ফাইল ছবি
প্রথম শেয়ার বাজারে আসার চব্বিশ ঘণ্টা আগে নতুন করে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে এলআইসি-র মালিকানার একাংশ জলের দরে বেচে দেওয়ার অভিযোগ উঠল।
আগামিকাল এলআইসি বা জীবন বিমা নিগমের প্রথম শেয়ার বাজারে আসতে চলেছে। তার আগে আজ বিরোধী শিবির অভিযোগ তুলেছে, মোদী সরকার এলআইসি-র মূল্য কম করে দেখিয়ে জলের দরে শেয়ার বেচছে। গতকালই অর্থনীতিবিদ, আইনজীবী, অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের একটি গোষ্ঠী অভিযোগ তুলেছিল, এই ‘কেলেঙ্কারি’-র জন্য ৫৪ হাজার কোটি টাকা লোকসান হবে।
বাজারে শেয়ার ছাড়ার আগে দীর্ঘমেয়াদি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির জন্য এলআইসি-র শেয়ার ছাড়া হয়েছিল। সিঙ্গাপুর, নরওয়ে-সহ বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা মাত্র ৯৪৯ টাকায় এলআইসি-র শেয়ার লুফে নিয়েছে। অর্থনীতিবিদদের অভিযোগ, কেন্দ্রের অর্থ মন্ত্রক আসলে আন্তর্জাতিক লগ্নিকারীদের চাপের কাছে মাথা নত করে বিপুল ছাড়ে শেয়ার বেচছে। কংগ্রেসের প্রশ্ন, যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও অন্যান্য কারণে দেশের ও আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজারের টালমাটাল অবস্থা, তখন কেন মোদী সরকার এলআইসি-র বিলগ্নিকরণ করতে চাইছে? অর্থ মন্ত্রকের অধীনে থাকা বিলগ্নিকরণ দফতরের ঘোষিত অবস্থান হল, শেয়ার বাজারের পরিস্থিতি উপযুক্ত না হলে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার ছাড়া হবে না। এলআইসি-র ক্ষেত্রে তার
ব্যতিক্রম কেন?
অর্থনীতিবিদ সি পি চন্দ্রশেখর, প্রভাত পট্টনায়ক, আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ, অবসরপ্রাপ্ত আমলা ই এ এস শর্মা, কেরলের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী থমাস আইজ্যাকদের তৈরি ‘রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিষয়ক জনগণের কমিশন’ এলআইসি-র শেয়ার ছাড়ার প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখেছিল। এলআইসি-র মুনাফা ও ব্যবসার পরিমাণের ভিত্তিতে এর মূল্য ধরা হয়েছে ৫ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকা। তার ভিত্তিতে প্রতি শেয়ারের ন্যূনতম মূল্য হওয়ার কথা ৮৫৩ টাকা। কেন্দ্রীয় সরকার এলআইসি-র বিমা গ্রাহকদের জন্য ৮৮৯ টাকা দর ঠিক করেছে। খুচরো লগ্নিকারী, দীর্ঘমেয়াদি লগ্নিকারী সংস্থার জন্য ৯০৪ টাকা থেকে ৯৪৯ টাকা দর রেখেছে।
কমিশনের বক্তব্য, বাস্তবে শেয়ারের দর ঠিক করতে হলে বিমা সংস্থার বাজার মূল্যকে আড়াই থেকে চার গুণ করে, তারপরে শেয়ারের দর ঠিক করা উচিত। দু’মাস আগে পর্যন্তও তেমনটাই ঠিক ছিল। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত বদলে যায়। এলআইসি-র বাজার মূল্যকে আড়াই গুণ করে শেয়ারের দর ঠিক হলে, প্রতি শেয়ারের দাম হত ২,১৩২ টাকা। এলআইসি-র ৩.৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে সরকারের আয় হত ৪৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। যেখানে সরকার মাত্র ২১ হাজার কোটি টাকা ঘরে তুলতে চাইছে। অর্থাৎ, প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকার লোকসান। বেসরকারি বিমা সংস্থাগুলির সঙ্গে তুল্যমূল্য বিচারে, এলআইসি-র বাজারদরকে চার গুণ করে শেয়ারের দর ঠিক করলে, সরকারের প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা আয় হত। সেই হিসেবে প্রায় ৫৪ হাজার কোটি টাকার লোকসান।
কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা আজ সাংবাদিক বৈঠকে এলআইসি নিয়ে মোদী সরকারকে চারটি প্রশ্ন ছুড়েছেন। এক, ফেব্রুয়ারি মাসে এলআইসি-র ১২-১৪ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যায়ন করেও কেন দু’মাসের মধ্যে তা ৬ লক্ষ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হল? দুই, দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন লগ্নিকারী সংস্থার সঙ্গে বৈঠকের পরেই কেন এলআইসি-র মূল্য কমানো ও ৫%-র বদলে ৩.৫% শেয়ার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? তিন, কেন এলআইসি-র বিমায় আয়ের হার, দেশের বাজারে দখল, বৃদ্ধির হার, সম্পদ— সব কিছু উপেক্ষা করা হচ্ছে? চার, কেন যুদ্ধের বাজারে টালমাটাল পরিস্থিতিতে শেয়ার ছাড়া হচ্ছে? সুরজেওয়ালার প্রশ্ন, ‘‘এলআইসি-র মন্ত্রই হল, জিন্দেগি কে সাথ ভি, জিন্দেগি কে বাদ ভি। তা হলে মোদী সরকারের এত তাড়াহুড়ো কেন?’’ সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির দাবি, ‘‘এই লুট বন্ধ হোক।’’ অর্থ মন্ত্রক অবশ্য গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে। কিন্তু অর্থনীতিবিদ, অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের দাবি, এলআইসি-র আইপিও বন্ধ করা হোক।