Narendra Modi

Narendra Modi: উধাও ‘বলশালী বিদেশনীতি’, মাল্য, ডেভিদের ফিরিয়ে আনার কথায় ‘নীরব’ মোদী

ইউপিএ জমানার শেষ দিকে মনমোহন সিংহকে ‘দুর্বল প্রধানমন্ত্রী’ আখ্যা দিয়েছিল বিজেপি। ব

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২২ ০৬:১২
Share:

ফাইল চিত্র।

ইউপিএ জমানার শেষ দিকে মনমোহন সিংহকে ‘দুর্বল প্রধানমন্ত্রী’ আখ্যা দিয়েছিল বিজেপি। বলা হয়েছিল, নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এলে ‘বলশালী’ নীতি নিয়ে চলবে কেন্দ্র। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, ঘরোয়া প্রচারে ‘ছাপান্ন ইঞ্চি’র কথা বলা সহজ। কিন্তু সরকারে বসে অর্থনীতি এবং ভূকৌশলগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া অন্য বিষয়। গত দু’সপ্তাহে ব্রিটেন, ডেনমার্ক এবং ইটালির রাষ্ট্রনেতা ও মন্ত্রীদের সঙ্গে ভারতীয় নেতাদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সেই সত্যই উঠে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ভারতে অপরাধ করে পালিয়ে যাওয়া বিজয় মাল্য, নীরব মোদী, পুরুলিয়া অস্ত্র বর্ষণের সঙ্গে যুক্ত কিম ডেভি, ভারতীয় জলপথে কেরলের দুই ধীবরকে গুলি করে হত্যা করা মেরিনদের ফিরিয়ে আনা নিয়ে কার্যকর কোনও সিদ্ধান্ত বা ঘোষণা কিন্তু ওই সব বৈঠকের পর দেখা যায়নি। রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, ব্যবসা এবং কৌশলগত কারণে এই দেশগুলির উপরে মোদী সরকারের নির্ভরতা এখন এতটাই প্রকট যে ‘বলশালী বিদেশনীতি’র দেখা মিলছে না। তাদের চাপ দিয়ে কাজ হাসিল করার জায়গায় নেই কেন্দ্র।

Advertisement

শুক্রবারই বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করলেন ইটালির বিদেশমন্ত্রী লুইগো ডি মায়ো। কথা হল ইউক্রেনে শান্তি ফেরানো নিয়ে। কিন্তু কোনও পক্ষেরই উচ্চবাচ্য শোনা গেল না সেই দুই মেরিনের বিচার নিয়ে, ইউপিএ আমলে যা নিয়ে সংসদ তোলপাড় করেছিল বিজেপি। ২০১২ সালের গোড়ায় কেরলের উপকূলের কাছে ইটালীয় জাহাজের রক্ষী মেরিন ম্যাসিমিলানো লাতোরে ও সালভাতোরে গিরোনের গুলিতে নিহত হন দুই ভারতীয় ধীবর। তাদের গ্রেফতার করে কেরল পুলিশ। এর পরে বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক টানাপড়েন হয়েছে বিস্তর। ভারতীয় জলসীমার মধ্যেই ধীবররা নিহত হওয়ায় ভারতের আদালতেই দুই মেরিনের বিচার হওয়া উচিত বলে দাবি ছিল দিল্লির। রোমের পাল্টা দাবি, ঘটনা ঘটেছে ভারতীয় জলসীমার বাইরে। তাই রাষ্ট্রপুঞ্জের সমুদ্র সংক্রান্ত আইনে এর বিচার হওয়া উচিত। এক সময়ে দুই মেরিনকে শর্তসাপেক্ষে ইটালি যাওয়ার অনুমতি দেয় সুপ্রিম কোর্ট। পরে ইটালি সরকার জানিয়ে দেয়, তাঁরা আর ভারতে ফিরবেন না।

বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন ইউপিএ সরকারকে সংসদের বাইরে এবং ভিতরে প্রভূত সমালোচনা করে বিজেপি। কিন্তু ঘটনা হল ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর আজ পর্যন্ত তারা এই দুই মেরিনকে ফেরাতে পারেনি। রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, মোদী এর আগে ইটালি গিয়েছিলেন। এ বার সে দেশের বিদেশমন্ত্রী এলেন। কিন্তু এই প্রশ্নটি ধামাচাপা দিয়েই রাখা হয়েছে।

Advertisement

গত মাসে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের দিল্লি সফরে ব্রিটেনে পালিয়ে যাওয়া নীরব মোদী এবং বিজয় মাল্যর প্রসঙ্গ অবশ্য উঠেছে। কিন্তু তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া নিয়ে শুকনো আশ্বাস ছাড়া (যা এর আগেও বহু বার দেওয়া হয়েছে) হাতেকলমে কিছু পাওয়া যায়নি। এই দুই ব্যক্তি ব্রিটেনে আশ্রয় চেয়েছেন, এবং সেটা নির্ভর করছে ব্রিটেনের সরকারের সিদ্ধান্তের উপর। কিন্তু তাঁদের ফেরানোর মতো কোনও উদ্যোগ এখনও জনসন সরকারের পক্ষ থেকে দেখা যাচ্ছে না। যদিও সে দেশে বসবাসকারী ধনী রুশদের সম্পত্তি দ্রুত বাজেয়াপ্ত করতে উদ্যোগী হয়েছে জনসন সরকার।

মে মাসের গোড়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ত্রিদেশীয় ইউরোপ সফরে ডেনমার্ক গেলেন। সফরটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ২০ বছর পরে কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ডেনমার্ক গেলেন। কিন্তু পুরুলিয়া অস্ত্র বর্ষণ মামলার মূল অভিযুক্ত ডেনমার্কের কিম ডেভিকে ভারতে নিয়ে আসার বিষয়টি নিয়ে কোনও কথাই হল না। এই নিয়ে দীর্ঘ টালবাহানায় দু’দেশের সম্পর্কে শীতলতা এসেছিল। সূত্রের মতে, এখন হাল ছেড়ে দিয়ে, ডেভিকে ফেরানোর বিষয়টিকে সরিয়ে রেখেই গত দু’বছর ধরে ডেনমার্কের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির চেষ্টা করছে মোদী সরকার। দু’মাস আগেই সে দেশ থেকে একটি প্রতিনিধি দল কলকাতা এসে সেখানকার সংশোধনাগার এবং বিচারকক্ষ খতিয়ে দেখে যায়। দীর্ঘদিন আগেই ডেভিকে ভারতে পাঠানোর ব্যাপারে রাজি হয়েছিল ডেনমার্ক সরকার। কিন্তু এখানকার বেহাল সংশোধনাগারের অভিযোগ তুলে বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়। সূত্রের খবর, মোদীর সঙ্গে ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডরিকসেনের বৈঠকেও সেই জট ছাড়ানো গেল না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement