বাণিজ্যচুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করতে নিজেদের মধ্যে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক। ফাইল চিত্র।
ভারত-ব্রিটেন মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আজ নিজেদের মধ্যে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক। তবে কূটনৈতিক সূত্রের খবর, চুক্তির ভাগ্য অনেকটাই ঢুকে আছে স্কচ হুইস্কির বোতলে।
ঋষি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর আজ মোদী ফোন করে তাঁকে অভিনন্দন জানান। প্রস্তাবিত মুক্তি বাণিজ্য চুক্তিতে ‘সমস্ত দিককে সংযুক্ত’ করে ‘ভারসাম্য’ বজায় রাখার প্রয়োজনের কথা সেখানে তুলে ধরেন তিনি। এই ‘ভারসাম্য’ রক্ষার জায়গা নিয়েই এখন দর কষাকষি চলছে ভারত এবং ব্রিটেনের মধ্যে। ঘরোয়া বাণিজ্যিক স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে কতটা প্রবেশাধিকার ব্রিটেনকে দেওয়া যায়, চলছে সেই সূক্ষ্ম বিচার। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে স্কচ হুইস্কি!
কেন? সমীক্ষা অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হুইস্কি পান করা হয় ভারতে। অথচ এই ভারতেই কিনা মোট বাজারের মাত্র ২ শতাংশ দখল করতে পেরেছে স্কচ হুইস্কি। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্রিটেন ভারতের উপর চাপ দিচ্ছে, স্কচের উপর আমদানি শুল্ক কমাতে, যাতে স্কটল্যান্ডে তৈরি হুইস্কির রফতানি ভারতে বাড়ে। ভারত ব্রিটেন মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি যে যে জায়গায় এখনও ফেঁসে রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল এই তরল আগুন!
ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক সচিব গ্রেগ হ্যান্ডস সম্প্রতি জানিয়েছেন, বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা পরবর্তী স্তরে পৌঁছেছে এবং খুব শীঘ্রই চুক্তি সই হবে বলে আশা করা যায়। বাণিজ্য চুক্তির মোট ২৬টি অধ্যায়ের মধ্যে ১৬টিতে ঐকমত্য হয়ে গিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। কূটনৈতিক মহলের বক্তব্য, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে হলে সংশ্লিষ্ট দু’টি দেশকেই আমদানি শুল্ক হয় ছেঁটে ফেলতে হবে অথবা একেবারে কমিয়ে আনতে হবে, যাতে একে অন্যের বাজারে সহজেই বেশির ভাগ পণ্য প্রবেশ করাতে পারে। স্কচ হুইস্কির ক্ষেত্রে এই ছাড় পেতে খুবই আগ্রহী ব্রিটেন। কিন্তু ভারত এখনও মনস্থির করে উঠতে পারেনি।
ভারতে আমদানিকৃত মদের উপরে ১৫০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। স্কচ হুইস্কি অ্যাসোসিয়েশন সম্প্রতি জানিয়েছে, এই শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে ভারতে হুইস্কি রফতানির পরিমাণ বাড়বে পাঁচ বছরে ১ বিলিয়ন পাউন্ড। আর তাই স্কচে শুল্ক হ্রাসের জন্য ভারতের কাছে দরবার চালাচ্ছে ব্রিটেন। স্বাভাবিক ভাবেই দেশের হুইস্কি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির স্বার্থের কথা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া ভারতের পক্ষে সহজ নয়। ভারতে যদি সুরারসিকরা জলের দরে স্কচ পান, তা হলে কাহিল অবস্থা হবে দেশি হুইস্কি নির্মাতা সংস্থাগুলির। ভারতের তরফে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, তারা ব্রিটেনের হুইস্কি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড় তখনই দেবে যখন ব্রিটেনও স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারতীয় পরিষেবার জন্য আরও বেশি করে দরজা খুলে দেবে।
মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রূপায়ণে ভারতের দিক থেকে আর একটি সমস্যা হল, ‘ডেটা লোকালাইজ়েশন’ সংক্রান্ত জটিলতা। অর্থাৎ ভারতীয় বাজার এবং উপভোক্তা সংক্রান্ত বিপুল তথ্য বিদেশের কাছে চলে যাক, এটা চায় না ভারত। সে ক্ষেত্রে ভারতের দাবি, ব্রিটিশ সংস্থাগুলিকে ভারতের জন্য নির্দিষ্ট স্থানীয় সার্ভার তৈরি করতে হবে, যা কিনা যথেষ্ট ব্যয়সাপেক্ষ। পাশাপাশি ব্রিটেন চাইছে ভারতের সরকারি বরাতের ক্ষেত্রেও তাদের সংস্থাগুলি যেন দরপত্র হাঁকতে পারে। এটাও চুক্তি রূপায়ণের ক্ষেত্রে একটা বড় গিঁট। ঋষি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই সব বিষয় নিয়ে কী ভাবে দর কষাকষি হয়, এখন সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহল।
এ ছাড়া বিনিয়োগ এবং পরিষেবার ক্ষেত্রে লাল ফিতের ফাঁস আলগা করার মতো বিষয় তো রয়েছেই। জানা গিয়েছে, কিছু আর্থিক এবং আইনি পেশাদার পরিষেবার ক্ষেত্রে শুল্ক এবং বিজ়নেস ভিসার বিষয়গুলি নিয়েও এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
আজ ফোনে কথা হওয়ার পরে মোদী টুইট করে বলেন, “আমাদের সামগ্রিক কৌশলগত অংশীদারি আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করব।” টুইট করেন সুনকও। মোদীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ব্রিটেন এবং ভারত, দুই গণতান্ত্রিক দেশ একসঙ্গে অনেক সাফল্য পেতে পারে। নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা এবং অর্থনৈতিক অংশীদারি বাড়ানোর ব্যাপারে তিনি মুখিয়ে রয়েছেন।
যেটা ওঁরা ঊহ্য রেখেছেন, সেটা হল মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিকে ‘চিয়ার্স’ জানাতে গেলে স্কচের ছিপি খুলতে হবে।
খুলবে কি?