লোকসভায় নাম না করে কংগ্রেস এবং বামেদের তীব্র কটাক্ষ করলেন নরেন্দ্র মোদী। রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর ধন্যবাদজ্ঞাপক বক্তৃতায় বিরোধীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান, সংসদের অধিবেশন মসৃণভাবে চলতে দিন। সেই প্রসঙ্গেই কখনও রাজীব গাঁধীর মন্তব্য টেনে, কখনও সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে উদ্ধৃত করে কংগ্রেস-বামকে খোঁচা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। টেনে আনলেন জওহরলাল নেহরু এবং ইন্দিরা গাঁধীর নানা পরামর্শও।
জেএনইউ এবং রোহিত ভমুলা কাণ্ড নিয়ে বাজেট অধিবেশনের শুরু থেকেই উত্তাল সংসদ। স্মৃতি ইরানির বিতর্কিত ভাষণ সেই আগুনে ঘৃতাহুতি দেয়। তার পর অরুণ জেটলির পেশ করা বাজেটে ইপিএফের টাকা তোলার উপর কর বসানোর কথা ঘোষিত হওয়ায়, বিরোধীরা সরকারকে আক্রমণের আরও একটি অস্ত্র হাতে পেয়ে গিয়েছে। তার মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর প্রধানমন্ত্রীর ধন্যবাদজ্ঞাপক বক্তৃতা শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের শুরুতে লোকসভায় কোনও হইহট্টগোল ছিল না। কিন্তু ভাষণে বার বার বিরোধীদের তীব্র কটাক্ষ করেন তিনি। মোদী বলেন, ‘‘সংসদে সরকারকে প্রশ্ন করা হয় এবং সরকারকে যুক্তিসঙ্গত জবাব দিতে হয়। সংসদ যদি মসৃণভাবে চল, তা হলে আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী আরও ভালভাবে তুলে ধরতে পারব।’’ এই মন্তব্য করেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এটা নরেন্দ্র মোদীর পরামর্শ নয়, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীই এ কথা বলেছিলেন।’’ এখানেই থামেননি মোদী, তিনি বলেন, ‘‘সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু তার প্রভাব অধিবেশনের উপর পড়া উচিত নয়। এ কথাও আমি বলছি না। এটাও রাজীব গাঁধীই বলেছিলেন।’’ বার বার রাজীব গাঁধীকে টেনে প্রধানমন্ত্রী যে কংগ্রেসকেই বিঁধতে চাইছেন, তা বুঝতে বাকি থাকেনি কারও। কংগ্রেস সাংসদরা প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা শুরু করেন। লোকসভায় হইহট্টগোল শুরু হয়ে যায়।
আরও পড়ুন:
মোদী-নিন্দায় ঝোড়ো ইনিংস রাহুলের
এর পর ছিল বামেদের পালা। বিভিন্ন ইস্যুতে কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দলের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বামেরাও বিজেপির তীব্র সমালোচনায় সরব হয়েছে অধিবেশনের শুরু থেকেই। সিপিএম সাংসদ তথা সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে কখনও স্মৃতি ইরানির দ্বৈরথ দেখা গিয়েছে। কখনও বিতণ্ডায় জড়িয়েছেন জেটলি-ইয়েচুরি। তাই বামেদের জন্যও প্রধানমন্ত্রীর তুণীরে অপেক্ষায় ছিল বাণ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের প্রাক্তন স্পিকার তথা এখানকার কোনও কোনও সদস্যের পথপ্রদর্শক সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, সংসদের অধিবেশনে বাধা দেওয়া সম্পূর্ণ নেতিবাচক এবং তা অধিবেশনের লক্ষ্যকেই ভেস্তে দেয়।’’
কখনও ইন্দিরা গাঁধী, কখনও জওহরলাল নেহরুর মন্তব্য বা পরামর্শ টেনে এনে বার বার কংগ্রেসকে এ দিন খোঁচা দিতে থাকেন মোদী। নাম না করে রাহুল গাঁধীর প্রতি তীব্র শ্লেষ ছুড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধি খোলে। কিন্তু কারও কারও বয়স বাড়লেও বুদ্ধি খোলে না।’’ সংসদে সদস্য সংখ্যা খুব কমে যাওয়ায় কংগ্রেস হীনমন্যতায় ভুগছে। তাই অধিবেশনে বাধা দিয়ে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে।