২০১১-র মার্চ। মোদীর দেওয়া সেই রিপোর্ট হাতে মনমোহন। ফাইল চিত্র
এখন বিরোধীদের যে দাবি উড়িয়ে দিচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ঠিক সেই দাবিই তুলেছিলেন নরেন্দ্র মোদী।
কৃষি ক্ষেত্রে সংস্কার করে মোদী সরকার বেসরকারি কর্পোরেট সংস্থাকে চুক্তি-চাষ করিয়ে সরাসরি চাষিদের থেকে ফসল কেনার সুযোগ করে দিয়েছে। চাষিদের মান্ডির বাইরে ফসল বিক্রিরও ছাড়পত্র দিচ্ছে। বিরোধীদের দাবি, বেসরকারি সংস্থাগুলি যাতে অন্তত ন্যূনতম সহায়কমূল্য (এমএসপি) দেয়, তার ব্যবস্থা করুক সরকার। ঘটনা হল, ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের তৈরি মুখ্যমন্ত্রীদের ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে মোদী ঠিক এই সুপারিশই করেছিলেন।
মূলত মূল্যবৃদ্ধি রোখার পথ খুঁজতে ২০১০-র এপ্রিলে গুজরাত, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু ও মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে একটি গোষ্ঠী তৈরি করেছিলেন মনমোহন। ২০১১-র মার্চে মোদী নিজের হাতে তাঁর রিপোর্ট জমা দেন মনমোহনের কাছে। তার বিস্তৃত বর্ণনা এখনও মোদীর নিজস্ব ওয়েবসাইটে রয়েছে।
আরও পড়ুন: কৃষি-বিক্ষোভে নিজের নিয়ন্ত্রণ চাইছে তৃণমূল
কী ছিল সেই রিপোর্টে? মোদীর রিপোর্টে ‘এমএসপি নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক অনুচ্ছেদে লেখা ছিল, অনেক ক্ষেত্রেই চাষিরা আগাম চুক্তি করে চাষ করেন। সে ক্ষেত্রে তাঁদের স্বার্থরক্ষায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে লেনদেন এমএসপি-র কমে হতে দেওয়া যাবে না। আইনে বিধিবদ্ধ ভাবে তা নিশ্চিত করতে হবে।
বিরোধী শিবিরের আপসোস, এমন অস্ত্র থাকতেও সংসদে মোদীকে ঠিক মতো চেপে ধরা সম্ভব হয়নি। কৃষি বিলের বিরোধিতা, হট্টগোল হলেও মোদী নিজের গা বাঁচিয়ে চলে গিয়েছেন। শুধু কৃষি বিল নয়। করোনা মোকাবিলা, অর্থনীতির দুরবস্থা, লাদাখে অনুপ্রবেশ, কোনও বিষয় নিয়েই তিনি বিরোধীদের মুখোমুখি হননি। একটি ক্ষেত্রেও বিরোধীরা সরাসরি তাঁর দিকে আঙুল তোলার সুযোগ পাননি। তাঁর বিবৃতি চেয়েও জোরালো দাবি করেননি। কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, “আজ মনমোহন প্রধানমন্ত্রী থাকলে কি কোভিড, লাদাখ বা কৃষি বিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি না দিলে বিজেপি সন্তুষ্ট হত? আমরাই মোদীকে আসল প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছি।”
আরও পড়ুন: কৃষকদের বন্ধ আজ, মোদী আছেন বক্তৃতায়
মোদী সংসদে মুখ না খুললেও বুধবার অধিবেশনের শেষ পর্বে লোকসভা ও রাজ্যসভায় হাজির ছিলেন। তাঁকে দেখে বিজেপি সাংসদরা ‘জয় শ্রীরাম’, ‘ভারতমাতা কি জয়’ ধ্বনি তুলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী এমএসপি নিয়ে বিহারের প্রকল্প উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে মুখ খুলেছেন। বিরোধীদের আক্রমণের জবাবে আগাম রবি ফসলের এমএসপি ঘোষণা করেছেন। কিন্তু সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলছেন, “গত দশ বছরে এত কম হারে কখনও গমের এমএসপি বাড়েনি।”
সঙ্ঘ পরিবারের স্বদেশি জাগরণ মঞ্চেরও দাবি, আইনেই এমএসপি-র কথা বলে দেওয়া থাক। কিন্তু মোদী সরকারই এখন মোদীর আগের সুপারিশ মানতে নারাজ। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ তাই প্রধানমন্ত্রীকে ‘ইউ-টার্ন মোদী’ বলে কটাক্ষ করেছেন। কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমরের যদিও যুক্তি, “এমএসপি আইনের অংশ নয়। কিন্তু এমএসপি যেমন ছিল, তেমনই থাকবে।”