Karnataka

Karnataka college: ‘কাঁদিনি, আল্লার নাম নিয়ে সাহস ফিরে পাই’, বলছেন কর্নাটকের একা প্রতিবাদী মুসকান

দেশ তাঁকে ভয় পেতে দেখেনি। তবে তিনি বলছেন, ‘‘সে দিন ওই ভিড়ের দিকে তাকিয়ে আমি ভিতরে ভিতরে ভয় পেয়েছিলাম। আমি ভয় পেলে আল্লার নাম নিই।’’

Advertisement

চৈতালি বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৫:২৯
Share:

প্রতিবাদী মুসকান।

তাঁকে তাড়া করেছিল গেরুয়া উত্তরীয় পরা যুবকদল।

Advertisement

তিনি বলছেন, ‘‘আমি কিন্তু কাঁদিনি।’’

কাঁদেননি, প্রতিবাদ করেছেন, একাই।

Advertisement

দেশ তাঁকে ভয় পেতে দেখেনি।

তবে তিনি বলছেন, ‘‘সে দিন ওই ভিড়ের দিকে তাকিয়ে আমি আল্লা হু আকবর বলি। কারণ, আমি ভিতরে ভিতরে ভয় পেয়েছিলাম। আমি ভয় পেলে আল্লার নাম নিই। আল্লার নাম নিলে সাহস ফিরে পাই।’’ (ম্যয় যব আল্লা কা নাম লেতি হুঁ, মুঝকো হিম্মত আতি হ্যায়) ফোনে বলছিলেন কর্নাটকের বি.কম অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মুসকান খান।

মঙ্গলবার মাণ্ড্য প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজের একটি ভিডিয়ো নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে দেখা যায়, হিজাব-বোরখা পরিহিত এক কলেজ ছাত্রীর দিকে তেড়ে যাচ্ছে গেরুয়া উত্তরীয় পরিহিত একদল যুবক, সঙ্গে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি। সেখানে বিন্দুমাত্র ভয় না পেয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেখা গিয়েছিল একা এক ছাত্রীকে। তার পর থেকেই খবরের শীর্ষে কর্নাটকের কলেজ পড়ুয়া মুসকান খান।

বৃহস্পতিবার মাণ্ড্যের বাড়িতে ফোনে মুসকানকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি পড়াশোনা করতেই কলেজে গিয়েছিলাম। এত বাধার পরেও ভেবেছিলাম, সোজা ক্লাসে ঢুকে যাব। কিন্তু ওই ভিড়ে যারা ছিল, তাদের মানবিকতা বলতে কিছু ছিল না। আমার পিছনে এসে এমন চিৎকার শুরু করে, বাধ্য হয়েই প্রতিবাদ করি।’’

মুসকান জানাচ্ছেন, সে দিন তিনি আসাইনমেন্ট জমা দিতে কলেজে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে দরজা থেকেই আটকে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বোরখা-হিজাব খুলে কলেজে ঢুকতে হবে, নয়তো বাড়ি ফিরে যাও— এমন দাবি ছিল গেরুয়া-ভিড়ের। সেই সময়ে ভিতরে ভিতরে ভয় পেলেও পিছপা হননি মুসকান। পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।

মুসকানের সাহসিকতাকে বাহবা জানিয়েছে নেটমাধ্যম। বৃহস্পতিবার ফোনে তাঁর বাবার প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমার মেয়ে বাহাদুর। ওর খুব সাহস। কোনও কিছুতে সহজে ওকে ভয় পাওয়ানো যায় না। তাই ওর এই কাজে আমি একটুও অবাক হইনি।’’

মুসকানের বাবা মহম্মদ হুসেন খান জানান, ওই ঘটনার পর থেকে এখনও মুসকান বাড়ির বাইরে পা রাখেননি। যদিও ওই ঘটনা নিয়ে পুলিশে লিখিত কোনও অভিযোগ করেননি তাঁরা। মুসকানের বাবার কথায়, ‘‘ওই ভিড়ে বেশির ভাগই বহিরাগত। কয়েক জন ছেলে মুসকানের সহপাঠী, ওই কলেজের ছাত্র। সামনেই পরীক্ষা শুরু হচ্ছে, থানা-পুলিশ করে আমি ওই ছাত্রদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে চাই না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমি নিজেও ওই কলেজ থেকে পড়াশোনা করেছি। কখনও দেখিনি মেয়েদের বোরখা পরে ক্লাস করা নিয়ে কোনও ঝামেলা হয়েছে। আজ হঠাৎ এই বিষয়টি কেন শিক্ষাক্ষেত্রে চর্চায় এল, বুঝতে
পারছি না।’’

তিন ভাই-বোনের মধ্যে বড় মুসকান। ছোট বোন স্নাতক স্তরে বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। দিদির সাহস দেখে উৎসাহিত হয়েছেন তিনিও, জানাচ্ছেন মুসকান। তাঁর কথায়, ‘‘আমি কলেজের ক্লাসরুমে বোরখা পরি না, গাড়িতেই খুলে রাখি। ক্লাসে হিজাব পরে শুধু চুলটুকু ঢেকে রাখি। কিন্তু সে দিন বহিরাগতেরা যে ভাবে আমায় কলেজে ঢুকতেই দিচ্ছিল না, বার বার বোরখা খোলার কথা বলছিল, আমায় জোর করে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছিল, তাতেই জেদ চেপে যায়।’’

ঘটনার পর থেকে টানা দু’দিন ধরে সাক্ষাৎকার, বাড়িতে সাংবাদিক, শুভানুধ্যায়ীদের আনাগোনা। খানিক অসুস্থও হয়ে পড়েছেন মুসকান। তাই বাবার অনুরোধ, ‘‘ওর এ বার একটু বিশ্রাম চাই। অনেকে আসছেন মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে, কথা বলতে। ওর কাজে খুশি হয়ে অনেকে পুরস্কৃত করছেন। তবে সোমবার থেকে ওর পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। পড়াশোনায় মনোযোগ ফেরাতে খানিক বিশ্রাম দরকার এ বার।’’

বোরখা পরে থাকায় তাঁর আগে আরও চার ছাত্রীকে কলেজে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়, তাঁরা ভয় পেয়ে কান্নাকাটি করেন, এমনটাই বলছিলেন মুসকান। শেষ পর্যন্ত কলেজের অধ্যক্ষের হস্তক্ষেপে সকলে ভিতরে আসেন। মুসকান বলেন, ‘‘ওরা ভয় পেয়ে কান্নাকাটি করছিল, আমি কাঁদিনি।’’

না, তিনি কাঁদেননি। এবং ওই ঘটনার পরও কলেজ শেষে একাই বাড়ি ফিরেছিলেন মুসকান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement