প্রতীকী ছবি।
২০১৭ সালের মাঝামাঝি। কেরল সফরে গিয়েছিলেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হ্যানি বাবু ও তাঁর স্ত্রী জেনি রোয়েনা। রোয়েনাও পেশায় শিক্ষক। তাঁর ছোটবেলা কেটেছে কেরলে। রোয়েনার মনে আছে, লম্বা একটা সুন্দর ছুটি কাটিয়েছিলেন তাঁরা।
কেরলেই দেখা হয়েছিল পুরনো বন্ধু রোনা উইলসনের সঙ্গে। রোয়েনা বলছেন, ‘‘একটা রিসর্টে ছিলাম সবাই। রাজনীতি থেকে শুরু করে কেরলে যখন থাকতাম তখনকার জীবন, সব কিছু নিয়েই আলোচনা হয়েছিল।’’
তাঁদের জানা ছিল না, ওই ছুটির সময়ে হ্যানি বাবু আর রোনা উইলসনের ফোনে পেগাসাস সফটওয়্যার ব্যবহার করে নজরদারি চালাচ্ছিল কোনও সংস্থা। ২০১৮ সালের ৬ জুন এলগার পরিষদ মামলায় গ্রেফতার হন রোনা উইলসন। হ্যানি বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদের সময়েও বারবার ওই কেরল সফরের কথা তুলেছিল এনআইএ। পরে তাঁকেও ওই মামলায় গ্রেফতার করা হয়।
ফাঁস হওয়া পেগাসাস ম্যালওয়্যার সংক্রান্ত তথ্যভান্ডারে কোনও ফোন নম্বর থাকার অর্থ এই নয় যে সেই ফোনকে ওই ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে নিশানা করা হয়েছিল। তবে হ্যানি বাবু ও রোনা উইলসন এখন বিচারবিভাগীয় হেফাজতে। তাঁদের ফোনকে নিশানা করা হয়েছিল কিনা তা জানার উপায় নেই।
তবে ওই তথ্যভান্ডার খতিয়ে দেখে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০২০ সালের অক্টোবরের মধ্যে এলগার পরিষদ মামলায় গ্রেফতার হওয়া অন্তত ৮ জন সমাজকর্মী, আইনজীবী ও শিক্ষাবিদের নম্বর রয়েছে সেখানে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ভারনন গনসালভেস, আনন্দ তেলতুম্বডে, সোমা সেন, গৌতম নওলাখা, অরুণ ফেরেইরা, সুধা ভরদ্বাজ।
সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, ওই অভিযুক্তদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, বন্ধু, আইনজীবী ও সহকর্মীদের কাছে থাকা অন্তত ১২টি নম্বর রয়েছে পেগাসাস সংক্রান্ত তথ্যভান্ডারে।
সেখানে পাওয়া গিয়েছে তেলুগু কবি ও লেখক ভারাভারা রাওয়ের মেয়ে কে পাবনা, আইনজীবী সুরেন্দ্র গ্যাডলিংয়ের স্ত্রী মিনাল, সুরেন্দ্রর সহযোগী আইনজীবী নিহালসিংহ রাঠৌর ও জগদীশ মেশরামের নম্বরও।
চলতি মাসেই একটি আমেরিকান সংস্থা দাবি করে, সুরেন্দ্র গ্যাডলিংয়ের ল্যাপটপকে নিশানা করা হয়েছিল। নজরদারির পাশাপাশি সেই ল্যাপটপে ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে গোপনে কিছু আপত্তিকর নথিপত্র পাঠানো হয়। রোনা উইলসনের ল্যাপটপকেও একই ভাবে নিশানা করা হয় বলে জানিয়েছে অন্য একটি সংস্থা।
এই মামলায় কিছু অভিযুক্তের প্রতিনিধিত্ব করছেন আইনজীবী মিহির দেশাই। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এটা কেবল নজরদারি নয়। ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে এক ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য ও জীবন নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ভারতে উপযুক্ত তথ্য সুরক্ষা আইন না থাকায় এ নিয়ে আইনি লড়াইয়েও সমস্যা হচ্ছে।’’