আহ্বান ছোট্ট একটি স্লোগানে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’। ভারতে আসুন। কারখানা তৈরি করুন। নিজেদের পণ্য তৈরি করুন। তার পর সেই পণ্য ভারতের বিশাল বাজারে এবং গোটা বিশ্বে বিক্রি করুন। আমেরিকা সফরে যাওয়ার আগে বিদেশি শিল্পপতিদের এই বার্তাই দিয়ে যাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
স্লোগানটি তুলেছিলেন স্বাধীনতা দিবসে, লাল কেল্লা থেকে। এ বার বিনিয়োগকারীদের জন্য লাল কার্পেট পাতার কাজও শুরু করেদিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার তিনি ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র বার্তা দিয়ে আন্তর্জাতিক প্রচারের সূচনা করবেন দিল্লির বিজ্ঞান ভবন থেকে। আমেরিকা, জাপান, চিন কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেন, পোল্যান্ডের মতো দেশগুলির কর্পোরেট সংস্থার শীর্ষকর্তারা সেখানে উপস্থিত থাকবেন বলে সরকারি সূত্রের দাবি। ভারতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার আমন্ত্রণ জানানো হবে বিশ্বের অন্তত ৩ হাজার সংস্থাকে। প্রত্যেক ভারতীয় দূতাবাসকেও এই প্রচারে নামানো হবে। তবে পাখির চোখ করা হচ্ছে ১০টি বাছাই করা ক্ষেত্রের ১০টি নামজাদা সংস্থাকে। যারা ভারতে বিনিয়োগ করতে রাজি হলে বাকিদের উৎসাহিত করাসহজ হবে।
তবে শুকনো আমন্ত্রণেইযে বিদেশি শিল্পপতিরা ভারতে বিনিয়োগ করতে চলে আসবেননা, সেটা মোদীও বিলক্ষণ জানেন। তাই লগ্নিকারীদের সুবিধা দিতে এক গুচ্ছ পদক্ষেপ করা হয়েছে। শিল্প মন্ত্রকের শিল্পনীতি ও উন্নয়ন দফতর (ডিআইপিপি) ৮ জন বিশেষজ্ঞকে নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করেছে। সূত্রের খবর, কমিটির নাম হবে ‘টিম ইনভেস্ট ইন্ডিয়া’। এই কমিটি কথা বলবে লগ্নিকারীদের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নির্দেশ, কোনও বিনিয়োগকারী সমস্যা নিয়ে হাজির হলে, ওই কমিটিকে তা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মেটাতে হবে। কমিটিযদি কোথাও আটকে যায়, আসরে নামতে হবে ডিআইপিপি-র সচিবকে। তাঁকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমস্যা দূর করতে হবে। লগ্নির গন্তব্য হিসেবে প্রাথমিক ভাবে ২৫টি ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে অটোমোবাইল, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, তথ্যপ্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, ইলেকট্রনিক্স, ওষুধ ও বস্ত্র শিল্প।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে লাল ফিতের ফাঁস ও অন্যান্য আমলাতান্ত্রিক বাধা দূর করার লক্ষ্যে কথা বলা হবে রাজ্যগুলির সঙ্গেও। মনমোহন সরকারের জমানায় পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র নিয়ে টালবাহানা শিল্প মহলের দুঃস্বপ্নের কারণ হয়ে উঠেছিল। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মোদী তাঁর পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরিবেশ মন্ত্রকের সিদ্ধান্ত, কারখানা তৈরির জন্য পরিবেশের উপর প্রভাব খতিয়ে দেখার যে বিধিনিয়ম রয়েছে, তা মানতে হবে না। পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াও একটা কারখানা করার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার মিলিয়ে প্রায় একশো রকম অনুমোদন নিতে হয়। এর সবটাই যাতে এক জায়গায় অনলাইন ব্যবস্থায় চলে আসে, তার ব্যবস্থা হচ্ছে।
শিল্পায়নে উৎসাহ জোগাতে‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র প্রচার শুরু করার সময় প্রধানমন্ত্রী নিজে বেশকিছু পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করতে পারেন। দেশীয় শিল্প সংস্থাগুলির কয়েকটি বড় প্রকল্পও ঘোষিতহতে পারে। মোদী তাঁর আমেরিকা সফরের বিষয়টিও তুলে ধরবেন।শিল্প মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “ভারতীয় পর্যটনকে তুলে ধরার জন্য যে ভাবে ‘ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া’-র প্রচার চালানো হয়েছিল, ঠিকসেই ভাবেই ভারতে লগ্নির জন্যও ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ বা ‘ইনভেস্ট ইন্ডিয়া’ কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে।” মোদী, অরুণ জেটলিরা মনে করছেন, আর্থিকবৃদ্ধির হার বাড়াতে হলে কারখানা উৎপাদনে জোর দিতেই হবে। শুধু আর্থিক বৃদ্ধি নয়, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, আমদানির উপরে নির্ভরতা কমিয়ে রফতানি বাড়ানো-সহ সামগ্রিক ভাবে অর্থনীতিতে গতি আনার জন্যই দেশে আরও কারখানা তৈরি করা প্রয়োজন।
অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, গত এক দশক ধরেই দেশের জিডিপি-তে কারখানাগুলি থেকে উৎপাদনের অনুপাত বাড়ছে না তেমন। জিডিপি-তে কারখানা-উৎপাদনের ভাগ ১৯৯৩-’৯৪ সালে ছিল ১৪-১৫%। এখনও তা সেখানেই থমকে রয়েছে। নতুন কারখানা হলে তবেই চাষ-আবাদে উদ্বৃত্ত শ্রমিকরা সেখানে কাজ পাবেন। যত বেশি কারখানা তৈরি হবে, বাড়বে বিদেশি বিনিয়োগও।