সপরিবার: বিয়ের পরে রাজেশ্বরী ও বিষ্ণুপ্রসাদ। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া
ধর্ম বা রক্ত কোনও কিছুই এসে দাঁড়ায়নি বাবা-মা আর পালিত মেয়ের সম্পর্কের মাঝখানে। তাই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি ধর্মীয় উপাচারও। আগেও, পরেও। এমনকি সেই মেয়ের বিয়ের সময়েও।
সম্প্রতি এমনই মানবতার সাক্ষী রইল কেরলের কাসারগড়। আর পাঁচ জন বাবা-মায়ের মতোই মেয়ের বিয়েতে কার্পণ্য করতে চাননি কানহাগড় এলাকার বাসিন্দা আবদুল্লা ও খাদিজা। সম্প্রতি পুদিয়াকোটার বাসিন্দা বিষ্ণুপ্রসাদের হাতে ২২ বছরের মেয়ে রাজেশ্বরীকে তুলে দিয়েছেন তাঁরা। গোটা অনুষ্ঠানটাই হয়েছে মন্দিরে, হিন্দু উপাচার মেনেই।
বছর বারো আগের কথা। তাঞ্জাভুরের বাসিন্দা বছর সাতেকের রাজেশ্বরী এসে পড়েছিল আবদুল্লা-খাদিজার বাড়িতে। কাসারগড়ের মেলপারাম্বা এলাকায় মালবাহকের কাজ করতেন রাজেশ্বরীর বাবা সর্বানন। বার কয়েক আবদুল্লার জমিতে কাজও করেন তিনি। সেই সর্বানন মারা যান। বাবার মৃত্যুর পরে আর কোথাও যাওয়ার ছিল না রাজেশ্বরীর। কাজ চেয়ে আবদুল্লার বাড়িতে এসেছিল সে।
সেই থেকে ওই বাড়িতেই থেকে যান রাজেশ্বরী। তবে পরিচারিকা হিসেবে নয়, আবদুল্লা-খাদিজার চতুর্থ সন্তান হিসেবে। মুসলিম পরিবারের সদস্য হয়ে উঠতে অসুবিধা হয়নি হিন্দু রাজেশ্বরীর। তিন ছেলে শামিম, নজীব ও শরিফের পরে মেয়ে পেয়ে খুশি হয়েছিলেন আবদুল্লা-খাদিজাও।
মেয়েকে সৎপাত্রস্থ করা যে কোনও বাবা-মায়েরই দায়িত্ব, এমনটাই মনে করেন আবদুল্লা। তাই রাজেশ্বরীর বিয়ের সমস্ত দায়িত্ব মন-প্রাণ দিয়ে পালন করেছেন তাঁরা দু’জনে। কাসারগড়ের মান্যত মন্দিরে আয়োজন হয়েছিল বিয়ের অনুষ্ঠানের। সেখানেই বালচন্দ্রন ও জয়ন্তীর ছেলে বিষ্ণুপ্রসাদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন রাজেশ্বরী।
এই অস্থির সময়ে দাঁড়িয়ে ধর্মের উপরে উঠে যে ভাবে মানবতার কথা বলতে পেরেছেন আবদুল্লা-খাদিজা, অনেকেই তাতে আশার আলো দেখছেন।