akhilesh yadav

Uttar Pradesh: নিয়ন্ত্রণমুক্ত তেল: বাবার ‘ব্যর্থতায়’ খেসারত ছেলের

বাবা চেষ্টা করেছিলেন। পুরোপুরি সফল হননি। তার খেসারত কি ছেলেকে দিতে হবে!

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২২ ০৬:১০
Share:

দিল্লির রাজনীতিকদের আড্ডায় এখন মুলায়ম সিংহ যাদব ও ছেলে অখিলেশ যাদবের কাহিনী

উত্তরপ্রদেশের ভোট আর তেলের দাম নিয়ে দিল্লির রাজনীতিকদের আড্ডায় এখন মুলায়ম সিংহ যাদব ও ছেলে অখিলেশ যাদবের কাহিনী।

Advertisement

বিরোধীদের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোটের জন্যই গত চার মাস পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বাড়েনি। প্রমাণ না থাকলেও, বিরোধী শিবিরের প্রায় সকলেই নিশ্চিত, নরেন্দ্র মোদী সরকারই রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলিকে ওই দাম বাড়াতে দেয়নি। অখিলেশ যাদব যাতে বিজেপিকে হারিয়ে লখনউয়ের তখ্‌তে ফিরতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা। যাতে কোনও ভাবেই তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে বিজেপিকে ক্ষোভের খেসারত দিতে না হয়। খাতায়-কলমে তেলের দাম তেল সংস্থা ঠিক করলেও, আসলে যে সরকারই নিয়ন্ত্রণ করে, অনেকের মতে, এই ঘটনায় তা ফের প্রমাণিত।

প্রবীণ রাজনীতিকরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পেট্রল-ডিজ়েলের দামকে সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে এক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন অখিলেশের বাবা মুলায়ম। দিল্লিতে তখন যুক্তফ্রন্টের সরকার। প্রধানমন্ত্রীর গদিতে ইন্দ্রকুমার গুজরাল। আর মুলায়ম প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সেই সময়ে কেন্দ্রই পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বেঁধে রাখত। যে ব্যবস্থা চালু করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।

Advertisement

তেল মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, ‘‘সত্তরের দশকে ইজ়রায়েল ও তার সহযোগী দেশগুলিকে চাপে ফেলতে আরব দেশগুলি তেলের জোগান নিয়ে প্যাঁচ কষতে শুরু করে। অশোধিত তেলের দামের ওঠা-নামা সামলাতে ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭৫ সালে সিদ্ধান্ত নেন, সরকারই তেলের দাম নিয়ন্ত্রণ করবে। পি ভি নরসিংহ রাও এই ব্যবস্থা বদলের চেষ্টা করলেও, সফল হননি। গুজরাল সরকারের আমলে ১৯৯৭ সালে ঠিক হয়, ২০০২ থেকে তেলের দাম পুরোপুরি সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে ফেলা হবে।’’ প্রবীণ রাজনীতিকরা বলছেন, গুজরাল প্রধানমন্ত্রী হলেও, নিজে এ বিষয়ে সংশয়ে ছিলেন। কিন্তু তাঁর অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মুলায়ম সিংহ যাদব জোরালো দাবি তোলেন, তেলের দাম সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়া উচিত।

গুজরাল সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও, তা রূপায়ণ করতে পারেনি। মনমোহন সরকার ২০১০-এ পেট্রলের দাম সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে। মোদী সরকার ক্ষমতায় এসে ডিজ়েলের দামও সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে দেয়। তেল মন্ত্রকের কর্তারা মানছেন, বাস্তবে অবশ্য সরকারের হাতেই রাশ থেকে গিয়েছে। যার নমুনা হল, উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটের জন্য গত বছরের ৪ নভেম্বরের পর থেকে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম আর বাড়েনি।

সমাজবাদী পার্টির নেতারা বলছেন, বাজপেয়ী সরকারের আমলে মুলায়ম তেল মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। সেই সময়েও তাঁর নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটি সুপারিশ করেছিল, তেল সংস্থাকে পেট্রল-ডিজ়়েলের দাম নির্ধারণে পুরোপুরি স্বাধীনতা দেওয়া হোক। যাতে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি সরকারি মালিকানাধীন হলেও, এমনকি ঘুরপথে কেন্দ্র তেলের দর নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। সেই স্বাধীনতা থাকলে, এখন মোদী সরকার অখিলেশকে ঠেকাতে ঘুরপথে তেলের দাম কৃত্রিম ভাবে কমিয়ে রাখতে পারত না। উত্তরপ্রদেশে ফায়দা তুলতে গিয়ে এখন মোদী সরকার সাধারণ মানুষের উপরে বিপুল দাম বৃদ্ধির বোঝা চাপাতে চলেছে বলেও অভিযোগ। অনেকে বলছেন, অশোধিত তেলের দাম যে ভাবে বেড়েছে, তাতে চার মাস দাম না-বাড়ানোয় একসঙ্গে অনেকখানি দাম বাড়াতে হবে। মুলায়মের সুপারিশ কার্যকর হলে, তেলের দাম নিয়ে রাজনীতি করা সম্ভব হত না।

সমাজবাদী পার্টির নেতাদের এই আক্ষেপ শুনে কংগ্রেসের এক নেতার মন্তব্য, ‘‘মুলায়ম সরকারের অন্দরে, সংসদে তেলের দাম বাজারের উপরে ছেড়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন। আবার মনমোহন সরকারের আমলে আন্তর্জাতিক বাজারের চাপে তেলের দাম বাড়লে, তার বিরুদ্ধে উত্তরপ্রদেশে বন্‌ধও ডেকেছেন। তেলের দামের রাজনীতি তিনিও করেছেন। এখন অখিলেশকে সেই একই রাজনীতি সামলাতে হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement