ফরজ়ানা
চার বছর আগে ফরজ়ানাকে যখন তাঁর স্বামী আবদুল কাদির তিন তালাক দেয়, তখন ফরজ়ানা গর্ভবতী। এই চার বছরে আব্দুল একবারও ফরজ়ানার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। হঠাৎ করেই চার দিন আগে ফরজ়ানার কাছে ফোন আসে আব্দুলের। প্রথমে নিকা হালালা করে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব। না হলে, বস্তায় পুরে নালার জলে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি।
এই ফরজ়ানাই সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে নিকা হালালার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মুসলিমদের মধ্যে বহু বিবাহ প্রথা এবং নিকা হালালা-র
সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মামলা দায়ের করেছেন বুলন্দশহরের সিকান্দরাবাদের বাসিন্দা ফরজ়ানা। নিকা হালালা হল তিন তালাকের পরে ফের অন্য কারও সঙ্গে এক দিনের বিয়ে-সহবাসের পরে তালাক করিয়ে স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার প্রথা।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের তথ্য জানাতে নির্দেশ
২৩ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর বেঞ্চে ফরজ়ানার মামলার শুনানি হয়। আদালত কেন্দ্রের বক্তব্য জানতে চেয়ে অন্যান্য মামলার সঙ্গে এই মামলাটি সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছে। আজ দিল্লিতে ফরজ়ানা বলেন, ‘‘২৪ জুলাই আব্দুলের ফোন আসে। প্রথমে নিকা হালালার প্রস্তাব দেয়। বলে, সামশের নামে এক ৬৫ বছরের লোককে ও বাবা বলে মানে। আমাকে তাঁর সঙ্গে শাদি করতে হবে। তার পর সামশের আমাকে তালাক দিলে ও ফের শাদি করে আমাকে ঘরে ফিরিয়ে নেবে।’’
ফরজ়ানা রাজি হননি। চার বছরের মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতে থাকেন, বাবার তেমন রোজগার নেই, নিজে ছোটখাটো কাজ করে আয় করেন। তা সত্ত্বেও ফিরতে রাজি নন তিনি। তাঁর যুক্তি, আব্দুল ইতিমধ্যেই আর এক মহিলাকে বিয়ে করে সংসার করছে। পরে ফের আব্দুল ফোন করে জিজ্ঞাসা করে, কেন ফরজ়ানা নিকা হালালার বিরুদ্ধে কোর্টে গিয়েছেন। ফরজ়ানা বলেন, ‘‘মামলা প্রত্যাহার না করলে আমাকে বস্তায় পুরে নালায় ফেলে দেওয়ার হুমকি দেয় ও।’’ ফরজ়ানা আব্দুলের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর দায়ের করেছেন। ফরজ়ানার আইনজীবী বিবেক নারায়ণ শর্মা বলেন, ‘‘যখন সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে, তখন এই ধরনের হুমকি অবাঞ্ছিত।’’ ফরজ়ানাকে আইনি লড়াইয়ে এগিয়ে নিয়ে আসার জন্য উৎসাহ দিয়েছিলেন সমাজকর্মী সামিনা। তাঁর যুক্তি, আব্দুল যখন নিকা হালালার মামলা প্রত্যাহারের হুমকি দিচ্ছে, তখন তার পিছনে নিশ্চয়ই অন্য কেউ রয়েছে।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেত্রী সাধ্বী প্রাচী আজ মন্তব্য করেছেন, ‘‘মুসলিম মহিলারা যদি হিন্দু ছেলেদের বিয়ে করেন, তা হলে তাঁরা সহজেই নিকা হালালা বা তিন তালাকের মতো প্রথা এড়িয়ে যেতে পারবেন।’’ মথুরায় এক সাংবাদিক বৈঠকে সাধ্বী প্রাচী জানান, ফরজ়ানার মতো যে সব মুসলিম মহিলা এই কুপ্রথার শিকার হয়েছেন, তাঁদের তিনি হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য অনুরোধ করবেন।