ছবি: পিটিআই।
দেশের বেহাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা এড়াতে সংসদ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে কেন্দ্র। আজ এই অভিযোগ তুলে সরব হলেন বিরোধীরা।
আজ রাজ্যসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর জন্য বিরোধী সাংসদদের পর পর চারটি প্রশ্ন তালিকাভুক্ত ছিল। কিন্তু অধিবেশন শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে হইহল্লার কারণ দেখিয়ে অধিবেশন মুলতুবি করে দেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু। ঘটনা হল, প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতে নিজেদের আসন থেকেই কাশ্মীর পরিস্থিতি, জেএনইউ ও চেন্নাই আইআইটি-তে ছাত্রী আত্মহত্যার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করেন বাম সাংসদেরা। বিরোধী সাংসদরা কেউই ওয়েলে নামেননি। সেই সময় কোনও বড় রকমের হল্লাও হতে দেখা যায়নি। কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, অর্থনীতি সংক্রান্ত প্রশ্নগুলিকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্যই বামেদের ওই প্রশ্নগুলিকে কাজে লাগিয়ে তড়িঘড়ি সভা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সকালে। প্রশ্নোত্তর পর্বের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে ফের অধিবেশন চালু করা হয়েছে। সরকারের আনা জালিয়ানওয়ালাবাগ বিল পাশ সংক্রান্ত আলোচনা হয়েছে।
অর্থনীতি সংক্রান্ত যে প্রশ্নগুলির জবাব আজ মোদী সরকারের কাছে চাওয়া হয়েছিল, সেগুলি হল—১) দু’হাজার টাকার নোট বেআইনি ভাবে মজুত করা নিয়ে সরকার কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা। কারণ দু’হাজারের মতো বড় নোটে কালো টাকা রাখা সহজ ২) পিএমসি ব্যাঙ্কের কেলেঙ্কারি ৩) ১৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকার জালিয়াতি ও প্রতারণা এবং ৪) সরকারের কাছে বিভিন্ন ছোট ও মাঝারি শিল্পের পড়ে থাকা কয়েক হাজার কোটি টাকা বকেয়া মেটানো নিয়ে। এই চারটি প্রশ্নেরই মৌখিক উত্তর দেওয়ার কথা ছিল অর্থমন্ত্রীর।
আরও পড়ুন: গাঁধীদের জন্য বরাদ্দ ন’বছরের পুরনো গাড়ি
সংসদ মুলতুবি হয়ে যাওয়ার পরে বিরোধী নেতারা দেখা করেন বেঙ্কাইয়া নায়ডুর সঙ্গে। সেখানে ছিলেন রেল এবং বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গয়ালও। ওই বৈঠকে কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা, গুলাম নবি আজাদ, তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায়, এনসিপি-র শরদ পওয়ার, এসপি-র রামগোপাল যাদবের মতো নেতারা অভিযোগ করেন, যে হেতু কেউই ওয়েলে নেমে হল্লা করেননি, তাই এই অত্যন্ত জরুরি প্রশ্নগুলি করতে দেওয়া উচিত ছিল। চেয়ারম্যানের কাছে তাঁদের বক্তব্য, এত লম্বা সময় অধিবেশন মুলতুবি রাখলে জিরো আওয়ার বলে আর কিছু থাকে না। সূত্রের খবর, বেঙ্কাইয়া বিরোধীদের বলেছেন, সংসদে যে হল্লা হচ্ছিল, তা অপ্রত্যাশিত। বিশেষত যে দিন রাজ্যসভার কার্যপ্রণালী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে, তার পরের দিনই।
তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘একজনও বিরোধী সাংসদ ওয়েলে যাননি। তা সত্ত্বেও দুপুর দু’টো পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হল। জিরো আওয়ারে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি উত্থাপন করা থেকে এবং প্রশ্নোত্তর পর্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো থেকে বিরোধীদের বঞ্চিত করা হল। যখন তাদের হাতে কোনও উত্তর নেই, সরকার পালিয়ে যাচ্ছে।’’ বিরোধীরা যে সরকারপক্ষের সঙ্গে বিল নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছেন, সে কথা স্পষ্ট করে দিতে বিকেলে ডেরেক টুইট করে বলেন, ‘‘সরকারের সংসদীয় কার্য প্রণালী আজ বিকেল থেকে মসৃণ ভাবে চলেছে, কারণ আমরা ১০০ শতাংশ সহযোগিতা করেছি। আশা করি, এই একই মনোভাব সরকারও প্রত্যেক সকালে দেখাবে, যাতে বিরোধীরা প্রশ্নোত্তর পর্ব এবং জ়ি রো আওয়ারে তাদের বিষয়গুলি তুলতে পারে।’’