এ কি সংসদ! ভোট ভাষণ প্রধানমন্ত্রীর

রাষ্ট্রপতির ভাষণে ধন্যবাদজ্ঞাপন বিতর্কে লোকসভা-রাজ্যসভা মিলিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে যেন ভোটের বক্তৃতাই দিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩৮
Share:

কথামালা: লোকসভায় বক্তৃতায় আক্রমণাত্মক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার দিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

ভাইয়ো অউর বহনো।

Advertisement

সংসদ যে রাজনৈতিক মঞ্চ নয় আর নরেন্দ্র মোদী যে বিরোধী নেতা নন, সেটাই গুলিয়ে যাচ্ছিল বারবার!

রাষ্ট্রপতির ভাষণে ধন্যবাদজ্ঞাপন বিতর্কে লোকসভা-রাজ্যসভা মিলিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে যেন ভোটের বক্তৃতাই দিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী।

Advertisement

দেশভাগ থেকে পরিবারতন্ত্রের প্রশ্নে নেহরু থেকে রাজীব-সনিয়া-রাহুল গাঁধীকে পরতে পরতে বিঁধলেন। নজরে রাখলেন কর্নাটক ভোট। মরিয়া হলেন শরিক টিডিপিকে সঙ্গে রাখতে। তিন তালাক বিতর্কে হিন্দু-মুসলমান বিভাজন নিয়ে খেলে দিলেন সাম্প্রদায়িকতার তাসও। এড়িয়ে গেলেন বেকারি, কৃষক, সেনা-মৃত্যুর মতো জ্বলন্ত সমস্যা।

রাষ্ট্রপতির ভাষণের সময় বিশেষ প্যাকেজের দাবিতে হল্লা করা টিডিপি-কে নিরস্ত করতে চন্দ্রবাবুকে আগেই অনুরোধ করেছিলেন মোদী। টিডিপি বসে যায়। কিন্তু চাল ঘুরিয়ে দেন রাহুল। লোকসভায় মোদীর গোটা বক্তৃতার সময় রাহুলের নির্দেশে ওয়েলে নেমে অন্ধ্রেরই উন্নয়নের দাবিতে টানা হট্টগোল করে গেল কংগ্রেস। স্লোগান উঠল, ‘ম্যাচ গড়াপেটা চলবে না’, ‘ঝুটা ভাষণ চলবে না’, ‘ড্রামাবাজি চলবে না’। প্ল্যাকার্ড উঠল, ‘রাফালের গোপন চুক্তি কী?’

আরও পড়ুন: দুমড়ে গেল গাড়ি, আহত মোদীর স্ত্রী

অগত্যা পাল্টা হামলার পথই বাছলেন মোদী। কোনও সমস্যার সমাধান না দিয়ে সব সমস্যার দায় চাপালেন কংগ্রেসের উপর— নেহরুর জন্যই দেশভাগ হয়েছে, কাশ্মীর সমস্যা তাঁর কারণেই, সর্দার পটেল থাকলে হত না! ভোট টানতে তড়িঘড়ি বিভাজন হয়েছে বলে অন্ধ্রের সমস্যাও ঠেললেন কংগ্রেসের ঘাড়ে। এনপিএ বা অনুৎপাদক সম্পদের ‘পাপ’ও কংগ্রেসের। কংগ্রেসের ‘ছোট মন’, ‘বিষ ঢেলেছে’, ‘পাপের সাজা ভোগ করছে দেশ’—কী না বললেন!

সনিয়ার অন্তরাত্মার আওয়াজ, মনমোহনের অর্ডিন্যান্স রাহুলের ছিঁড়ে ফেলা, বিদেশে গিয়ে রাহুলের দেশের ‘বদনাম’ করা, ডোকলামের সময় চিনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে রাহুলের বৈঠক, পরিবারতন্ত্র জারি রেখে রাহুলের অভিষেক— বক্তৃতার সিংহভাগ ‘রাহুলময়’ করে ফেললেন মোদী।

কংগ্রেসিদের গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধেই খেপিয়ে তোলার কৌশল নিয়ে বললেন, ‘‘এক পরিবারকে ভক্তি করে দেশের লোকসান করলেন আপনারা। স্বাধীনতার পর গাঁধীও (মোহনদাস কর্মচন্দ্র) কংগ্রেস-মুক্ত দেশ গ়ড়ার কথা বলেছিলেন। আমি সেই গাঁধীর পথে হাঁটছি।’’

প্রতিবাদে সভাকক্ষ ত্যাগ করলেও পরে রাহুল মুচকি হেসেই বললেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর কংগ্রেস-মোহ দেখে আমি খুশি। এতটা সময় তিনি কংগ্রেসকে দিলেন। কিন্তু তিনি তো বিরোধী নেতা নন, দেশের প্রধানমন্ত্রী।’’ রাহুলের বিস্মিত প্রশ্ন, ‘‘দেশের অগ্রগতি না বলে প্রধানমন্ত্রী কেন শুধু অতীত ঘাঁটছেন? সংসদে তো অন্তত জানান বেকারি, কৃষকদের দুর্দশা, পাকিস্তান-ডোকলাম নিয়ে। দুর্নীতি নিয়ে এত কথা, তবু রাফাল নিয়ে চুপ কেন? কৃষকদের শুধু বাঁশ আর মৌমাছি দিলে হবে?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement