ফাইল চিত্র।
কূটনৈতিক প্রক্রিয়া মেনেই শিলচর থেকে রোহিঙ্গা কিশোরীকে মায়ানমারে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন ভারতীয় রক্ষীরা। কিন্তু গেট খুলল না সে দেশের সেনাবাহিনী। দু’দিন অপেক্ষার পর তাকে শিলচরেই ফিরিয়ে আনা হয়েছে৷ কাছাড়ের জেলাশাসক কীর্তি জল্লি জানিয়েছেন, দুই দেশের বিদেশ মন্ত্রকের কথার প্রেক্ষিতেই পাঠানো হয়েছিল ১৪ বছরের কিশোরীকে৷ কাল তাকে শিলচরে ফের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সামনে পেশ করা হবে।
বছরখানেক আগে অবৈধ অনুপ্রবেশের জন্য শিলচরে অন্য কয়েক জনের সঙ্গে কিশোরীটি ধরা পড়েছিল। চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির নির্দেশে নিবেদিতা নারী সংস্থার হোমে পাঠানো হয়৷ পরে প্রত্যর্পণের কথা উঠতেই সে মায়ানমারের বদলে বাংলাদেশে যেতে চায়। তার দাবি, সে দেশের কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে তার মা-বাবা রয়েছেন।
কাছাড়ের পুলিশ সুপার বিএল মিনা জানান, প্রত্যর্পণের নীতি অনুসারেই তা সম্ভব নয়। কারও নিজের দেশ তাকে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হলেই প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। অন্য দেশকে তা বলা যায় না। গত ৩০ মার্চ কিশোরীকে শিলচর থেকে মণিপুরের আন্তর্জাতিক সীমান্ত মোরেতে নিয়ে গিয়েছিলেন অসম পুলিশের ৮ জনের একটি দল। মায়ানমার তাকে ফিরিয়ে নিলে এটিই হতো প্রতিবেশী রাষ্ট্রে সেনা অভ্যুত্থানের পর প্রথম প্রত্যর্পণ। কিন্তু মণিপুর সরকার মায়ানমারের তামু অঞ্চলের প্রশাসককে চিঠি পাঠিয়ে ভারতীয় রক্ষীদের গেটে বসে থাকার কথা জানালেও ও-প্রান্ত থেকে সাড়া মেলেনি। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রত্যর্পণের সম্মতির পরেও মায়ানমারের গেট না-খোলার ঘটনা এই প্রথম। তাতে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এ দিকে, মণিপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করার সময় মায়ানমারের অনেক শরণার্থীকেই ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তার প্রতিবাদ করল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন আইএইচআরএ। তারা বলে, মায়ানমারে যারা গুলি করে মানুষ মারছে আর প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা মানুষদের যারা ফের গুলির মুখে ঠেলে দিচ্ছে, দুই পক্ষই সমান অপরাধী। ভারতীয় সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা মেনে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া উচিত। সীমান্তে প্রহরারত আসাম রাইফেলসকে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে শরণার্থীদের ঢুকতে দেওয়ার আহ্বান জানায় তারা। নর্থ ইস্ট ডায়লগ ফোরাম কেন্দ্রীয় সরকার ও বিদেশ মন্ত্রককে চিঠি পাঠিয়ে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধ জানায়। উল্লেখ্য মণিপুর সরকার সম্প্রতি রাজ্যে মায়ানমারের শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া, শিবির খোলা নিষিদ্ধ করে বিবৃতি জারি করেছিল। কিন্তু তীব্র প্রতিক্রিয়া হওয়ায় পরের দিন সেই বিবৃতি প্রত্যাহার করা হয়। সীমান্তের ও-পারে তামু বাজারে মায়ানমার সেনার গুলিতে জখম তিন ব্যক্তিকে মণিপুরে এনে চিকিৎসা করা হচ্ছে।