ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর তিন শাখায় (স্থল, নৌ এবং বায়ুসেনা) নিয়োগের নতুন প্রকল্প ‘অগ্নিপথ’ ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। এই প্রকল্পে নিয়োগ করা সেনাদের পোশাকি নাম হবে ‘অগ্নিবীর’।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকে ছাড়পত্র পেয়েছে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প। এই প্রকল্পে প্রাথমিক পর্যায়ে চার বছরের জন্য নিয়োগ করা হবে অগ্নিবীরদের।
নিয়োগের সময় অগ্নিবীরদের বয়স হতে হবে সাড়ে ১৭ থেকে ২১ বছরের মধ্যে। ভারতীয় সেনার মাপকাঠির ভিত্তিতে শারীরিক সক্ষমতা এবং মেধা যাচাই করেই তাঁদের নিয়োগ হবে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পে।
প্রাথমিক ভাবে অগ্নিবীরদের মাসিক বেতন হবে ৩০ হাজার টাকা (প্রথম বছরে ৪ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকার প্যাকেজ)। পরে তা বেড়ে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা হবে ((চতুর্থ বছরে ৬ লক্ষ ৯২ হাজার টাকার প্যাকেজ)।
প্রথম ছ’মাস হবে প্রশিক্ষণপর্ব। চার বছর পর অগ্নিবীরদের এক চতুর্থাংশ যোগ্যতার ভিত্তিতে ভারতীয় সেনায় আরও ১৫ বছরের নিয়োগ পাবেন। বাকিরা ‘সেবা নিধি’ প্রকল্পে ১১ থেকে ১২ লক্ষ টাকা নিয়ে অবসরের সুযোগ পাবেন।
অবসরের সময় পাওয়া ১০ লক্ষ ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়করমুক্ত হবে। অগ্নিবীরদের মধ্যে যাঁদের বয়স থাকবে তাঁরা ভারতীয় সেনায় স্থায়ী নিয়োগের জন্যেও আবেদন জানাতে পারবেন।
অগ্নিবীরদের একাংশকে পরিবহণ মন্ত্রক, শুল্ক দফতরের মতো বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থায় নিয়োগ করার বন্দোবস্ত করবে সরকার। অবসরের পর ব্যবসা করতে চাইলে পাবেন ব্যাঙ্ক ঋণের বিশেষ সুবিধা।
কর্তব্যরত অবস্থায় কোনও অগ্নিবীর আহত বা নিহত হলে তিনি বা তাঁর পরিবার ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর এক জন সদস্যের সমান ক্ষতিপূরণ, ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন। পাবেন, বিনামূল্যে ৪৮ লক্ষ টাকার জীবনবিমাও।
বর্তমানে ভারতীয় স্থলসেনার পদাতিক বাহিনীর কমিশন্ড অফিসার হিসেবে ১০ বছরের মেয়াদে ‘শর্ট সার্ভিস কমিশন’-এ নিয়োগের প্রথা রয়েছে। লেফটেন্যান্ট হিসেবে নিয়োজিত ওই অফিসারদের কাজের মেয়াদ আরও ১৪ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যায়।
ভিন্ন পেশা বা ব্যবসায়ে যুক্ত ব্যক্তিরাও স্থলসেনার ‘টেরিটোরিয়াল আর্মি’ বাহিনীতে আংশিক সময়ের জন্য নিয়োজিত হয়ে থাকেন। সরকারি ঘোষণা বলছে, এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন অবসর নেওয়া অগ্নিবীরেরা।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, চলতি বছরে ৪৬ হাজার অগ্নিবীর নিয়োগ করা হবে। তাঁদের জন্য ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের আওতায় সেনার নিয়ন্ত্রণে তৈরি হবে সম্পূর্ণ নতুন একটি বাহিনী।
নতুন বাহিনীর উর্দি হবে ভারতীয় সেনার ধাঁচেই। তবে থাকবে চিহ্নিতকরণের জন্য পৃথক ব্যাজ ও রঙের ‘ইনসিগনিয়া’। তবে এ সংক্রান্ত খুঁটিনাটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে।
বর্তমানে ভারতীয় সেনার গড় বয়স ৩২। অগ্নিবীর নিয়োগ শুরুর ৬-৭ বছরের মধ্যে তা ২৬-এ নেমে আসবে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের হিসাব। এই ‘নতুন রক্তে’ ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধ-ক্ষমতা বাড়বে বলে সামরিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের দাবি।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দাবি, অগ্নিপথ প্রকল্প সশস্ত্র বাহিনীতে অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের ভারসাম্য আনবে। শুধু পুরুষরা নন, মহিলারাও স্থলসেনা, নৌসেনা এবং বায়ুসেনায় অগ্নিবীর হওয়ার সুযোগ পাবেন।
তবে সেনার মধ্যে সমান্তরাল এমন বাহিনীর অস্তিত্বের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও অনেকে মনে করছেন। তার ফলে সামগ্রিক ভাবে সেনার পেশাদারিত্বে আঁচ আসতে পারে।
স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের পরে শেখ মুজিবের সিদ্ধান্তে মুক্তিযোদ্ধা তরুণদের নিয়ে সেনাবাহিনীর সমান্তরাল রক্ষীবাহিনী গড়া হয়েছিল। যা সেনা বিদ্রোহের পথ প্রশস্ত করেছিল বলে মনে করা হয়। মুজিব হত্যার পর ভেঙে দেওয়া হয় সেই রক্ষীবাহিনী।