ফাইল চিত্র।
একেবারে যেন আকাশ ফুঁড়ে ঝুলিতে এসে পড়েছে একটা ভোট! তিন দিন ধরে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেদার খুঁজেও কেউ হদিস পাননি, কোথা থেকে এল ওই একমাত্র ভোট। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কেরল থেকে দ্রোপদী মুর্মুর পাওয়া একমাত্র ভোট রয়ে গিয়েছে রহস্যে আবৃতই!
ভোটদাতার সন্ধান না পাওয়া যাক, আশাতীত একটি মাত্র ভোটেই উল্লসিত বিজেপি শিবির। আর চুলচেরা বিশ্লেষণ করেও ‘গদ্দার’ খুঁজে পায়নি কংগ্রেস এবং সিপিএম। ভোট তো হয়েছে গোপন ব্যালটে। কেউই স্বীকার করছেন না, তিনি অন্য দিকে ভোট দিয়েছেন।
কেরল বিধানসভায় মোট আসন ১৪০। দক্ষিণী ওই রাজ্যে বিজেপির কোনও বিধায়ক নেই। সিপিএমের নেতৃত্বাধীন এলডিএফের বিধায়ক ৯৯ জন এবং কংগ্রেসের নেতৃত্বে থাকা ফ্রন্ট ইউডিএফের বিধায়ক ৪১ জন। রাজ্যের শাসক ও বিরোধী, দুই ফ্রন্টই যে হেতু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে একই পক্ষের সমর্থক ছিল, তাই ১৪০টি ভোটই ঝুলি ধরে যশবন্ত সিন্হার পক্ষে পড়ার কথা ছিল। কিন্তু ভোট-গণনার পরে দেখা যায়, যশবন্ত পেয়েছেন ১৩৯টি ভোট। আর এনডিএ-র প্রার্থী দ্রৌপদীর পক্ষে গিয়েছে একটি ভোট! কোনও ভোট বাতিল হয়নি। আয়ুর্বেদ চিকিৎসার জন্য পালাক্কাডের একটি হাসপাতালে থাকায় উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সাংসদ নীলরতন সিংহ পটেলকে কেরলের বিধানসভায় ভোট দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তিনি ভোট দিতে এসেছিলেন এবং সেই ভোট দ্রৌপদীর পক্ষেই গিয়েছে।
কিন্তু বিধায়কদের মধ্যে একটি ভোট কোথা থেকে পেলেন দ্রৌপদী? খুব বেশি মাথা ঘামাতে চাননি কেরল বিজেপির রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রন। তাঁর সাফ কথা, ‘‘অন্য দিকের ১৩৯ ভোটের চেয়েও ওই একটি ভোটের মূল্য অনেক বেশি! কারণ, পাওয়ার সংখ্যা না থাকলেও রাষ্ট্রপতি পদে আমাদের জনজাতি প্রার্থী একটি ভোট পেয়েছেন।’’ কিন্তু কী ভাবে পেলেন? সুরেন্দ্রনের মতে, ‘‘এই রাজ্যে আমাদের বা সহযোগী কোনও দলের বিধানসভায় প্রতিনিধিত্ব নেই বলে ১৪০ জন বিধায়কের উদ্দেশেই আমরা দ্রৌপদীকে সমর্থনের আবেদন জানিয়ে খোলা চিঠি দিয়েছিলাম। তাঁদের মধ্যেই কেউ বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়েছেন।’’
‘বিবেকের ডাকে’ এমন সাড়া কে দিলেন, খুঁজে বার করার চেষ্টা করেছিলেন শাসক ও বিরোধী শিবিরের পরিষদীয় নেতৃত্ব। বিধায়কদের ডেকে ডেকে কথা বলেছেন তাঁরা। কিন্তু রহস্য উদ্ধারে কোনও ‘ক্লু’ মেলেনি! সরকারি পক্ষের মুখ্য সচেতক এবং কেরল কংগ্রেস (এম) নেতা এন জয়রাজের বক্তব্য, ‘‘কোনও তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি, কে এনডিএ প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এই বিষয়ে আন্দাজে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’ বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের ভি ডি সতীশনও বলেছেন, ‘‘গোপন ব্যালটে ভোট হয়েছে। কী হয়েছে, কেউ জানে না। না জেনে কাউকে দোষী করে দেওয়া ঠিক নয়।’’
একই সুর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কোডিয়ারি বালকৃষ্ণনেরও। ক্রস ভোটিং হয়েছে সন্দেহে তাঁরা কি দলীয় স্তরে কোনও তদন্ত করবেন? বালকৃষ্ণন বলেছেন, ‘‘সিপিএমের কোনও বিধায়ক এমন কাজ করবেন না। সেই বিশ্বাস আছে। তা ছাড়া, কী উপায়ে বার করা যাবে কে ভোটে কী করেছে, কেউ জানলে বলবেন!’’