মেঘালয়ে মুলামাইল্লিয়াং গ্রামের উদ্যোগে বনসৃজন। নিজস্ব চিত্র
মেঘালয়ের কসানে কয়লা খনিতে জল ঢুকে ১৬ জন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় গোটা দেশের নজর পড়েছিল মেঘালয়ে বহুকাল ধরে চলে আসা বিপজ্জনক ‘র্যাট হোল’ খননের উপরে। জাতীয় গ্রিন টাইবুনাল বন্ধ করে দিয়েছে মেঘালয়ে কয়লা তোলা। তা নিয়ে চলছে তীব্র বিক্ষোভ। কিন্তু পূর্ব জয়ন্তীয়া হিলের কালো মাটির দেশে একফালি সবুজ মরূদ্যানের মতো জেগে আছে মুলামাইল্লিয়াং গ্রাম। আদালতের শাসনে নয়, নিজের থেকেই পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর ও মানুষের প্রাণ নিয়ে খেলার এই বিপজ্জনক খননকে তারা বিদায় জানিয়েছে ১০ বছর আগে। মন দিয়েছে বনসৃজনে। তারই ফলে কালো, বন্ধ্যা মাটির বুক ঢেকে গিয়েছে সবুজে!
মেঘালয়ে ‘ইঁদুরের গর্ত’ খননে মাটির বুকে ছোট গর্ত করে প্রাণ হাত নিয়ে শ্রমিকরা ভিতরে ঢুকে কয়লা তোলেন। একেবারেই অসংগঠিত এই ক্ষেত্রে দৈনিক মোটা টাকা মজুরির লোভে স্থানীয় তো বটেই বাইরের রাজ্য থেকে শ্রমিকরা ভিড় করেন। একাংশ মানুষ বড়লোক হলেও এর ফলে স্থানীয় পরিবেশ, ফসল, কৃষি, উদ্ভিজ্জ দ্রব্যের উৎপাদন, এমনকি স্থানীয় সংংস্কৃতিও লুপ্তপ্রায়। হেক্টরের পর হেক্টর জমি কালো। সেখানে কোনও ফলন হয় না। পাহাড় কেটে ন্যাড়া করা হয়েছে। পূর্ব জয়ন্তীয়া হিলে অন্তত ৩৬০টি গ্রামে কয়লা তোলার কাজ হয়। খনি শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার!
গ্রিন ট্রাইবুনাল মেঘালয়ে কয়লা খননে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ২০১৪ সালে। স্কুলশিক্ষক ও গ্রামের প্রধান আপমন পাচিয়াংয়ের উদ্যোগে মুলামাইল্লিয়াং মানুষ কিন্তু প্রায় ১০ বছর আগে ক্ষতিকর এই খনন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মাত্র ৯৬০ জনের বাস এই গ্রামে। পরিবেশ রক্ষা ও দিন বদলের ক্ষেত্রে তাঁরাই পথিকৃৎ। ক্ষতবিক্ষত পূর্ব জয়ন্তীয়া হিলের ভূপৃষ্ঠে এই গ্রাম এক টুকরো সবুজের মরূদ্যান। পরিত্যক্ত খনি, কালো হয়ে যাওয়া মাটি তাঁরা গাছে ঢেকেছেন।
আরও পড়ুন: ফের সার্জিকাল স্ট্রাইক! উদ্বেগ পাকিস্তানের, সতর্ক করা হল সেনাকে
পাচিয়াং জানান, গ্রামের যুব প্রজন্ম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সব কালো মাটি সাফ করে বৃক্ষরোপণ করা হবে। সেই সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, মেঘালয় পুলিশ সার্ভিসের অফিসার চেম্পাং সিরটি ব্যবস্থা করেন চারার। শুরু করে অরণ্যায়ন। বৃষ্টির জল জমিয়ে সেচের ব্যবস্থা করে গ্রামের বন্ধ্যা জমিকে ফের উর্বর বানানো হয়।
জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক হয়ে এসে মালথাস সাংমা মুলামাইল্লিয়াং গ্রামে সরকারি প্রকল্পের বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে আসেন। এখন সেই গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে শৌচালয় রয়েছে। গ্রামে রয়েছে গাছে ঢাকা সুন্দর রাস্তা। রাস্তাঘাটে কেউ কোথাও ময়লা ফেলেন না। সাংমা বলেন, মুলামাইল্লিয়াংয়ের মানুষ নিজের উদ্যোগেই এমন ব্যতিক্রমী গ্রাম বানিয়েছেন, যা গোটা রাজ্যের কাছে উদাহরণস্বরূপ।
আরও পড়ুন: কৃষি-ঐক্যে ‘বাদ’! দূরে রইল তৃণমূল
গ্রামের আশপাশে আছে অনেক প্রাকৃতিক গুহা, জলপ্রপাত, খাত। প্রশাসনের আশা, কয়লাখনির বিকল্প জীবিকা হিসেবে পর্যটনকে তুলে ধরা সম্ভব। এখন গ্রামটিকে গুহা পর্যটনের বেসক্যাম্প হিসেবে গড়ে তোলার কাজ হচ্ছে।