্ক ‘মধুর’ ছিল না। দূরত্ব ছিল স্পষ্ট।

কেন্দ্রে তখন কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ সরকার। গুজরাতে আচার্য-রাজ্যপাল বেনিওয়াল দু’জন উপাচার্য নিয়োগ করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মোদীর তাতে আপত্তি ছিল। তাই উপাচার্য নিয়োগ-সহ আচার্যের সকল ক্ষমতা খর্ব করতে ২০১৩ সালে ‘গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধনী’ বিল আনা হয় বিধানসভায়। বিল পাশ হলেও রাজ্যপাল কমলা বেনিওয়াল তাতে তখন স্বাক্ষর করেননি। ফলে বিলটি ঝুলেই ছিল। মোদী ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান। বিভিন্ন রাজ্যে রাজ্যপাল বদল হয়। গুজরাতে রাজ্যপাল হন বিজেপির ওমপ্রকাশ কোহলি। তখন মুখ্যমন্ত্রী আনন্দীবেন পটেল। কোহলি এসে ওই বিলে সম্মতি দেন।২০১৫ সালে গুজরাতে তা আইন হয়ে যায়।

এ বার আরও একধাপ এগিয়ে আনন্দীবেনের সরকার ২০১৬ সালে ‘উচ্চশিক্ষা পর্ষদ বিল’ আনে। তাতে পর্ষদের শীর্ষে মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর পরে দুই পদে শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। সদস্যদের মধ্যে পাঁচজন উপাচার্য, কয়েক জন সরকারি অফিসার প্রমুখ। ওই বিলের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার সর্বস্তরেই খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে ক্ষমতা আরও কেন্দ্রীভূত হয়। মতান্তরে যা প্রত্যক্ষ রাজনীতিকরণ। ২০১৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে গুজরাতে এটি আইন হয়েছে।

অর্থাৎ, ২০১৩ সালে বিধানসভায় বিল এনে মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রথম ‘আচার্য’-এর সকল ক্ষমতা সরকারের কব্জায় নিয়েছিলেন। আর ২০১৭ সালে উচ্চশিক্ষা পর্ষদ আইন পাশ করে আনন্দীবেন সব মুখ্যমন্ত্রীর হাতে নিয়ে নেন।

দেশের প্রাক্তন অর্থসচিব হাসমুখ আরিয়া দিল্লিতে আসার আগে গুজরাতে মুখ্যমন্ত্রী মোদীর প্রিন্সিপ্যাল সচিব ছিলেন। পরে তিনি ওই রাজ্যের শিক্ষাসচিবও হন। জানা যায়, আচার্যের ক্ষমতা খর্ব করা, উচ্চশিক্ষা পর্ষদ গঠন দুটি বিলেই তাঁর ‘উল্লেখযোগ্য অবদান’ রয়েছে।

পরপর দুই আইনের বলে গুজরাতে সরকার পোষিত ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথাও আচার্য হিসাবে রাজ্যপালের কোনও কার্যকর ভূমিকাই নেই। তিনি শুধু উৎসব-অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হন। সমাবর্তনে দীক্ষান্ত ভাষণ দেন। বাকি সবই পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে।

অভিজ্ঞদের মতে, পশ্চিমবঙ্গে যা হচ্ছে, বিজেপি-শাসিত গুজরাতের থেকে তাকে খুব আলাদা বলা যায় না। ওখানে আচার্য়ের চেয়ারে রাজ্যপালকে বসিয়ে রেখে তাঁর ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আর এখানে সোজাসুজি রাজ্যপালের বদলে আচার্য করতে চাওয়া হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। এই অবস্থায় বিরোধী বিজেপি এখানে বিল নিয়ে কী ভূমিকা নেবে, তা দেখার।

প্রসঙ্গত, গুজরাতের পরে মহারাষ্ট্রও আচার্য পদে রাজ্যপালের ভূমিকা ছেঁটে ক্ষমতা সরকারের হাতে নিয়েছে। সম্প্রতি একই কাজ করেছে তামিলনাড়ুর ডিএমকে সরকার। করতে চাইছে পঞ্জাবও।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement