বেঙ্কাইয়া নায়ডু
হিন্দি চ্যানেল এনডিটিভি ইন্ডিয়া বন্ধের নির্দেশ ঘিরে গায়ে সেঁটে বসা জরুরি অবস্থার তকমা ঝেড়ে ফেলতে আসরে নামল নরেন্দ্র মোদী সরকার। পাল্টা যুক্তি দিয়ে ক্রমশ সুর চড়াচ্ছে বিরোধীরা। এই অবস্থায় এনডিটিভি-র সঙ্গে একই দিনে একই সময়ে অসমের একটি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশ দিল কেন্দ্র।
পঠানকোটে জঙ্গি হামলার সময় দেশের নিরাপত্তার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস করেছে, এই অভিযোগ তুলে ‘এনডিটিভি ইন্ডিয়া’ চ্যানেলটির সম্প্রচার ৯ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে একদিনের জন্য বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের পরেই একযোগে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। চাপের মুখে আজ কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর পাল্টা দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে জরুরি অবস্থার কোনও মিল নেই। সরকারের বিরোধিতা নিছক রাজনীতি ছাড়া কিছু নয়।
চ্যানেল বন্ধের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বিচারপতি মার্কণ্ডেয় কাটজুর দাবি, ওই নির্দেশ বেআইনি। কারণ কেব্ল টিভি নেটওয়ার্ক আইনে বলা রয়েছে, কোনও জঙ্গি মোকাবিলা চলার সময় সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না। সেনা যখন জঙ্গিদের মোকাবিলা করছিল, তার কোনও সরাসরি সম্প্রচার এনডিটিভি করেনি। পাশাপাশি, আন্তঃমন্ত্রক কমিটির কাছে এনডিটিভি-র বক্তব্য ছিল, যে সমস্ত স্পর্শকাতর তথ্য তারা ফাঁস করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে, সর্বভারতীয় কয়েকটি সংবাদপত্রে সে সব তথ্য আগেই প্রকাশিত হয়েছিল।
প্রাক্তন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি আজ বলেন, ‘‘সম্প্রচার বন্ধ করে সরকার শুধু এনডিটিভি-কে বার্তা দিচ্ছে না। এই বার্তা সব সংবাদমাধ্যমকেই— হয় সরকারের কথা মেনে চলো, নয়তো চলতেই দেওয়া হবে না!’’ লখনউয়ে মুলায়ম সিংহ যাদবের জনতা পরিবারের মহাজোট মঞ্চেও উঠেছে চ্যানেল বন্ধের প্রসঙ্গ। আরজেডি নেতা লালু প্রসাদের অভিযোগ, মোদী দেশে জরুরি অবস্থা ফিরিয়ে আনছেন। আর মায়াবতী বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে মোদী সরকার নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে চাইছে।’’ সিপিএম পলিটব্যুরো এক বিবৃতিতে চ্যানেল বন্ধের সিদ্ধান্তের নিন্দা করে অবিলম্বে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।
চার দিক থেকে চাপের মুখে মোদী সরকারের মান বাঁচাতে চেন্নাইয়ে মুখ খোলেন বেঙ্কাইয়া। তাঁর দাবি, সম্প্রচার বন্ধের নজির এই প্রথম নয়। ইউপিএ আমলে ২১ বার চ্যানেল বন্ধ হয়েছিল। যদিও সে সময় যে চ্যানেলগুলিকে বন্ধ করা হয়েছিল, তার বড় অংশের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা প্রচারের অভিযোগ উঠেছিল। এ দিন প্রাক্তন মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারিও সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘ইউপিএ আমলে মূলত মনোরঞ্জনের চ্যানেল বন্ধ করা হয়েছিল।’’ বেঙ্কাইয়া অবশ্য তার পরেও বলেন, ‘‘মনোরঞ্জন চ্যানেলে মাঝরাতে অশ্লীলতা প্রচারের দায়ে সম্প্রচার বন্ধ আর দেশের নাগরিক-সেনার নিরাপত্তা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা— কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটা দেশবাসীই স্থির করবেন।’’
সম্প্রচার বন্ধের সিদ্ধান্তের সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টি জুড়ে আবেগ কাড়তে চেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু গায়ে জরুরি অবস্থার তকমা সেঁটে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন তারা। বেঙ্কাইয়া তাই কংগ্রেসের দিকে নিশানা ঘোরাতে চেয়ে আজ বলেন, ‘‘জরুরি অবস্থার সময় দেশের নিরাপত্তার স্বার্থ দেখা হয়নি। এক ব্যক্তির স্বার্থ জড়িত ছিল।’’
অসমের ‘নিউজ টাইম অসম’ চ্যানেলটির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে ২০১৩ সালে। অনেকে বলছেন, এনডিটিভি নিয়ে বিতর্ক ঠেকাতেই এত দিন পরে ব্যবস্থা নিল কেন্দ্র!