মানুষের ইচ্ছেয় গড়েছি মূর্তি! দাবি মায়াবতীর

মায়াবতী জানিয়েছেন, তাঁর দলের প্রতীক বা নিজেকে মহিমান্বিত করার কোনও উদ্দেশ্য তাঁদের ছিল না।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

লখনউ শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৯ ০২:১১
Share:

২০০৯ সালের ২৯ মে উত্তরপ্রদেশ সরকার এবং মায়াবতীর বিরুদ্ধে শো-কজ নোটিস পাঠায় আদালত।

রাজ্যের পথে পথে তাঁর বিশাল বিশাল মূর্তি— ‘সবই জনতার ইচ্ছেয়!’ সুপ্রিম কোর্টে এমন যুক্তিই দিলেন বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) নেত্রী তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী।

Advertisement

উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টে হলফনামায় জানিয়েছেন, তাঁর নিজের এবং অন্য নেতাদের মূর্তি ও যত স্মারক রয়েছে, তার সবই বিভিন্ন সন্ত, গুরু, সমাজ সংস্কারক এবং বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য নেতার মূল্যবোধ ও মতাদর্শ প্রচারের লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছিল। মায়াবতী জানিয়েছেন, তাঁর দলের প্রতীক বা নিজেকে মহিমান্বিত করার কোনও উদ্দেশ্য তাঁদের ছিল না। হলফনামায় তিনি দাবি করেছেন, তাঁর মূর্তি তৈরি হয়েছিল বিধানসভার ইচ্ছেতেই, যা প্রকারান্তরে জনতার ইচ্ছেকেই প্রতিফলিত করেছে।

২০০৯ সালে এক আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলায় দাবি করেন, ওই বছরের রাজ্য বাজেট থেকে ২০০০ কোটি টাকা ব্যয় করে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী নিজের এবং তাঁর দলের প্রতীক ‘হাতি’র বিশাল মূর্তি তৈরি করেছিলেন। সেই মামলার শুনানিতেই হলফনামা দিয়ে বিএসপি নেত্রী ‘জনতার ইচ্ছে’র কথা বলেছেন।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

গত ৮ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, মায়াবতী জনতার যে অর্থ ব্যয় করে নিজের ও দলের প্রতীক ‘হাতি’র মূর্তি তৈরি করিয়েছেন, সেই অর্থ তাঁর ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ বলেছিল, ‘‘মায়াবতী ওই অর্থের পুরোটাই ফিরিয়ে দিন। এটাই আমাদের মত।’’ শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, জনতার টাকা দিয়ে নিজের মূর্তি গড়ে নিজের দলের প্রচার চালানো যায় না। যদিও সেই সময় মায়াবতী দাবি করেন, ওই হাতিগুলির মূর্তির শুঁড় তোলা। কিন্তু তাঁর দলের প্রতীকে যে হাতি রয়েছে, সেগুলির শুঁড় নামানো, তাই মূর্তি গড়ে প্রতীকের মাধ্যমে তিনি দলের প্রচার করছেন, এটা বলা যায় না।

২০০৯ সালের ২৯ মে উত্তরপ্রদেশ সরকার এবং মায়াবতীর বিরুদ্ধে শো-কজ নোটিস পাঠায় আদালত। লখনউ এবং দিল্লি লাগোয়া নয়ডাতেও বিভিন্ন পার্কে মায়াবতী ও তাঁর দলের প্রতীক হাতির মূর্তি গড়ে তোলা হয়েছিল।

২০১২ সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের দু’বছর আগে সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনকে একটি আবেদন খতিয়ে দেখতে বলেছিল। সংশ্লিষ্ট আবেদনে প্রকাশ্য স্থানে রাখা ওই সব মূর্তি সরানোর কথা বলা হয়েছিল। ২০১২ সালের ৭ জানুয়ারি কমিশন বলেছিল, ভোটের সময়ে মায়াবতী ও হাতিগুলির মূর্তি ঢেকে দেওয়া হবে, কেউ যাতে রাজনৈতিক সুবিধা না পায়।

২০০৯ সালে জনস্বার্থ মামলার শুনানির সময়ে শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, জনতার কোটি কোটি টাকা খরচ করে মূর্তি গড়ে উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতাসীন সরকার নিজেদের মহিমান্বিত করার চেষ্টা করেছে— আবেদনকারী সেই ব্যাপারে ক্ষোভ জানিয়েছেন। আবেদনকারী জানিয়েছেন, ৬০টি হাতির মূর্তি তৈরিতে ৫২ কোটি ২০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের সংস্কৃতি দফতরের বাজেটের প্রায় ৯০ শতাংশই খরচ করেছে মূর্তি তৈরির জন্য। এ ক্ষেত্রে শুধু জনতার অর্থ নষ্ট করা হয়নি, কমিশনের নির্দেশও মানা হয়নি। জনস্বার্থ মামলায় দাবি করা হয়েছিল, সরকারি নীতির মধ্যেই মূর্তি গড়ার বিষয়টিকে রাখা হয়েছে যা সংবিধান বিরোধী। সুপ্রিম কোর্ট তখন জানিয়েছিল, লক্ষ লক্ষ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বাস করেন। তাঁদের জীবনের মানোন্নয়নের জন্য রাখা অর্থ ‘বৈধ পদ্ধিতে’ মূর্তি আর পার্ক তৈরিতে ব্যয় করা যায় না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement