ছবি: পিটিআই।
ঝাড়খণ্ডে ভোট চলছে। বছর দেড়েক পরেই উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের কঠিন পরীক্ষা। তার আগে আজ সুপ্রিম কোর্টে নরেন্দ্র মোদী সরকার জানাল, আর্থিক ভাবে সচ্ছল হলেও দলিত-আদিবাসীদের সংরক্ষণ থেকে বাদ দেওয়া হবে না।
ওবিসি-দের মধ্যে যারা আর্থিক ভাবে সচ্ছল বা ‘ক্রিমি লেয়ার’-এর মধ্যে পড়েন, তাঁরা সংরক্ষণের সুবিধে পান না। আগে বছরে ছ’লক্ষ টাকা আয় হলে ওবিসি-রা ‘ক্রিমি লেয়ার’-এর মধ্যে পড়তেন। এখন তা মোদী সরকার বাড়িয়ে ৮ লক্ষ টাকা করেছে। ফলে আরও অনেকে ওবিসি সংরক্ষণের সুবিধে পাচ্ছেন। কিন্তু ২০১৮-তে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ রায় দিয়েছিল, তফসিলি জাতি-জনজাতির মধ্যেও যাঁরা আর্থিক ভাবে সচ্ছল, তাঁদের সংরক্ষণের সুবিধে থেকে বাদ দেওয়া হোক।
আজ সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল ওই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানান। তিনি জানান, আর্থিক সচ্ছলতার তত্ত্ব তফসিলি জাতি-জনজাতির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা চলবে না। এই বিষয়টি নিয়ে সাত বিচারপতির বেঞ্চে শুনানির আর্জি জানান বেণুগোপাল। তাঁর যুক্তি, ২০০৮-এ সুপ্রিম কোর্টে আর এক পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ ইন্দ্রা সাহনীর মামলায় রায় দিয়েছিল, আর্থিক সচ্ছলতার তত্ত্ব তফসিলি জাতি-জনজাতির ক্ষেত্রে খাটবে না। সুপ্রিম কোর্টে দু’সপ্তাহ পরে এ বিষয়ে বিশদ শুনানি হবে বলে ঠিক হয়েছে।
আরও পড়ুন: নিজস্বী তুলতে প্রিয়ঙ্কার বাংলোয় ৫ জন
বিজেপি নেতাদের ব্যাখ্যা, ওবিসি-দের জন্য সংরক্ষণ দেওয়ার পিছনে কারণই হল তাঁরা আর্থিক দিক থেকে শিক্ষা-চাকরিতে পিছিয়ে। কিন্তু দলিত বা তফসিলি জাতির মানুষেরা সামাজিক অস্পৃশ্যতা, জাতপাতের কারণে পিছিয়ে। অর্থ থাকলেও দেশের অনেক দলিত পরিবারের ছেলে বিয়ে করতে গিয়ে ঘোড়ায় চড়তে পারেন না। তফসিলি জনজাতি বা আদিবাসীরা আবার ভৌগোলিক কারণে পিছিয়ে। ফলে দলিত-আদিবাসীদের ক্ষেত্রে আর্থিক সচ্ছলতা কখনও মাপকাঠি হতে পারে না। সুপ্রিম কোর্টে মোদী সরকারের এই অবস্থান ঝাড়খণ্ডের ভোটে বিজেপির হাতিয়ার হতে পারে।
কিন্তু তাতে উচ্চবর্ণের ভোটে সমস্যা হবে না তো? উচ্চবর্ণের মধ্যে সংরক্ষণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে। বিজেপি নেতাদের যুক্তি, মোদী সরকার ইতিমধ্যেই উচ্চবর্ণের গরিবদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের বন্দোবস্ত করেছে। সুপ্রিম কোর্টে সমতা আন্দোলন সমিতি ও প্রাক্তন আইএএস ও পি শুক্ল আর্জি জানিয়েছিলেন, তফসিলি জাতি-জনজাতির মধ্যে আর্থিক ভাবে সচ্ছলদের চিহ্নিত করার যুক্তিযুক্ত মাপকাঠি দরকার। অ্যাটর্নি জেনারেল আর্থিক সচ্ছলতার মাপকাঠিই তুলে দেওয়ার দাবি তোলায় সমতা আন্দোলন সমিতির আইনজীবী গোপাল শঙ্করনারায়ণন তার প্রতিবাদে বলেন, ‘‘প্রতি বছর একই বিষয়ে মামলা চলতে পারে না। সুপ্রিম কোর্ট তফসিলি জাতি-জনজাতির মধ্যে আর্থিক সচ্ছলদের সংরক্ষণের আওতা থেকে বাদ দেওয়ার কথা স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছে।’’