যোগে বিতর্ক কীসের, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

হিন্দুত্বের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে প্রথম বললেন, যোগ কোনও ধর্মীয় অভ্যাস নয়। ফলে এটা নিয়ে অযথা বিতর্ক করাও ঠিক নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৬ ০৯:১৭
Share:

মোদী-যোগ। দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার চণ্ডীগড়ে।

হিন্দুত্বের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে প্রথম বললেন, যোগ কোনও ধর্মীয় অভ্যাস নয়। ফলে এটা নিয়ে অযথা বিতর্ক করাও ঠিক নয়।

Advertisement

মোদীর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি আর কংগ্রেসের এমআইটি গ্র্যাজুয়েট জয়রাম রমেশ সঙ্গে সঙ্গে রে রে করে উঠে বলেছেন, এ তো ঠাকুর ঘরে কে? আমি কলা খাইনি! যোগাভ্যাসের বিরুদ্ধে কে? কিন্তু দুনিয়ার বাবারা ঢুকে পড়ে সঙ্ঘ পরিবারের মদতে পতঞ্জলির যোগসূত্রকে হিন্দুত্বের কর্মসূচিতে পরিণত করছে কারা? কেনই বা করছে?

বিতর্ক কে চাইছে আর কে চাইছে না, তা নিয়ে রাজনৈতিক টানাপড়েন যা-ই হোক, চণ্ডীগড়ে গিয়ে আজ সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে আটটা পর্যন্ত একটানা যোগাভ্যাস দেখিয়েছেন মোদী। একটি সাদা টি শার্ট আর ট্রাক প্যান্ট পরিধান করে লাখো মানুষের সামনে তিনি যে যোগাভ্যাস দেখিয়েছেন, তা নিয়ে উত্তাল ভারত থেকে গোটা দুনিয়া। মোদী এ দিন জানান, যোগ নিয়ে পরের বছর থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের দু’টি পুরস্কারও চালু করতে চলেছে কেন্দ্র।

Advertisement

সেনাদের ব্যায়াম। সিয়াচেনে, বিশ্ব যোগ দিবসে।

রাষ্ট্রপতি ভবনে সাতসকালে সাদা টি শার্ট পরে ৮০ বছরের প্রণব মুখোপাধ্যায়ও দ্বিতীয় যোগ দিবসের উদ্বোধন করেছেন। আর ইন্ডিয়া গেটে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগগুরু রামদেবের পাশে দাঁড়িয়ে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ হাত দু’টি উপরে তুলে তডাসন করেছেন।

বিচিত্র দৃশ্য! যেখানে যত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী— বেঙ্কাইয়া নায়ডু থেকে রবিশঙ্কর প্রসাদরা টলোমলো পায়ে যোগাভ্যাস করেছেন আজ। মোট ৫৭ জন মন্ত্রী —স্মৃতি ইরানি পর্যন্ত নেমেছেন। লখনউয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে যোগাভ্যাস করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।

পঞ্জাবে বিধানসভার ভোট আসছে। তার আগে চণ্ডীগড়ে পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী ও প্রবীণ অকালি নেতা প্রকাশ সিংহ বাদলকে পাশে বসিয়ে মোদী যোগাভ্যাসের বার্তা ছড়িয়েছেন। ভারতের জাতীয়তাবাদী ছবিকেই কি পুনরুজ্জীবিত করতে চেয়েছেন তিনি? যোগগুরু রামদেবও বলছেন, মোদী না থাকলে রাষ্ট্রপুঞ্জও কি ভারতীয় যোগকে এতটা সম্মান দিয়ে আজকের দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক যোগদিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দিত?

প্রধানমন্ত্রী গত বছর ইন্ডিয়া গেটের সামনে যোগাভ্যাস করেছিলেন। বিতর্ক হয়েছিল, গায়ত্রী মন্ত্র যোগের সময়ে উচ্চারণ বাধ্যতামূলক করা যায় কিনা, কিংবা ওম মন্ত্র উচ্চারণ কোনও মুসলিম নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক হতে পারে কিনা, তা নিয়ে। এ দিকে কিছু দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে এসে মুসলিম ছেলেমেয়েরাও যোগাসন দেখিয়ে পুরস্কার নিয়ে গিয়েছে। আজ দিল্লির পাশেই ফরিদাবাদে রামদেবের যোগ কর্মশালায় এক লক্ষ যুবক যোগের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে। যোগাভ্যাস হয়েছে আমেরিকা ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়ায় মতো ১৯১টি দেশে। নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কোয়্যার, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্ট বা সিডনির হারবার ব্রিজ ছাড়াও চিন, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কার মতো দেশেও সকাল থেকেই যোগাভ্যাসের উৎসাহ দেখা গিয়েছে। ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনেও যোগের অনুষ্ঠান হয়েছে।

এই হল মোদীর যোগ মাহাত্ম্য!

শুধু একটা প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএম নেতা প্রকাশ কারাট। বহু বছর ধরে তিনি ও তাঁর স্ত্রী বৃন্দা যোগাভ্যাস করেন। কমিউনিস্ট নেতার প্রশ্ন একটাই, ফি বছর প্রকাশ্যে যোগাভ্যাস দেখানোটাই কি তা হলে প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার?

ছবি: পিটিআই

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement