নদিয়া জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক।
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণে নদিয়া জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ককে দেশের যুগ্ম সেরার শিরোপা দিল নাবার্ড। কৃতিত্বের ভাগীদার কর্ণাটকের বিদর্ভ কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কও।
গত ১১ জুলাই দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে দুই ব্যাঙ্কের কর্তৃপক্ষের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। নদিয়ার ব্যাঙ্কটির পরিচালন সমিতির সভাপতি শিবনাথ চৌধুরী বলেন, “ভাবতে ভাল লাগছে যে, দেশের ৪৭৫টি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের মধ্যে আমরা যুগ্ম ভাবে সেরা হতে পেরেছি। আমাদের কর্মীদের আপ্রাণ প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে।”
মুর্শিদাবাদের কপালে এমন জাতীয় স্তরের শিরোপা জোটেনি। তবে গত ১২ জুলাই, নাবার্ডের জন্মদিনে সেরার শিরোপা পেয়েছে রঘুনাথগঞ্জের উষা ছায়া স্বনির্ভর গোষ্ঠী। কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু তাদের পুরস্কৃত করেন। নাবার্ডের জেলা উন্নয়ন ম্যানেজার জি কেশব রাও বলেন, “এখানে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি খুব ভাল কাজ করতে পারেনি। ফলে জেলাস্তরের বাইরে পুরস্কার পায়নি। আগামী বছরে যাতে আরও ভাল কাজ করে, সে বিষয়ে গোষ্ঠীগুলিকে সচেতন করা হবে।”
মুর্শিদাবাদে নাবার্ডের তত্ত্বাবধানে রয়েছে প্রায় ২০ হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠিত রয়েছে। রঘুনাথগঞ্জ ২ ব্লকের মির্জাপুরে ১২ জন মহিলা ২০১০ সালে ‘উষা ছায়া স্বনির্ভর গোষ্ঠী’ তৈরি করে তাঁতের কাজ করে আসছেন। পরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে তাঁরা ব্যবসা বাড়িয়েছেন। গোষ্ঠীর সম্পাদক সুখি গোঁচি বলেন, “আগে আমাদের রোজগার কম হত। গোষ্ঠী গড়ে ভাল আয় হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের গোষ্ঠী মাসে ৪০ হাজার টাকা রোজগার করে। তা আরও বাড়াতে চেষ্টা করছি।”
নদিয়ার কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা যায়, তাদের অধীনে ৩০ হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে। প্রতিটি গোষ্ঠীতে ১০ জন করে সদস্য। গত অর্থবর্ষে ২৫৪টি সদস্য সমবায় ২৪ হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। ঋণ উদ্ধার হয়েছে ৯৬ শতাংশ। পুরস্কার মেলার পিছনে এটাও একটা বড় কারণ বলে মনে করছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
আর এক সাফল্য হল ৩০ হাজার গোষ্ঠীর তিন লক্ষ সদস্যদের নিয়ে ফেডারেশন তৈরি করা। জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক গড়েছে মেম্বার ওয়েলফেয়ার ফান্ডও। প্রতি সদস্যের কাছ থেকে বছরে ২৫ টাকা করে নেওয়া হয়। কোন সদস্য মারা গেলে তাঁর পরিবার ২০ হাজার টাকা আর দুর্ঘটনায় মারা গেলে ৩০ হাজার টাকা পায়। স্বামী মারা গেলে সদস্য পান ১০ হাজার টাকা। দুর্ঘটনায় স্থায়ী অঙ্গহানি হলে ১৫ হাজার টাকা মেলে। সদস্যের এক মেয়েকে দেওয়া হয় পড়াশুনোর খরচ— কলেজে ভর্তির জন্য এক হাজার আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য দু’হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ওই ওয়েলফেয়ার ফান্ড থেকে দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা।
বর্তমানে নদিয়া কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের আমানতের পরিমাণ ১১০০ কোটি টাকা। সিইও সুজন সরকার বলেন, “গোটা দেশে আমরাই এই দু’টো পদক্ষেপ করেছি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের সামাজিক সুরক্ষার কথা ভেবে। দেশের সেরা পুরস্কার পেয়ে আমরা গর্বিত।” এই বছরই রাজ্য সরকার এই সমবায় ব্যাঙ্ককে ‘সমবায় রত্ন’ পুরস্কার দিয়েছে।