গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
খেতের পাশে পড়ে রয়েছে গলাকাটা দেহ। মুখটা অ্যাসিডে পোড়া। দেখে মনে হয়, চূড়ান্ত প্রতিহিংসার জেরেই খুন! গত ২৩ জানুয়ারি সকালে ক্ষতবিক্ষত এই দেহটি দেখতে পান মধ্যপ্রদেশের ভোপাল থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরের রাতলামের কামেদ গ্রামের বাসিন্দারা।
বেলা গড়ানোর আগেই পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয়। মৃতের পরনে থাকা পোশাক, পকেটে থাকা টাকার ব্যাগ, মোবাইল ফোন এবং কিছু নথি থেকে পুলিশ ওই দেহ শনাক্ত করে। জানা যায়, দেহটি ওই গ্রামেরই বাসিন্দা হিম্মত পাটিদারের। দেহটি যেখানে পাওয়া যায়, সেখান থেকে ৫০০ মিটার দূরে বছর পঁয়ত্রিশের হিম্মতের মোটরসাইকেলটিও মেলে। তাঁর পরিবারের লোকজন দাবি করেন, অন্য দিনের মতো রাত দেড়টা নাগাদ খেতে গিয়েছিলেন জমিতে জল দেওয়ার পাম্প চালাতে। তার পর আর বাড়ি ফেরেননি হিম্মত পাটিদার।
হিম্মত ছিলেন ওই এলাকার রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের প্রাক্তন কার্যকর্তা। এই খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই হইচই শুরু হয়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। রাজ্যের ক্ষমতা থেকে সদ্য চলে যাওয়া বিজেপি ওই খুনের পেছনে রাজনৈতিক চক্রান্তের অভিযোগ তোলে। অন্য দিকে হিম্মতের পরিবার পুলিশকে জানায়, তাঁদের সন্দেহ ওই গ্রামেরই বাসিন্দা মদন মালব্য তাঁকে খুন করেছে। হিম্মতের পরিবার পুলিশের কাছে এক জন সাক্ষীকেও হাজির করে, যিনি ওই রাতে ঘটনাস্থলের আশেপাশে মদনকে দেখেছিলেন। পুলিশও তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারে, হিম্মতের সঙ্গে মদনের স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে দু’জনের দীর্ঘদিনের গন্ডগোল ছিল। ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ মদন। সব মিলিয়ে মদনকেই খুনি ধরে নিয়ে এগোতে থাকে তদন্ত।
আরও পড়ুন: বিদেশে পালাতে পারেন কে ডি সিংহ! তৃণমূল সাংসদের বিপুল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করল ইডি
কিন্তু, খুনের পাঁচ দিনের মাথায় সেই তদন্তই মোড় নেয় অন্য খাতে। উঠে আসে এমন তথ্য যা, হলিউডের চিত্রনাট্যকেও হার মানায়। কল্পনায় খানিকটা কাছাকাছি গিয়েছিলেন শার্লক হোমসের স্রষ্টা স্যর আর্থার কোনান ডয়েল তাঁর ‘দ্য থর ব্রিজ’ গল্পে। সেখানে মৃত মহিলা এমন ভাবে তাঁর আত্মহত্যার প্লট সাজিয়েছিলেন যাতে মনে হয়, তাঁর স্বামী এবং পরিচারিকা মিলে তাঁকে খুন করেছে। তবে, হিম্মতের প্লট আরও এক ধাপ এগিয়ে। তদন্তে নেমে পুলিশের ধন্ধ তৈরি হয় ঘটনাস্থলের কিছুটা দূরে পড়ে থাকা এক পাটি চটি দেখে। মদনের বাবা সেই চটি নিজের ছেলের বলে শনাক্ত করেন। মৃতের পরনে থাকা অন্তর্বাস মদনের বাবা নিজের ছেলের বলে দাবি করেন। রাতলাম জেলা পুলিশ সুপার গৌরব তিওয়ারি স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, “ঘটনাস্থলের কাছ থেকে মদনের জুতোর তলার মাটি এবং ঘটনাস্থলের মাটিরও ফারাক পাওয়া যায় পরীক্ষায়।”
রাতলাম জেলা পুলিশের কর্তারা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এর পরেই মৃতের দেহের নমুনার সঙ্গে মদনের পরিবার এবং হিম্মতের পরিবারের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। আর সেই ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট থেকেই বেরিয়ে আসে আসল তথ্য। রিপোর্টে মৃতের দেহের নমুনার সঙ্গে হিম্মতের পরিবারের রিপোর্ট মেলেনি, বরং মিলেছে মদনের পরিবারের সঙ্গে। গৌরব তিওয়ারি বলেন, “তদন্তে আমরা নিশ্চিত যে দেহটি হিম্মতের নয়।” জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তদন্তে নেমে তাঁরা জানতে পেরেছেন সম্প্রতি ঋণে জর্জরিত হয়ে গিয়েছিলেন হিম্মত। প্রায় ন’লাখ টাকা ধার হয়ে গিয়েছিল তাঁর।
আরও পড়ুন: হেগড়ে ভারতবাসীর লজ্জা! ‘মুসলিম মহিলা’ বিতর্কে তোপ রাহুলের, মুখ খুললেন তাবুও
অন্য দিকে তাঁরা এটাও জানতে পেরেছেন, মৃত্যুর কয়েক মাস আগেই ২০ লাখ টাকার একটি বিমা করেছিলেন তিনি। তদন্তকারীদের দাবি, বিমার টাকা হাতাতে খুব ঠান্ডা মাথায় মদনকে খুনের ছক কষেন হিম্মত। তার পর মদনকে খুন করে এমন ভাবে গোটাটা সাজান যাতে মনে হয়, মদনই তাঁকে খুন করে ফেরার হয়ে গিয়েছে। এক ঢিলে দুই পাখি মারার পরিকল্পনা করেছিলেন হিম্মত। এক দিকে দীর্ঘ দিনের শত্রু মদনকেও নিকেশ করা হবে, সেই সঙ্গে বিমার টাকা পেয়ে ঋণও পরিশোধ করে দেবে পরিবার। পুলিশের ধারণা আশ পাশে কোথাও গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে হিম্মত। তাঁর খোঁজে চলছে তল্লাশি।
(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরাবাংলা খবরপেতে পড়ুন আমাদেরদেশবিভাগ।)