রিসার্চ মেন্টরের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনলেন তরুণী।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট স্টিফেনস কলেজের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে কাজ করেন অভিযুক্ত। তাঁরই অধীনে রসায়নে পোস্ট ডক্টরেট করছেন নিগৃহীতা। বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর দিল্লির পুলিশের কাছে নিগ্রহের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, ঘটনাটি দেড় বছর আগেকার। যৌন হেনস্থার শিকার হওয়ার পর পরই কলেজ কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। ঘটনাটি তখন প্রকাশ্যে আনতে বারণ করা হয়। তদন্তভার দেওয়া হয়েছিল কলেজেরই যৌন হেনস্থা সংক্রান্ত তদন্ত কমিটিকে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, তিন মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট দেবে ওই কমিটি। আর তার ভিত্তিতে পদক্ষেপ করা হবে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে।
তরুণীর দাবি, দেড় বছর হতে চলল এখনও নড়ে বসেননি কলেজ কর্তৃপক্ষ। উল্টে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে তাঁকে। এই অবস্থায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাঁর কেরিয়ার। আর তাই পুলিশের হস্তক্ষেপ চান। তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। তবে এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে শনিবার বয়ান রেকর্ড করেছেন তিনি।
নিগৃহীতার দাবি, এক বার নয়, গত দু’বছরে নানা ভাবে তাঁকে হেনস্থা করেছেন অভিযুক্ত। ল্যাবের মধ্যে কখনও অশ্লীল ভাবে স্পর্শ করেছেন, কখনও আবার জড়িয়ে ধরেছেন। ২০১৩-র অক্টোবরে তিনি যৌন হেনস্থার শিকার হন। ঘটনা জানাজানি হলে তাঁর কেরিয়ার নষ্ট করে দেওয়ার হুমকি দেন অভিযুক্ত। তরুণীর বাবা-মা পুলিশে যাওয়ার তোড়জোড় করলে বাড়ি এসে ক্ষমাও চেয়ে যান। তখনকার মতো মিটে যায় ব্যাপারটা।
কিছু দিন পর থেকে ফের শুরু হয় উত্যক্ত করার পালা। হঠাৎই এক দিন তরুণীকে ল্যাবে হলুদ শাড়ি পরে আসতে বলেন অভিযুক্ত। কথা না শুনলে অ্যাসিড দিয়ে মুখ পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এর পর থেকে মাঝে মধ্যেই তরুণীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে চাইতেন তিনি। তরুণী আগ্রহ না দেখানোয় একটা সময় পর তাঁকে গাইড করা বন্ধ করে দেন। এর পর অভিযোগ নিয়ে গত ডিসেম্বরে সরাসরি কলেজের অধ্যক্ষের কাছে যান তরুণী। তবে তাতেও আখেরে লাভ হয়নি বলে দাবি তাঁর। তরুণী জানিয়েছেন, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা তো দূর অস্ত্, পোস্ট ডক্টরেট শেষ করানোর শর্তে তাঁকেই অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেন খোদ অধ্যক্ষ।
যৌন নিগ্রহে অভিযুক্ত অধ্যাপকের ইস্তফা চেয়ে এ দিন সেন্ট স্টিফেনস কলেজ চত্বরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের সংগঠন ‘ডুটা’-র সদস্যেরা। ঘটনাটিকে লজ্জাজনক বলে দ্রুত তদন্তের দাবি জানিয়েছেন দিল্লির মহিলা কমিশনের প্রধান বরখা শুক্লা। সাংবাদিক বৈঠক করে নিজের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ। পাশাপাশি, এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ করার আশ্বাসও দিয়েছেন। কর্তৃপক্ষের তরফে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, কলেজের কমিটি যে তদন্ত করছিল তা প্রায় শেষের দিকে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কেউ ছাড় পাবেন না।