Mustard Oil

Mustard oil: ২০০ টাকা! পেট্রল, গ্যাসের পর এ বার সর্ষের তেলের দামের ঝাঁঝে চোখে জল বাঙালির

শুক্রবার কলকাতায় সর্ষের তেল বিক্রি হয়েছে ১৭৫ থেকে ২০০ টাকা কিলোগ্রাম দরে। এক লিটার প্যাকেটবন্দি ব্র্যান্ডেড তেলের দর আরও বেশি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:২৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

জ্বালানি তেলের দামে সেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছে আগেই। ন’শো পেরিয়ে হাজার টাকার দিকে পা বাড়াচ্ছে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার। আর এই সবের মধ্যে তুলনায় নিঃশব্দে ডাবল সেঞ্চুরি সেরে ফেলেছে সর্ষের তেল। রসিকতার ছলে অনেক বলছেন, ঝাঁঝে চোখে জল এলে, এত দিন তাকে ভাল আর খাঁটি সর্ষের তেল বলে মেনেছে বাঙালি। এ বার দামেও চোখে জল আসার পালা।

Advertisement

শুক্রবার কলকাতায় সর্ষের তেল বিক্রি হয়েছে ১৭৫ থেকে ২০০ টাকা কিলোগ্রাম দরে। এক লিটার প্যাকেটবন্দি ব্র্যান্ডেড তেলের দর আরও বেশি। জেলাতেও সর্ষের তেলের দাম ঘোরাফেরা করছে ২০০ টাকার আশেপাশেই। কেন্দ্রীয় সরকারের খাদ্য ও উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, গত দু’এক মাস ধরেই ভোজ্য তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। শুক্রবার কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় সর্ষের তেলের গড় দাম ছিল প্রতি কিলোগ্রামে ১৭৭ টাকা। অথচ এক বছর আগেও এই দিনে (২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর) সর্ষের তেলের গড় দাম ছিল ১২৬ টাকা। ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ১০০ টাকা। অর্থাৎ, মাত্র দু’বছরের মধ্যে সর্ষের তেলের দাম ৭৭ শতাংশ বেড়েছে!

এই তেল এখন এমনই মহার্ঘ যে, গত সপ্তাহে বিহারের মুজফ্ফরপুরে ট্রাক থেকে ডাকাতি হয়ে গিয়েছে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা মূল্যের সর্ষের তেলের প্যাকেট ও বোতল। বাইকে বা চার-চাকায় চড়তে গেলে পেট্রলের দামের কামড়। ডিজেলের দরের ছেঁকা অটোর ভাড়া থেকে আনাজের দাম সর্বত্র। রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার ‘বুক’ করলেই তৈরি রাখতে হচ্ছে ৯০০ টাকার বেশি। তার উপরে এ বার হেঁশেলের নিত্যপ্রয়োজনীয় সর্ষের তেলের দরও এমন আগুন হওয়ায় কার্যত মাথায় হাত নিম্ন ও মধ্যবিত্তের। সামনে পুজোর মরসুমে ভোজ্য তেলের দর আরও বাড়ার আশঙ্কা।

Advertisement

দাম কমবে কবে?

মোদী সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এখনই কোনও আশার আলো দেখাতে পারছেন না। আজ কেন্দ্রীয় খাদ্যসচিব সুধাংশু পাণ্ডে জানান, ডিসেম্বর থেকে দাম কমতে শুরু করবে। অর্থাৎ, আরও চার মাসের অপেক্ষা। তত দিন চড়া দামেই সর্ষের তেল কিনতে হবে সাধারণ মানুষকে। তাঁর যুক্তি, ডিসেম্বর থেকে নতুন শস্য আসতে শুরু করবে। আন্তর্জাতিক বাজারেও সর্ষের তেলের দাম কমার সম্ভাবনা। তবে বছর শেষেও এক ধাক্কায় অনেকখানি দাম কমে যাবে বলে মনে করছেন না তিনিও।

কেন বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণের রাস্তায় হাঁটছে না সরকার?

এ বিষয়ে সরকারি কর্তাদের মুখে কুলুপ। বিরোধীরা দুষছেন মোদী সরকারের নীতিকে। কংগ্রেসের অভিযোগ, কেন্দ্র সম্প্রতি অত্যাবশকীয় পণ্য আইনে সংশোধন করে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজের মতো ভোজ্য তেলকেও অত্যাবশকীয় পণ্যের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। নতুন আইন অনুযায়ী, পাঁচ বছরের গড় দামের তুলনায় ৫০ শতাংশের বেশি দাম বাড়লে একমাত্র তবেই সরকার হস্তক্ষেপ করবে। কংগ্রেস মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতে বলেন, ‘‘মোদী সরকারের ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিদের
মুনাফা লোটার সব রকম সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।’’

গত তিন-চার মাস ধরেই সর্ষে ও অন্যান্য ভোজ্য তেলের দাম বাড়ছে। শুক্রবার কলকাতায় সর্ষের তেল ১৭৫ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। উত্তরবঙ্গে দাম ১৭০-১৮০ টাকা। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামে ১৭০-১৯০ টাকা। বর্ধমান, বাঁকুড়ায় ১৮০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। পুরুলিয়ায় ১৭০-১৮৫ টাকা। পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়লে, কেন্দ্রীয় সরকারের বাঁধা যুক্তি, আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দর বৃদ্ধি। সর্ষের তেলের ক্ষেত্রেও মোদী সরকার বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে বলেই এ দেশে বেশি দাম গুনতে হচ্ছে সর্ষে ও অন্যান্য ভোজ্য তেলের জন্য।

দেশের বাজারে প্রয়োজনের ৬০% ভোজ্য তেলই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। গত এক বছরে ভোজ্য তেলের দাম ৬৪% বেড়েছে। পাণ্ডে বলেন, ‘‘আগাম পণ্য লেনদেনের বাজার দেখে মনে হচ্ছে, ডিসেম্বর থেকে খুচরো বাজারে দাম কমবে। তবে বিশ্ব বাজারের চাপ থাকার ফলে নাটকীয় পরিবর্তন হবে না।’’

আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ছে কেন? বলা হচ্ছে, বিভিন্ন দেশ ভোজ্য তেলের বদলে জৈব জ্বালানিতে নজর দিচ্ছে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশ ভারতে পাম তেল রফতানি করে। তারা পাম তেল থেকে জৈব জ্বালানি তৈরি করছে। আমেরিকাও সয়াবিন থেকে ভোজ্য তেলের পাশাপাশি জৈব জ্বালানি তৈরি করছে। ফলে পাম তেল, সয়া তেলের দাম বেড়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারের মতো ভারতে পাম তেল, সোয়া তেলের দাম বাড়েনি। কারণ, সরকার তাতে আমদানি শুল্ক কমিয়েছে।

কিন্তু পাম তেল, সয়া তেলের দাম না বাড়লে, সর্ষের তেলের বাড়বে কেন? কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর যুক্তি দিয়েছিলেন, গত তিন দশক ধরে সর্ষের তেলের মধ্যে পাম তেল ও ধানের তুষের তেল মেশানোর অনুমতি ছিল। সম্প্রতি তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাই সর্ষের তেলের দাম বেড়েছে। সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, বেসরকারি সংস্থাগুলি এক রকম ভোজ্য তেলের দাম বাড়লে, বাকি সব ভোজ্য তেলের দামও বাড়িয়ে দেয়। যাতে কেউ সর্ষের তেলের দাম বাড়লে অন্য তেল ব্যবহারে না ঝোঁকেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement