লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে গেলে যে কোনও মুহূর্তে বদলে যেতে পারে জীবন। জীবনের এই সত্য মহম্মদ আলি সিহাবের চেয়ে ভাল কে আর জানবে।
মহম্মদ আলি ২০১১ ব্যাচের আইএএস অফিসার। এক সময় ঝুড়ি বিক্রি করে আয় করতেন তিনি। ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর বড় হয়েছেন অনাথ আশ্রমে। কঠোর পরিশ্রম এবং জেদ থাকলে যে কোনও কঠিন কাজ যে সহজেই করে ফেলা যায়, আইএএস হয়ে সেই উদাহরণই তৈরি করেছেন তিনি।
১৯৮০ সালের ১৫ মার্চ কেরলের মলপ্পুরমের এক প্রত্যম্ত গ্রামে জন্ম সিহাবের। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। ছোটবেলা থেকেই তাই উপার্জনের রাস্তায় নামতে হয়েছিল তাঁকে। বাবার সঙ্গে বাঁশের ঝুড়ি এবং পান ফেরি করে বেড়াতেন।
কোনওরকমে দিন গুজরান হয়ে যেত তাঁর। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের হাল ধরার মতো আর কেউ ছিল না। ১৯৯১ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে মারা যান তাঁর বাবা। পাঁচ-ভাইবোনের দায়িত্ব এসে পড়ে মায়ের কাঁধে। মা সে ভাবে কিছুই করে উঠতে পারছিলেন না। দিনের পর দিন না খেয়ে দিন কেটেছে তাঁদের।
এক দিন বাধ্য হয়েই পাঁচ ছেলেমেয়েদের কোঝিকোড়ের একটি অনাথ আশ্রমে দিয়ে আসেন তিনি। দু’বেলা পেট ভরে খেতে তো পারবে সন্তানরা! শুধুমাত্র এটাই মনে হয়েছিল তাঁর।
এই অনাথ আশ্রমই তাঁর জীবন পাল্টে দেয়। এখানে শুধু পেট ভরে খাওয়াই জুটত না, জীবনের নতুন দিক উন্মোচন হয় তাঁর সামনে। পড়াশোনা করতে শুরু করলেন তিনি। আশ্রমের সমস্ত শিশুদের থেকে এই একটি বিষয়ে অনেকটাই এগিয়ে যেতে শুরু করেছিলেন।
১০ বছর আশ্রমে কাটানোর পর নিজের লক্ষ্য স্থির করে ফেলেছিলেন তিনি। ভবিষ্যতের আইএএস অফিসার হিসাবে নিজেকে দেখতে শুরু করেছিলেন। লক্ষ্যভেদও করেছেন। ২০১১ সালে আইএএস অফিসার পদে নিযুক্ত হন। তার আগে একাধিক চাকরির পরীক্ষায় পাশ করেছেন।
ইউপিএসসি রাজ্য স্তরের পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। আরও অনেক পরীক্ষায় নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন তিনি। দু’বার আইএএস পরীক্ষায় বসেও উত্তীর্ণ হতে পারেননি। কিন্তু তা বলে হাল ছাড়েননি সিহাব।
দিন ভর অন্য কাজের পর আশ্রমে ফিরতেন। আশ্রমে তাঁর জন্য আলাদা কোনও ঘর ছিল না। একসঙ্গে অনেকে একই ঘরে থাকতেন। রাত জেগে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন আইএএস-এর জন্য। বিছানার পাশে টর্চ জালিয়ে রেখে নিঃশব্দে পড়াশোনা করতে হত, যাতে অন্যদের ঘুম না ভেঙে যায়।
তৃতীয় বারের চেষ্টায় স্বপ্ন পূরণ হয় তাঁর। সারা ভারতে ২২৬ নম্বরে স্থান পান। আইএএস মহম্মদ আলি সিহাবের পোস্টিং হয় নাগাল্যান্ডের কোহিমায়।