মহালক্ষ্মী। — ফাইল চিত্র।
বেঙ্গালুরুর ফ্ল্যাটের ফ্রিজ থেকে উদ্ধার হয়েছিল তরুণীর টুকরো করা দেহ। তাতে দিল্লির শ্রদ্ধাকাণ্ডের ছায়া দেখেছিলেন সাধারণ মানুষ, সংবাদমাধ্যম থেকে তদন্তকারীরা। বেঙ্গালুরু পুলিশ মনে করছে, শ্রদ্ধাকাণ্ডের উপর আধারিত সিরিজ় দেখেই মহালক্ষ্মীর দেহ টুকরো করার ছক কষেছিলেন অভিযুক্ত মুক্তিরঞ্জন রায়। সমাজমাধ্যমে সে সব ভিডিয়ো দেখেছেন বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। ওড়িশার ভদ্রকে অভিযুক্তের ঝুলন্ত দেহ পেয়েছে পুলিশ। মিলেছে সুইসাইড নোটও।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, মহালক্ষ্মীকে খুন করে প্রায় ৫৯টি টুকরো করা হয়েছিল দেহ। তার পর তা ফ্রিজে পড়েছিল প্রায় ১৮দিন। অভিযোগ, বাজার থেকে মাংস কাটার ছুরি কিনে এনে দেহ টুকরো করেছিলেন মুক্তিরঞ্জন। দিন কয়েক পর বেঙ্গালুরু থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, গত ছ’মাস ধরে সম্পর্কে ছিলেন মহালক্ষ্মী এবং মুক্তিরঞ্জন। যদিও সেই সম্পর্ক খুব একটা মসৃণ ছিল না। প্রায় দিনই ঝগড়া হত। এক অপরকে মারধর করতেন বলেও অভিযোগ। মহালক্ষ্মী যে ফ্ল্যাটে থাকতেন, তার সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দু’জন ঝামেলা করতেন বলে খবর। সেই বিবাদ গড়িয়েছিল স্থানীয় থানা পর্যন্ত। পুলিশের হস্তক্ষেপে বার কয়েক মিটেছিল সমস্যা।
পুলিশ মনে করছে, ৩ সেপ্টেম্বর রাতে খুন করা হয়েছিল মহালক্ষ্মীকে। ওই রাতে তাঁর এক কামরার ফ্ল্যাটে এসেছিলেন মুক্তিরঞ্জন। দু’জনের মধ্যে আবার ঝামেলা হয়েছিল। তাঁকে বিয়ের জন্য চাপ মহালক্ষ্মী দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। মহালক্ষ্মী বিবাহিত ছিলেন। তাঁর এক কন্যাসন্তানও রয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে স্বামী হেমন্তের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছিল তাঁর। হেমন্ত পুলিশকে জানিয়েছেন, আশরফ নামে এক যুবকের সঙ্গে মহালক্ষ্মীর সম্পর্ক থাকার কারণে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়েছিল। মহালক্ষ্মীর বিয়ে, বিচ্ছেদের কথা জানতেন মুক্তিরঞ্জন। পুলিশ জানতে পেরেছে, মুক্তির সন্দেহ ছিল, আরও অনেকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল মহালক্ষ্মীর। সে কারণে, তাঁকে বিয়ে করতে চাননি। তদন্তকারী আধিকারিক জানিয়েছে, মহালক্ষ্মীর মোবাইলে অন্য পুরুষের সঙ্গে তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ ছবি দেখেছিলেন মুক্তি। এমনকি, তাঁর ভাই স্মৃতিরঞ্জন রায়ের সঙ্গেও ছবি দেখেছিলেন। তাতে আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। স্মৃতিরঞ্জন বেঙ্গালুরুতেই থাকতেন। খুনের পর ভাইকে সব কথা জানিয়েছিলেন মুক্তি। তাঁর থেকে টাকাও ধার নিয়েছিলেন। সেই স্মৃতিরঞ্জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। মহালক্ষ্মী কথায় কথায় রেগে যেতেন, মারধর করতেন বলেও সুইসাইড নোটে অভিযোগ করেছেন মুক্তি। খুনের কথা তিনি স্বীকারও করেছেন। লিখেছেন, টাকার দাবি করতেন মহালক্ষ্মী। আর সামলাতে পারছিলেন না। সে কারণে খুন করেন।