এই সভাতেই মেয়ের নাম বললেন কুণ্ঠাহীন মা। রয়েছেন শাবানা আজমি। বুধবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
ঠিক তিন বছর আগের কথা। এই দিল্লিতেই শীতের রাতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ করা হয়েছিল তাঁদের মেয়েকে। তার পর দেশ জুড়ে বিক্ষোভ-আন্দোলন-প্রতিবাদের ঝড়...। তাঁদের মেয়েকে ‘নির্ভয়া’ নাম দিয়েছিল দেশবাসী। কিন্তু নির্ভয়া কেন? ‘‘আমার মেয়ের নাম জ্যোতি সিংহ। আর ওঁর নাম বলতে আমি এতটুকু কুণ্ঠা বোধ করছি না।’’ —নির্ভয়াকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে আজ রীতিমতো গর্জে উঠলেন নিগৃহীতা তরুণীর মা আশা দেবী। বললেন, লজ্জা পাওয়া উচিত দোষীদের, নির্যাতিতাদের নয়। তবে তাঁরা নাম লুকোবেন কেন!
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে যন্তর মন্তরের সামনে ওই জনসভার আয়োজন করেছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। উদ্দেশ্য ছিল নির্ভয়াকে সম্মান জানানো। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন নির্ভয়ার মা-বাবা, আশা দেবী ও বদ্রী সিংহ পাণ্ডে দু’জনেই। কিছু বলার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল আশা দেবীকে। তখনই ক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রৌঢ়া। বললেন, ‘‘আজ আমি সবাইকে বলতে চাই, আমার মেয়ের নাম জ্যোতি সিংহ। আজ থেকে সবাই জানবে ওঁর নাম জ্যোতি সিংহ।’’ আশাদেবীর কথায়, ‘‘মেয়ের নাম জানাতে আমার কোনও লজ্জা নেই। এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের কারওরই নিজের নাম লুকোনো উচিত নয়। যারা অপরাধ করেছে, লজ্জা তাদের পাওয়া উচিত। নাম লুকোনো উচিত তাদের।’’
যদিও আগামী রবিবার, ১৯ ডিসেম্বর হয়তো মুক্তি দেওয়া হবে নাবালক অপরাধীকে। কমিশনের বক্তব্য, তিন বছরের শাস্তি কাটিয়ে আইন অনুযায়ী আগামী রবিবার অর্থাৎ ২০ ডিসেম্বর রিমান্ড হোম থেকে ছাড়া পাওয়ার কথা ওই অপরাধীর। এ প্রসঙ্গে আশা দেবী আজ বলেন, ‘‘ওঁর মৃত্যুর তিন বছরের মাথায় অপরাধীকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কী বিচার!’’ আরও বলেন, ‘‘আমি জানি না ওর বয়স ১৬ না ১৮। শুধু জানি, ও একটা নৃশংস অপরাধ করেছে। আর এমন অপরাধীর কোনও বয়স-সীমা হতে পারে না।’’
আজ ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাভেদ আখতার, শাবানা আজমি, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়। হাজির ছিল বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও। সকলেই ওই নাবালক অপরাধীর ফাঁসির দাবি জানিয়েছে। দিল্লির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছিলেন অসংখ্য মানুষ। মোমের আলোয় শ্রদ্ধা জানান তাঁরা। এক সময় যন্তর মন্তরের সামনে গোটা এলাকাটাই অন্য চেহারা নেয়।
নির্ভয়ার প্রসঙ্গ ওঠে সংসদেও। আজ এ নিয়ে সরব হন হেমা মালিনী। তাঁর দাবি, নাবালক অপরাধীকেও একই শাস্তি দেওয়া উচিত সরকারের। হেমার কথায়, ‘‘সে দিন ওই নাবালক ছেলেটি বাকিদের থেকে আরও বেশি নৃশংস অপরাধ করেছিল। পৈশাচিক মানসিকতা ওর। রিহ্যাবে পাঠিয়ে ওকে সংশোধন করা সম্ভব নয়। চরম শাস্তি দেওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে দেশের আইন-শৃঙ্খলাকে লোকে সমঝে চলে।’’