মন্দসৌর স্টেশনে গণপ্রহার।
আবার গোমাংসের গুজব। আবার হামলা সংখ্যালঘুদের উপর। রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পুলিশের হাত থেকে দুই মুসলিম মহিলাকে ছিনিয়ে নিয়ে বেধড়ক মারল এক দল লোক। প্ল্যাটফর্মে উপস্থিত অন্যেরা বাধা তো দিলেনই না। বরং মোবাইলে গণপ্রহারের ছবি তুললেন। পুলিশের ভূমিকাও মোটামুটি দর্শকের মতোই রইল। মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরের এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন মহলে। তবে গণপ্রহারে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে আক্রান্ত দুই মহিলাকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
দুই মহিলা প্রচুর পরিমাণ গোমাংস নিয়ে স্টেশনে ট্রেন ধরতে এসেছেন বলে পুলিশের কাছে নাকি খবর ছিল। গোমাংস বিক্রি করতে যাওয়ার জন্যই তাঁরা ট্রেন ধরতে গিয়েছেন বলে পুলিশ জানতে পারে। গোপন সূত্রে পাওয়া সেই খবরের ভিত্তিতে দুই মুসলিম মহিলাকে মন্দসৌর স্টেশন থেকে পুলিশ মঙ্গলবার গ্রেফতার করে। গোমাংস বহন করার অভিযোগে ওই দুই মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানতে পেরেই এক দল লোক অতিসক্রিয় হয়ে ওঠেন। পুলিশের হাত থেকে ওই দুই মহিলাকে কেড়ে নিয়ে শুরু হয় বেধড়ক মারধর। ঘুঁসি, চড়, লাথি চলতে থাকে। সঙ্গে অশ্রাব্য গালিগালাজ। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে সে সময় অনেকে ওই গণপ্রহারের দৃশ্য নিজেদের মোবাইলে রেকর্ড করতে শুরু করেন। তেমনই একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর জঘন্য ঘটনাটি সামনে এসেছে। সেই ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, গণপ্রহারকারীদের পুলিশ তেমন একটা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেনি। অন্তত আধ ঘণ্টা ধরে প্রবল মারধরের পর এক মহিলা প্রায় অচেতন হয়ে পড়ে যান। তার পর মার থামে।
আরও পড়ুন: অনশন ভেঙে বিয়ে করবেন চানু, লড়বেন ভোটেও
এর পর পুলিশ ওই দুই মহিলাকে নিয়ে স্টেশন থেকে চলে যায়। তাঁদের কাছ থেকে ৩০ কিলোগ্রাম মাংস উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু সেই মাংস পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তা গোমাংস নয়, মহিষের মাংস। মধ্যপ্রদেশে মহিষের মাংস খাওয়া বা বিক্রি করা নিষিদ্ধ নয়। তা সত্ত্বেও ওই দুই মহিলাকে কিন্তু মুক্তি দেওয়া হয়নি। প্রশাসনিক অনুমতি ছাড়াই মাংসের ব্যবসা করার অভিযোগে তাঁদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং মানবাধিকার সংগঠন এই ঘটনার তীব্র নিন্দা শুরু করায় বিবৃতি দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ। তিনি বলেছেন, ‘‘আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত হবে।’’ তবে গণপ্রহারকারীদের কারও বিরুদ্ধেই কোনও অভিযোগ এখনও দায়ের হয়নি।