মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লা। —ফাইল চিত্র।
ফারুক আবদুল্লা, ওমর আবদুল্লা, মেহবুবা মুফতির মতো জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীদের বন্দি করে রাখা হয়েছে কেন, তার ব্যাখ্যা দিলেন নরেন্দ্র মোদী। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ নিয়ে সমালোচনার মুখে আজ বিরোধীদের পাল্টা আক্রমণও করলেন তিনি।
লোকসভায় রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর ধন্যবাদজ্ঞাপক প্রস্তাবে বক্তৃতা দিতে গিয়ে মোদী সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। বলেন, ‘‘অনেকেই বলেছেন, বিশেষ মর্যাদা না থাকলে কাশ্মীরে আগুন জ্বলবে। ৫ অগস্ট কয়েকজন নেতাকে আটক করা নিয়ে প্রশ্নও তোলা হয়েছে। কিন্তু মেহবুবা মুফতি বলেছিলেন, ভারত কাশ্মীরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ১৯৪৭ সালে যদি অন্য ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হত, তা হলে আমরা ভাল থাকতাম।’’ আবদুল্লা পরিবার প্রসঙ্গে মোদীর মন্তব্য, ‘‘ওমর বলেছিলেন, ৩৭০ বিলোপ হলে কাশ্মীর ভারত থেকে আলাদা হয়ে যাবে। আর ফারুক আবদুল্লা দাবি করেছিলেন, ৩৭০ অনুচ্ছেদ না থাকলে কাশ্মীরে কেউ জাতীয় পতাকা তুলবেন না। আমরা কী ভাবে এঁদের পাশে থাকব?’’ মোদীর এই বক্তব্য শোনার পরেই লোকসভায় হইচই শুরু হয়।
কাশ্মীরের আঞ্চলিক দলগুলির পাশাপাশি কংগ্রেসকেও নিশানা করেন মোদী। তাঁর মন্তব্য, ‘‘কাশ্মীর সম্প্রীতিরই ভূমি ছিল। তাকে শুধু জমি দখলের জায়গায় কে পরিণত করেছে? বোমা-বন্দুকে কাশ্মীরের পরিচয় কার সৃষ্টি?’’ মোদী বলেন, ‘‘১৯৯০ সালের ১৯ জানুয়ারি কাশ্মীরের ‘নিষ্ক্রমণ দিবস’। কারণ, ৩০ বছর আগে সে দিন থেকেই লক্ষ লক্ষ কাশ্মীরি পন্ডিত উপত্যকা থেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে শুরু করে। তাদের উপরে হিংসা নেমে এসেছিল। কেউ কি জানুয়ারির সেই অন্ধকার রাতের কথা ভুলতে পারবেন?’’ ঘটনা হল, ওই দিনই মেহবুবার বাবা, কেন্দ্রে তৎকালীন বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সঈদের নির্দেশে জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল করা হয়েছিল জগমোহনকে। ক্ষুব্ধ হয়ে সে দিনই ইস্তফা দেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা। বিধানসভা ভঙ্গের প্রস্তাব দেন রাজ্যপাল। কাশ্মীরি পন্ডিতদের উপর আক্রমণের ক্ষেত্র প্রস্তুত ছিল আগেই। সেই চূড়ান্ত রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে উপত্যকা ছাড়েন কয়েক লক্ষ কাশ্মীরি পন্ডিত। আজ ইতিহাসের পাতা থেকে আবদুল্লা-সঈদ পরিবারের সংঘাতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছেন মোদী।
আরও পড়ুন: ‘পশ্চিমবঙ্গে কী ভাবে নিরীহদের হত্যা করা হচ্ছে তা জানা আছে’
মোদীর বক্তব্য শোনার পরেই রাহুল গাঁধী টুইট করে বলেন, ‘‘কাশ্মীরের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির নেতাদের গোপন জায়গায় বন্দি করে রাখাটা গণতন্ত্র-বিরোধী ও অসাংবিধানিক। সরকার বোকার মতো এই অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ, কাশ্মীরে রাজনৈতিক নেতৃত্বের যে শূন্যতার সৃষ্টি করছে কেন্দ্রীয় সরকার, তা পূরণ করার সুযোগ জঙ্গিদের দেওয়া হচ্ছে।’’ কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পিডিপিও। দলের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘‘ভাষণ ছেড়ে কাশ্মীরে রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালানোর সুযোগ দিক সরকার।... প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীরকে ভারতের মাথার মুকুট হিসেবে তুলে ধরেছেন আর বলেছেন বিজেপির প্রতি কাশ্মীরের মানুষের পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে। বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে এ সব মিলছে না। সরকারের নিজের দেওয়া তথ্যই ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরছে।’’ মোদীর বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া তবে জানায়নি কাশ্মীরের অন্য দলগুলি।