প্রতীকী ছবি।
আলিগড়ের আড়াই বছরের মেয়েটাকে নিয়ে দেশ এখন তোলপাড়। যেমন হয়েছিল গত বছর জানুয়ারিতে, জম্মু-কাশ্মীরের কাঠুয়ায় আট বছরের শিশুকন্যাকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগকে কেন্দ্র করে।
গত রবিবার উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ের তপ্পল এলাকায় পুলিশ উদ্ধার করে তিন দিন আগে নিখোঁজ হওয়া শিশুকন্যার পচা-গলা দেহ। নিহতের দুই প্রতিবেশী যুবক জাহিদ ও আসলামকে গ্রেফতারও করা হয়। তবে ‘ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি’ বলে পুলিশ দাবি করলেও, এ নিয়ে ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ছড়িয়েছে এক সাংবাদিকের টুইট করা নিহতের ‘অ্যান্টিমর্টেম ইনজুরি’ (মৃত্যুর সময়ে বা আগে তৈরি ক্ষত) সংক্রান্ত রিপোর্টও। যাতে মেয়েটির একাধিক অঙ্গহানি, পোকায় কুরে খাওয়া শরীর, কাঁধ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া হাত, ভাঙা পায়ের কথা রয়েছে। যা নিয়ে নিন্দায় সরব হয়েছেন আম নেটিজ়েন থেকে শুরু করে বলিউড, রাজনীতির তাবড় মুখ। অনুপম খের, জাভেদ আখতারের কথায়, ‘‘প্রকাশ্য রাস্তায় ফাঁসিকাঠে ঝোলাতে হবে খুনিদের।’’
যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে এমন ঘটনা প্রসঙ্গে সরব কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীও আজ টুইটারে লেখেন, ‘‘আলিগড়ের শিশুকন্যার বর্বরোচিত খুনের ঘটনায় আমি মর্মাহত। এক রত্তি শিশুর সঙ্গে কী ভাবে কেউ এমন নৃশংস আচরণ করতে পারে? অপরাধীদের দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা উচিত পুলিশের।’’ বিষয়টিকে ‘অবর্ণনীয়’ এবং ‘পাশবিক’ আখ্যা দিয়ে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার টুইট— ‘‘বাচ্চাটার মা-বাবার যন্ত্রণার কথা ভাবতেও পারছি না।’’ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে সুর চড়িয়েছেন বিএসপি নেত্রী মায়াবতী। তাঁরা ‘বিরক্ত’ এবং ‘ক্রুদ্ধ’ বলে জানিয়েছেন অভিষেক বচ্চন, অক্ষয় কুমার। পুলিশ জানিয়েছে, ১০ হাজার টাকা ধারের জেরে এই কাণ্ডটি ঘটিয়েছেন জাহিদ। অভিযুক্তের পরিবারের সবাইকে গ্রেফতার করা না-হলে কাল থেকে আমরণ অনশনের হুমকি দিয়েছেন শিশুটির বাবা।
গোড়ায় মেয়েটির নিখোঁজ ডায়েরি নিয়ে পুলিশি তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল। কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে পাঁচ পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে তদন্ত চলছে। এখনও পর্যন্ত পকসো আইনে মামলা না হলেও, এতে জাতীয় সুরক্ষা আইনের ধারা জুড়েছে পুলিশ। এই আইনে
অভিযুক্তদের এক বছর পর্যন্ত হেফাজতে রাখা যায়। আলিগড়ের এসএসপি আকাশ কুলহারি জানিয়েছেন, ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচারের জন্য তদন্ত প্রক্রিয়া দ্রুত করা হচ্ছে। আজ তাঁর কাছে ঘটনার রিপোর্ট চেয়েছে জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন। মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ অবশ্য এখনও নীরব।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনা নিয়ে চর্চার চাপে পুলিশ নড়েচড়ে বসেছে ঠিকই। কিন্তু তার পর থেকেই ঘটনার নানা বিবরণ নিয়ে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘গুজব ছড়াচ্ছে’ বলে সতর্ক করেছেন ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট ‘অল্ট নিউজের’ প্রধান প্রতীক সিন্হা।
মেয়েটির পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, খুনের আগে ধর্ষণ এবং ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়েছিল মেয়েটিকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ায় মেয়েটির গায়ে অ্যাসিড ঢালার কথাও। আলিগড়ের এসএসপি দু’টি সম্ভাবনাই খারিজ করেছেন। আজ টুইটারে ভিডিয়ো-বার্তায় তিনি বলেন, ‘‘ময়না-তদন্তের রিপোর্টে ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি। গলা টিপে খুন করা ছাড়া আর কোনও দুষ্কর্মই হয়নি।’’
তা হলে কোনটা ঠিক? সত্যিটা কী? নেটিজ়েনের এক অংশ কিন্তু বলছেন, ‘‘ঘটনার বিবরণ কতটা সত্য, কতটা নয়, সেটাই বড় হল? মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য এক রত্তিকে খুন করাই কি যথেষ্ট অপরাধ নয়? চরম শাস্তি হোক দোষীদের।’’