নরেন্দ্র মোদী।
গোধরা অগ্নিকাণ্ডের পরে গুজরাতের বিভিন্ন অংশে হিংসা ছড়িয়ে পড়ার পিছনে রাজ্যের কোনও মন্ত্রীর মদত, প্ররোচনা বা উস্কানি ছিল— এমন কোনও প্রমাণ মেলেনি বলে জানিয়েছে নানাবতী-মেহতা কমিশন। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দলের স্থানীয় কিছু সদস্য হিংসায় জড়িত থাকলেও কোনও ধর্মীয় সংগঠন বা রাজনৈতিক দল এর পিছনে ছিল, এমন মনে করার মতো কোনও সূত্রও কমিশন পায়নি। ওই ঘটনা আদৌ পূর্বপরিকল্পিত ছিল না বলেই মনে করে কমিশন। সেই সময় গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। যার অর্থ, ২০০২-এর ওই ঘটনায় মোদী পুরোপুরি ‘ক্লিনচিট’ পেলেন। তবে তৎকালীন পুলিশ-কর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ রয়েছে কমিশনের রিপোর্টে। প্রশ্ন উঠেছে, ঘটনার ১৭ বছর পরে বিজয় রূপাণী সরকার কি তাতে আমল দেবে?
মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে মোদীই দুই প্রাক্তন বিচারপতিকে নিয়ে তদন্ত কমিশন গড়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জি টি নানাবতী ও গুজরাত হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অক্ষয় মেহতাকে নিয়ে গঠিত হয় কমিশন। তাদের রিপোর্টের প্রথম অংশ বিধানসভায় পেশ হয়েছিল ২০০৯-এর ২৫ সেপ্টেম্বর। কমিশন রাজ্য সরকারের কাছে চূড়ান্ত রিপোর্টটি জমা দেয় ২০১৪ সালে। রাজ্য রাজনীতির গণ্ডি পেরিয়ে সেই বছরই প্রধানমন্ত্রী হন মোদী। এরও পাঁচ বছর পরে আজ ১৫০০ পাতার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেশ হল গুজরাত বিধানসভায়। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রদীপসিন জাডেজা এ দিন ৯ খণ্ডের বিশাল রিপোর্টটি বিধানসভায় পেশ করেন।
কমিশন তার রিপোর্টে বলেছে, ২০০২-এর ২৭ ফেব্রুয়ারি গোধরায় ট্রেনে আগুনে পুড়ে ৫৯ জন করসেবকের মৃত্যু আদৌ দুর্ঘটনা ছিল না। ষড়যন্ত্র করেই অযোধ্যা ফেরত করসেবকদের পোড়ানো হয় সাবরমতী এক্সপ্রেসে। এবং তার জেরেই গুজরাতের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক হানাহানি শুরু হয়। গোধরার ঘটনায় হিন্দুদের একটা বড় অংশ ক্ষিপ্ত হয়েছিল। তারাই হামলা চালায় মুসলিমদের উপরে। মারা যান এক হাজারের বেশি মানুষ। যাদের বেশির ভাগই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। তবে কোনও ধর্মীয় বা রাজনৈতিক দল এতে জড়িত থাকার কোনও প্রমাণ পায়নি নানাবতী কমিশন। মোদী ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, পরোক্ষ উস্কানি দেওয়া ও তিন দিন ধরে হিংসাকে বেলাগাম চলতে দেওয়ার। আজ স্পষ্ট হয়ে গেল, মোদী দিল্লির কুর্সিতে বসার আগেই নানাবতী কমিশন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছিল।
মোদীকে নিষ্কলুষ বলে জানালেও কমিশন ২০০২-এর ওই হিংসা রুখতে না-পারার দায় কার্যত তাঁর জমানার পুলিশ-কর্তাদের উপরে চাপিয়েছে। কমিশনের বক্তব্য, কিছু এলাকায় পুলিশ কম থাকায় বা সশস্ত্র না-থাকার কারণে তাঁরা উত্তেজিত জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। তবে আমদাবাদে কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশের যে ধরনের দক্ষতা ও তৎপরতা দেখানোর প্রয়োজন ছিল, তা দেখা যায়নি। প্রয়োজনের সময়ে উপযুক্ত ভূমিকা নিতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য ও উত্তেজিত জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে অপারগ হওয়ার জন্য তৎকালীন পুলিশ-কর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছে নানাবতী কমিশন। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত স্থগিত হয়ে গিয়েছিল নানাবতী-মেহতা কমিশন গঠনের পর। গোধরা পরবর্তী হিংসার ১৭ বছর পরে গুজরাতের বর্তমান বিজেপি সরকার এ বিষয়ে কী অবস্থান নেয়, বা কী পদক্ষেপ করে, বিরোধীদের নজর এখন সে দিকেই।