মরিস এবং অভিষেক (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
এক জন সমাজকর্মী থেকে রাজনীতিক হতে চাওয়া মরিস ‘ভাই’ পরিকল্পনা করেই খুন করেছেন উদ্ধবপন্থী শিবসেনা নেতা অভিষেক গোসালকারকে? সেই ‘ব্লু প্রিন্ট’ তৈরি করা হয়েছিল অনেক দিন আগেই? অন্তত তেমনই দাবি উঠছে বিভিন্ন সূত্রে। এক সময়ের ঘনিষ্ঠ মরিস নোরোনহার বিরুদ্ধে অভিষেককে গুলি করে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। তার পর নিজেও আত্মঘাতী হয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
বেশ কয়েকটি সূত্রের দাবি, ঘটনার সূত্রপাত পুরসভার এক ওয়ার্ডে নির্বাচনী লড়াই নিয়ে। পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন মরিস। কিন্তু তাঁর এই ইচ্ছার বিরোধিতা করেছিলেন অভিষেক। ওই ওয়ার্ডে আবার অভিষেক প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। স্থানীয় কয়েকটি সূত্রের দাবি, সমাজকর্মী হিসাবে মরিসের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি ছিল। ফলে সেটিকেই কাজে লাগিয়ে রাজনীতিতে অংশ নিতে চেয়েছিলেন তিনি। ঘটনাচক্রে, অভিষেক যে ওয়ার্ডে প্রার্থী হওয়ার তোড়জোড় করছিলেন, ওই ওয়ার্ড থেকেই নির্বাচনে লড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন মরিস।
কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই মরিসের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এর জন্য পাঁচ মাসের জেলও খাটেন তিনি। মরিসের সন্দেহ ছিল, নির্বাচনী লড়াই থেকে তাঁকে সরাতে তাঁর ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করার ‘মূল চক্রী’ ছিলেন তাঁরই ঘনিষ্ঠ অভিষেক। পুলিশের এক সূত্রের দাবি, এই ঘটনার পর অভিষেককে পাল্টা চ্যালেঞ্জের রাস্তায় হাঁটেননি মরিস। বরং তিনি অভিষেককে বুঝিয়ে দেন এই নির্বাচনী লড়াই থেকে তিনি সরে দাঁড়াচ্ছেন। শুধু তাই-ই নয়, অভিষেকের হয়ে প্রচার করেন, ব্যানার টাঙান মরিস। তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল এই সব কাজের মধ্যে দিয়ে অভিষেকের ভরসা অর্জন করা এবং এটা বোঝানো যে, নির্বাচনী লড়াই নিয়ে দু’জনের সম্পর্কের যে টানাপড়েন চলছিল, তাতে তিনি নিজেই ইতি টানলেন। এমনকি অভিষেককে দীর্ঘ একটি বার্তা পাঠিয়ে মরিস জানিয়েও দেন, এই নির্বাচনে তাঁর কোনও আগ্রহ নেই।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, নিজের কাজ দিয়ে অভিষেকের ভরসা অর্জন করেছিলেন মরিস। আর সেই ভরসাই কাল হল। ঘটনার দিন ফেসবুক লাইভের পরিকল্পনা ছিল মরিসেরই। ওই লাইভের মধ্যে দিয়েই মরিস অনুগামীদের বার্তা দিতে চেয়েছিলেন যে, অভিষেক এবং তাঁর মধ্যে কোনও গন্ডগোল নেই। কিন্তু অভিযোগ, সেই ফেসবুক লাইভ চলাকালীনই অভিষেককে গুলি করেন মরিস। তার পর সেখানেই নিজের মাথায় গুলি করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বন্দুক জ্যাম হয়ে যায়। তার পর দ্বিতীয় বারের চেষ্টায় নিজের মাথায় গুলি চালান। পুলিশ জানিয়েছে, দেহরক্ষী অমরেন্দ্র মিশ্রের বন্দুক ব্যবহার করেছিলেন মরিস। অস্ত্র আইনে মরিসের দেহরক্ষীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তদন্তকারী এক আধিকারিক জানিয়েছেন, অভিষেককে লক্ষ্য করে ছয় রাউন্ড গুলি চালিয়েছিলেন মরিস। যার মধ্যে পাঁচটি গুলি লেগেছিল তাঁর।