গত বছরের ঘটনা। বিহারের মোতিহারিতে স্বচ্ছতা অভিযান নিয়ে এক অনুষ্ঠানে মঞ্চে বক্তৃতা করছিলেন। যে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বিরোধীরা হামেশাই ক্যামেরা-প্রেমের অভিযোগ করেন, সেই তিনিই প্রকাশ্য সভায় বললেন, ‘‘ক্যামেরাটি একটু ওঁর দিকে ঘোরান তো!’’
দর্শক আসনের প্রথম সারিতে বসেছিলেন এক সাদামাঠা চেহারার ব্যক্তি। ক্যামেরা তাঁর দিকে তাক করতেই প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘‘হ্যাঁ, ইনিই। দেশে আইএএস হিসেবে কাজ করছিলেন। কিন্তু চাকরি ছেড়ে দিয়ে সুখের জীবন কাটাচ্ছিলেন আমেরিকায়। আমি সরকারে আসার পর অনেককেই আহ্বান জানাই। উনি আসতে রাজি হয়েছেন। আজ দেশের নানা প্রান্তে গিয়ে নিজের হাতে শৌচালয় সাফাই করেন।’’
প্রধানমন্ত্রীর মুখে এ কথা শুনে উঠে দাঁড়িয়ে হাতজোড় করে প্রণাম করলেন যিনি, তাঁর নাম পরমেশ্বরন আইয়ার। ১৯৮১-র উত্তরপ্রদেশ ক্যাডারের আইএএস। আগেই অবসর নিয়ে বিশ্বব্যাঙ্কের কাজ নিয়ে চলে যান। মোদীর ডাকে ফিরে আসেন। প্রথম জমানায় তাঁর হাতেই স্বচ্ছতা অভিযানের ভার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। ঘরে-ঘরে শৌচালয় প্রকল্প রূপায়ণও হয়েছে তাঁর হাত দিয়ে।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর কাজ করার একটি পদ্ধতি আছে। মন্ত্রী, সাংসদরা রাজনৈতিক কাজ করবেন। সরকারের প্রকল্প মুখে মুখে ছড়াবেন। কিন্তু মোদীর যাবতীয় প্রকল্প রূপায়ণের জন্য একটি বিশ্বস্ত বাবু-বাহিনী রয়েছে। যাঁদের কাজ হল, প্রকল্পগুলি নিঃশব্দে রূপায়ণ করা। আর প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত হলেই যে ভোটে সাফল্য আসবে, সেটি বিলক্ষণ জানেন প্রধানমন্ত্রী।’’
মোদীর প্রথম জমানায় স্বচ্ছতা অভিযান, শৌচালয় নির্মাণেই ছিল সবথেকে বেশি জোর। দ্বিতীয় দফায় জোর ‘জলশক্তি, ‘ঘরে ঘরে জল’। এই কাজের জন্য নতুন মন্ত্রক গঠন করে গজেন্দ্র শেখাওয়াতকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ‘আসল’ কাজটি করার জন্য রাষ্ট্রপতি ভবনের অতিরিক্ত সচিব ভরত লালকে জলশক্তি মন্ত্রকে নিয়ে এসেছেন মোদী। ভরত আইএএস নন, বন বিভাগের অফিসার। গুজরাতে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনই তাঁকে চিনে নেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য মোদী যখন সক্রিয় হচ্ছিলেন, সেই সময় দিল্লিতে গুজরাতের রেসিডেন্ট কমিশনার করে আনা হয় ভরতকে। দিল্লির সঙ্গে গুজরাতের যোগসূত্র ছিলেন তিনিই। যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি গিরীশ চন্দ্র মুর্মু এখন অর্থ মন্ত্রকের ব্যয় সচিব। যাবতীয় প্রকল্পের খরচের চাবি তাঁর হাতেই।
এ বারের ভোটে জিতে আসার পর প্রধানমন্ত্রী শীর্ষ অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে বলেই এই বিপুল জনমত এসেছে। ফলে প্রকল্প রূপায়ণের উপরেই সবথেকে বেশি জোর দিতে হবে।’’ আজও মাসিক রেডিয়ো বার্তায় তিনি অফিসারদের গ্রামে গিয়ে রাত কাটানো, সেখানে মানুষদের সব প্রকল্প সম্পর্কে অবগত করানোর উপরে জোর দেন। দ্বিতীয় বার সরকারে এসেও প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিজের অফিসারদের টিমে কোনও বদল করেননি। প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি নৃপেন্দ্র মিশ্র, অতিরিক্ত প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পি কে মিশ্রকে ফের নিয়োগ করেছেন। অজিত ডোভালকে ফের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করে ক্যাবিনেট মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
বিজেপির এক মন্ত্রী রসিকতা করে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর এই কাজের ঝোঁকে অফিসাররা আর নেপথ্যে নয়, সরাসরি মন্ত্রিসভাতেই আসছেন। সুষমা স্বরাজ এখনও সক্রিয়। কিন্তু তাঁর প্রাক্তন বিদেশসচিব এখন বিদেশমন্ত্রী। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি হরদীপ পুরী, প্রাক্তন আইএএস অফিসার অর্জুন মেঘওয়াল, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রসচিব আর কে সিংহ তো মন্ত্রীই। মন্ত্রিসভায় গুরুত্ব পাচ্ছেন তাঁরাও।’’