ভেঙে পড়েছে জীর্ণ সেতু। নিখোঁজদের খোঁজে চলছে তল্লাশি অভিযান। বুধবার মহারাষ্ট্রের মহাড়ে। ছবি: এপি।
সাবিত্রী নদীর উপরে সেতুটি ছিল মুম্বই-গোয়া জাতীয় সড়কের অংশ। তিন মাস আগেই জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ‘নিরাপদ’ তকমা দিয়েছিলেন এটিকে। কাল রাতে ‘নিরাপদ’ সেই সেতু ভেঙে তলিয়ে গেল যাত্রীবোঝাই এক জোড়া বাস। নিখোঁজ তার ২২ আরোহী। আজ দু’জনের দেহ উদ্ধার হলেও মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। কারণ, ব্রিটিশ আমলের সেতুটির প্রায় পুরোটাই ভেসে গিয়েছে বর্ষায় ফুলে ফেঁপে থাকা সাবিত্রী নদীতে। এবং ঘটনার সময় শুধু রাজ্য পরিবহণের বাস দু’টি নয়, আরও কিছু গাড়ি ছিল সেতুতে। যার সংখ্যা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নয় প্রশাসন।
ঘটনাস্থল মুম্বই থেকে ১৭০ কিলোমিটার দূরে, রায়গড় জেলার মহাড়ের কাছে। কাল রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ সেতু দিয়ে জয়গড় থেকে মুম্বইয়ের দিকে আসছিল একটি বাস। অন্যটি রাজাপুর থেকে যাচ্ছিল বোরিভলী। সেতু ভেঙে দু’টিই ভেসে যায় প্রবল স্রোতে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, সেতুতে আরও গাড়ি ছিল। গত কাল রাতে জানা গিয়েছিল, নিখোঁজ অন্তত ২২ জন। আজ সকালে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে দু’জনের দেহ খুঁজে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। বেসরকারি সূত্রে দাবি, মারা গিয়েছেন অন্তত ২৯ জন। আশঙ্কা, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
কাল রাতে সেতু ভাঙার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর চারটি দল। যান পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারাও। কিন্তু টানা বৃষ্টি, নদীর প্রবল স্রোত ও অন্ধকারের কারণে উদ্ধারের কাজ চালাতে বেশ বেগ পেতে হয়। পুরো দমে উদ্ধারকাজ শুরু হয় আজ সকালে। তল্লাশি অভিযানে নামে উপকূলরক্ষী বাহিনীর একটি চেতক হেলিকপ্টার। খোঁজ শুরু করে নৌবাহিনীর দু’টি হেলিকপ্টারও।
কী কারণে এই দুর্ঘটনা?
মহাড়, মহাবালেশ্বর, কোঙ্কণ, পোলাদপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় গত কয়েক দিন ধরেই ভারী বৃষ্টিপাত চলছে। তার জেরে ফুঁসছিল সাবিত্রী। প্রবল জলের তোড়েই ভেঙে পড়েছে সেতুটি। অনেকে অবশ্য বলছেন, সেতুটির বয়সই ভেঙে পড়ার মূল কারণ। ব্রিটিশরা ১৯২৮ সালে এটি তৈরি করেছিল। এই ৮৮ বছর ধরেই যে নিরন্তর এর রক্ষণাবেক্ষণ হয়েছে, তা-ও নয়। ফলে এমনিতেই জীর্ণ হয়ে পড়েছিল সেতুটি।
জেলা প্রশাসনের যদিও দাবি, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এবং একটি ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা চলতি বছরের মে মাসেই সেতুটির হাল-হকিকত খতিয়ে দেখে ‘নিরাপদ’ তকমা দিয়েছিল। ফলে প্রশ্ন উঠছে, বর্ষায় নদীর খরস্রোতের ধাক্কা সামলাতে পারল না যে সেতু, সেটিকেই কী ভাবে ‘নিরাপদ’ বলে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল মাত্র তিন মাস আগে? ওই সেতুর পাশেই ২০০১ সালে তৈরি হয়েছে নতুন একটি সেতু। পুরনোটি ‘নিরাপদ’ তকমা না পেলে শুধু নতুনটিই ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হতো। তাতে নতুন সেতুতে চাপ বাড়লেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যেত না। গত কালের অঘটনের পরে আজ নতুন সেতু দিয়েই দুই মুখে যান চলাচল শুরু হয়েছে।
শিবসেনা নেতা বিনায়ক রাউত আজ রাজ্যসভায় এই প্রসঙ্গ তোলেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওই সেতুটির জীর্ণ দশা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে কেন তা ব্যবহার করা হচ্ছিল? যেখানে ওই সেতুর পাশেই রাজ্য সরকারের তৈরি আর একটি সেতু রয়েছে।’’ এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তার জন্য তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রিপোর্ট পেশের দাবি জানিয়েছেন।
কেন এই অঘটন ঘটল, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস। তিনি টুইটারে আজ লেখেন, ‘‘মহাড়ে সেতু ভেঙে পড়ে নিখোঁজ রাজ্য পরিবহণ দফতরের দু’টি বাস। দুই বাসের দুই চালক ও দুই কন্ডাক্টর এবং ১৮ জন যাত্রীর কোনও খোঁজ নেই।’’ পাশাপাশি, ফডণবীস এ-ও জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে তাঁর। উদ্ধার ও ত্রাণের কাজে সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন মোদী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহও সংসদে জানান, উদ্ধার কাজে কেন্দ্র রাজ্য প্রশাসনকে সাহায্য করছে।