বুধবার বিহারের চম্পারণে রাহুল।
যুব সমাজ কোনও অংশে কম নয়। আসলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং নীতীশ কুমারের মধ্যেই খামতি রয়েছে। তাই যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থান করে উঠতে পারছেন না তাঁরা। বুধবার বিহারে মহাজোটের হয়ে নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী। বেকারত্ব, অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং বিতর্কিত কৃষি আইন নিয়ে সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেই সরাসরি নিশানা করেন তিনি।
এ দিন প্রথমে বিহারের চম্পারণে সভা করেন রাহুল। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘২০১৪-য় চিনি কারখানাগুলি চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছিলেন কারখানায় তৈরি চিনি দিয়ে এসে চা খেয়ে যাবেন। আপনারাই বলুন, প্রধানমন্ত্রী এসে চা খেয়ে গিয়েছেন?’’
নিজের খামতি বেরিয়ে পড়বে জেনে প্রধানমন্ত্রী আজকাল বেকারত্ব নিয়ে উচ্চবাচ্য করেন না বলেও দাবি করেন রাহুল। তিনি বলেন, ‘‘আজকাল বেকারত্বের প্রসঙ্গ মুখেই আনেন না প্রধানমন্ত্রী। কারণ উনি জানেন, বিহারের মানুষ আর ওঁর মিথ্যে প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করবেন না। বিহারের মানুষকে কাজের খোঁজে অন্য রাজ্যে যেতে হবে কেন? বিহারের যুবকরা কোনও অংশে কম? খামতি আসলে নীতীশ কুমার এবং প্রধানমন্ত্রীর মধ্যেই রয়েছে। তাই বিহারবাসীর জন্য রোজগারের বন্দোবস্ত করতে পারছেন না তাঁরা। কংগ্রেস দীর্ঘদিন কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল। কী ভাবে দেশ চালাতে হয় আমরা জানি। কিন্তু আমাদের একটাই খামতি, আমরা বুক ফুলিয়ে মিথ্যে বলতে পারি না।’’
আরও পড়ুন: ঢিবরায় বুথের বাইরে উদ্ধার আইইডি, উত্তেজনার মধ্যেই প্রথম দফায় ভোটদান শুরু বিহারে
বিতর্কিত কৃষি আইন নিয়েও এ দিন প্রধানমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করে রাহুল। পঞ্জাবে প্রধানমন্ত্রীর কুশপুতুল পোড়ানোর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘দশেরায় সাধারণত রাবণ, কুম্ভকর্ণ এবং মেঘনাদের কুশপুতুল পোড়ানো হয়। কিন্তু এ বছর পঞ্জাবে নরেন্দ্র মোদী, অম্বানীজি এবং আদানিজি-র কুশপুতুল পোড়ানো হয়েছে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, ভারতের কৃষকরা দেশের প্রধানমন্ত্রীর কুশপুতুল পোড়াচ্ছেন। কিন্তু ২০০৬ সালে নীতীশ কুমার যে ভুল করেছিলেন, আজ প্রধানমন্ত্রীও সেই একই ভুল করছেন। শহরের জীবনযাপন গ্রামের উপরই নির্ভরশীল। আর গ্রামের ভরসা যে কৃষক, তিনি ফসলের উপর নির্ভরশীল। কৃষককে বাদ দিয়ে শহুরে জীবন অচল। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী যে আইন এনেছেন, তাতে সরাসরি কৃষকদের উপরই আক্রমণ নেমে এসেছে। ২০০৬ সালে বিহারে বাজার ও ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হয়েছিল। আজও বিহারের আখচাষিরা ফসলের সঠিক মূল্য পান না। আর সেই কারণেই কাজের খোঁজে বাইরে যেতে হয় তাঁদের।’’
আরও পড়ুন: ‘জঙ্গলরাজ’ ফিরতে দেবেন না, বিহারে ভোটপ্রচারে গিয়ে আহ্বান মোদীর
রাহুল আরও বলেন, ‘‘ব্রিটেনের মতো মহাশক্তিধর দেশের বিরুদ্ধে লড়তে চম্পারণ থেকেই যাত্রা শুরু করেছিলেন মহাত্মা গাঁধী। কারণ উনি জানতেন আসল ভারত এখানেই। কিন্তু আজ বিহারের যুবকদের বলা হচ্ছে, স্বপ্ন দেখো, কিন্তু বিহারে রোজগারের আশা কোরো না। তার জন্য বেঙ্গালুরু, হরিয়ানা যেতে হবে। ২ কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু হয়েছে ঠিক উল্টোটা। হাজার হাজার মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। লক্ষ লক্ষ বিহারবাসীকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। লকডাউনে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে হয়েছে শ্রমিকদের। সেইসময় খাবার, জল মিলেছে কি? লকডাউন এবং নোটবন্দি, দু’টো সিদ্ধান্তের পিছনে সরকারের একটাই লক্ষ্য ছিল, কৃষক এবং ছোট ব্যবসায়ীদের রোগজারের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া।’’