প্রতিবাদ: সংসদে নয়া কৃষি বিল পাশ নিয়ে কৃষকদের বিক্ষোভ। মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুতে। পিটিআই
কৃষি বিল ঘিরে সংঘাতের জেরে তৈরি হওয়া জট কাটল না। এক দিকে, বিরোধীদের দাবি মেনে রাজ্যসভার আট সাংসদের উপর থেকে সাসপেনশন তুলতে নারাজ সরকার পক্ষ। উল্টে তাদের ভূমিকার চরম নিন্দা করা হয়েছে আজও। অন্য দিকে, সরকারের চাহিদা মতো ক্ষমা চেয়ে আন্দোলনের আঁচে জল ঢালার কোনও লক্ষণই দেখায়নি বিরোধী পক্ষ। আজ প্রথমে রাজ্যসভা এবং পরে লোকসভা বয়কট করেছেন বিরোধী সাংসদেরা।
ফাঁকা মাঠে আজ রাজ্যসভায় ৭টি এবং লোকসভায় ৪টি বিল পাশ করিয়ে নিয়েছে সরকার। রাজ্যসভায় পাশ হওয়া ৭টি বিলের মধ্যে ৪টির বিরুদ্ধেই প্রস্তাব জমা দেওয়া ছিল সাসপেন্ড হওয়া সাংসদদের চার জনের।
সূত্রের খবর, আগামিকালই সংসদ মুলতুবি হয়ে যাওয়ার কথা। তবে সেটা হলেও কৃষকদের স্বার্থে বিভিন্ন রাজ্যে মোদী সরকার বিরোধী আন্দোলন চলবে বলে এক সুরে জানিয়েছে বিরোধীরা। আপাতত আগামিকাল কী ভাবে যৌথ প্রতিবাদ করা যায়, তা নিয়ে সকালেই বিরোধী নেতারা বৈঠক করবেন। পাশাপাশি ১৭টি দলের সই সম্বলিত চিঠি গিয়েছে রাষ্ট্রপতির কাছে। তিনি সময় দিলে বিরোধী নেতারা তাঁর সঙ্গে দেখা করে কৃষি সংক্রান্ত বিলটিতে সই না-করার অনুরোধ জানাবেন।
ফাঁকা কক্ষে ১১ বিল পাশ
• রাজ্যসভায় সাড়ে তিন ঘণ্টায় সাতটি বিল পাশ, লোকসভায় সাড়ে তিন ঘণ্টায় চারটি বিল পাশ
রাজ্যসভার সাত
• অত্যাবশ্যক পণ্য আইনে সংশোধন বিল • ব্যাঙ্ক নিয়ন্ত্রণ আইনে সংশোধন বিল • কোম্পানি আইনে সংশোধন বিল • জাতীয় ফরেন্সিক সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় বিল • রাষ্ট্রীয় রক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় বিল • কর ও অন্য আইনে সংশোধন বিল • ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইনফর্মেশন টেকনোলজি বিল
লোকসভার চার
• শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা বিধি • কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিরাপত্তা-বিধি • শিল্প সম্পর্ক-বিধি • জম্মু-কাশ্মীর সরকারি ভাষা বিল
গত কাল সংসদ চত্বরে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে নিশি-ধর্নার অভূতপূর্ব নজির গড়ার পর, আজ ভোর থেকেই ছিল সংঘাতের আবহাওয়া। গত কাল রাতেই বিরোধীরা স্থির করেন, বহিষ্কৃত সাংসদদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করবেন বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ। অনুরোধ মানা না-হলে প্রথমে রাজ্যসভা এবং পরে লোকসভা থেকে বিরোধীরা গোটা অধিবেশনের জন্যই বেরিয়ে যাবেন। সংসদ শুরু হওয়ার পর রাজ্যসভায় গুলাম নবি আজাদ বলেন, "সম্প্রতি কক্ষে যা ঘটেছে, তাতে সরকার বা বিরোধী পক্ষ— কেউই খুশি নন। তবে সরকার পক্ষের একটা কথা মাথায় রাখা উচিত যে, সংখ্যার দাপট এবং অধিবেশন কক্ষের সার্বিক মেজাজ (সেন্স অব দ্য হাউস) কিন্তু এক নয়। সেন্স অব দ্য হাউস নির্ভর করে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল কী চাইছে তার উপর। এ ক্ষেত্রে বিজেপি-সহ তিন-চারটি দল বাদ দিয়ে রাজ্যসভার বাকি ১৮টি দলই চেয়েছিল, কৃষি সংক্রান্ত বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর জন্য ভোটাভুটি করা হোক। তার থেকেই সংঘাতের সূত্রপাত।’’
আরও পড়ুন: রাতভর ধর্নায় রুটি চিকেন, ফলের রস
চেয়ারম্যান বিরোধীদের এই দাবি মানেননি। বেঙ্কাইয়া নায়ডু বলেন, ডেপুটি চেয়ারম্যান তেরো বার আইন অমান্য করা সাংসদদের নিজেদের আসনে ফিরে যেতে বলেছেন। বলেছেন, তা হলে ভোটাভুটির দাবি বিবেচনা করা হবে। বেঙ্কাইয়া বলেন, "বহিষ্কৃত সাংসদেরা আবেগের মাথায় সে দিন ওই আচরণ করলে মানা যেত। কিন্তু তাঁরা তা করেননি। আজও সংবাদপত্রে বলছেন, তাঁরা উচিত কাজই করেছেন। ডেপুটি চেয়ারম্যানকে আক্রমণ করা, মাইক ভাঙা, রুল বুক ছেঁড়ার ঘটনাকে তাঁরা এখনও ঠিক কাজ বলেই মনে করছেন!" তাঁর মতে, যদি ওই সাংসদেরা চিঠি লিখে ক্ষমা চান, তা হলে তাঁদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে।
সরকার যে বহিষ্কৃতদের ফিরিয়ে নেবে না, তা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরেই রাজ্যসভা থেকে বিরোধীরা ওয়াক আউট করেন। এর পর ধর্না তুলে নেন সাসপেন্ড হওয়া সাংসদেরা। বিকেলে বৈঠকে বসেন লোকসভার বিরোধী সাংসদেরা। কংগ্রেস এবং তৃণমূল ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, ডিএমকে, শিবসেনা, বাম, বিএসপি, ওয়াইএসআর কংগ্রেসের সংসদীয় নেতারা। স্থির হয়, রাজ্যসভার ঘটনার জেরে তাঁরাও অধিবেশন বয়কট করবেন। আজ সন্ধ্যায় রাজ্যসভার বিষয় উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকেও যাননি বিরোধী নেতারা।
আরও পড়ুন: চা আনলেন হরিবংশ, খেলেন না বিরোধীরা
রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা, সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন বলেন, “সরকারের দুই ফাসিস্ত নেতা গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব, সংসদ এবং কৃষকদের অধিকারের বিষয়গুলি গুঁড়িয়ে দিচ্ছেন। তার প্রতিবাদে জেলায় জেলায় আন্দোলন হবে।’’