জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দাদের বিশেষ মর্যাদা দেওয়া সংবিধানের ৩৫এ ধারা শুরু থেকেই বাতিলের পক্ষে নরেন্দ্র মোদী সরকার। গত ক’দিন ধরে উপত্যকায় ফিসফাস, অগস্টেই ধারাটি খারিজের সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে সরকার। শুক্রবার গভীর রাতে উপত্যকায় আরও দশ হাজার আধাসেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত সেই জল্পনাকে উস্কে দিয়েছে। যদিও এ নিয়ে চুপ দিল্লির শাসক শিবির।
সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫এ ধারা বাতিলের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চাপ দিচ্ছে সঙ্ঘ পরিবার। তাদের বক্তব্য, দ্বিতীয় পর্বে আরও বড় জনমত নিয়ে ক্ষমতায় আসা মোদী সরকার এখনই এ কাজ না করলে পরে সমস্যা হবে। তাই কেন্দ্র এ নিয়ে দ্রুত হেস্তনেস্ত করতে চাইছে বলে মনে করা হচ্ছে।
১৫ অগস্ট শেষ হচ্ছে অমরনাথ যাত্রা। যাত্রার জন্য ইতিমধ্যেই ৪০ হাজার আধাসেনা রয়েছে সেখানে। তাদের ফেরত না এনে উল্টে আরও দশ হাজার বাড়তি আধাসেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত এই পরিস্থিতিতে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে সব মহল। এক স্বরাষ্ট্র কর্তার কথায়, ‘‘জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল তিন দিনের কাশ্মীর সফর শেষে ফেরার পরেই ওই সিদ্ধান্ত থেকে ধরে নেওয়াই যায়, কিছু পদক্ষেপের বিষয়ে ভাবছে কেন্দ্র।’’
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছিল, জঙ্গি-দমন অভিযানের তীব্রতা বাড়াতে এবং শীতের আগে সীমান্তে অনুপ্রবেশ আটকাতে বাড়তি আধাসেনা পাঠানো হয়েছে। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্র জানায়, ওই বাহিনী জঙ্গি দমনে থাকা রাষ্ট্রীয় রাইফেলস-এর সঙ্গে কাজ করার পরিবর্তে পুলিশ-প্রশাসনকে কঠিন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাহায্য করবে। সূত্রের মতে, এক নির্দেশে বলা হয়েছে, বিমানবন্দর, রেডিও স্টেশন, দূরদর্শন কেন্দ্র, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, পানীয় জল সরবরাহ কেন্দ্র, হাসপাতালের মতো সংবেদনশীল জায়গা এবং আধাসেনা ছাউনি ও থানাকে বাড়তি নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলতে হবে।
লোকসভা ভোটের পর থেকে বড় কোনও জনবিক্ষোভের খবর মেলেনি উপত্যকায়। আপাত শান্ত কাশ্মীরে তাই এই বাড়তি নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লার অভিযোগ, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘরোয়া ভাবে কাশ্মীরিদের বলা হচ্ছে খাবার, গ্যাস, কেরোসিন তেল সংগ্রহ করে রাখুন। কারণ কিছু দিনের মধ্যেই উপত্যকায় শুরু হতে পারে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট। ওমরের আশঙ্কা, সম্ভবত ৩৫এ খারিজ করার বিষয়ে ভাবছে সরকার। তাঁর মতে, ওই সিদ্ধান্ত নিলে ফের অশান্ত হয়ে উঠবে কাশ্মীর। তাই উপত্যকার বাসিন্দাদের কৌশলে প্রস্তুত থাকার বার্তা দিচ্ছে প্রশাসন।
৩৫এ ধারা নিয়ে একাধিক মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। ওমরের আশঙ্কা, স্বাধীনতা দিবসের আগেই কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বিষয়টি এখনও আদালতের বিচারাধীন। তা-ও সরকার কেন এত তাড়াহুড়ো করছে, বোঝা যাচ্ছে না।’’