Narendra Modi

মুখে শান্তি মোদীর, চুপ দিল্লি নিয়ে

দলীয় সাংসদদের মোদী বলেন, ‘‘আমাদের মূল মন্ত্র একটিই, উন্নয়ন। আর শান্তি, ঐক্য, সম্প্রীতিই উন্নয়নের প্রাক্ শর্ত।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২০ ০৪:৪৩
Share:

বিজেপির সংসদীয় বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ। ছবি: এএফপি।

আরএসএস-প্রধান মোহন ভাগবত কয়েক দিন আগেই দলের কর্মীদের ‘ন্যাশনালিজ়ম’ (জাতীয়তাবাদ) শব্দটি ব্যবহার করতে বারণ করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, এর মানে ‘হিটলার, ফ্যাসিবাদ, নাৎসিবাদ’ বোঝায়। শব্দটি সরাসরি ব্যবহার না-করেও আজ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে নিশানা করতে গিয়ে সেই জাতীয়তাবাদের তাসই খেললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু দিল্লি হিংসা নিয়ে একটি শব্দও খরচ করলেন না। তবে মুখে বার বার ‘শান্তি, ঐক্য, সম্প্রীতি’র কথা বললেন বৈঠকে।

Advertisement

দিল্লি হিংসার পরে এ দিন ছিল দলীয় সাংসদদের সঙ্গে মোদীর প্রথম বৈঠক। সঙ্গে ছিলেন মোদীর সেনাপতি অমিত শাহ। রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দলীয় সাংসদদের মোদী বললেন, ‘‘আমাদের মূল মন্ত্র একটিই, উন্নয়ন। আর শান্তি, ঐক্য, সম্প্রীতিই উন্নয়নের প্রাক্ শর্ত। আমাদের কথায়, আদর্শে এর দায়বদ্ধতা প্রতিফলিত হতে হবে। সব সাংসদের কাছে আবেদন, এই তিনটি বিষয় সুনিশ্চিত করতে নেতৃত্ব দিতে হবে।’’

এখানেই থামেননি মোদী। কয়েক দিন আগেই দিল্লিতে এক বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে মনমোহন বলেছিলেন, ‘‘আজকাল জাতীয়তাবাদ এবং ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগানের অপব্যবহার করা হচ্ছে। এর আড়ালে সন্ত্রাস ছড়িয়ে উগ্র ভাবনা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে।’’ নাম না-করে সেই প্রসঙ্গ টেনে মোদী আজ ফের জাতীয়তাবাদের তাসই খেললেন। দলীয় সাংসদদের বলেন, ‘‘নিজেকে শুধু বিজেপি কর্মী নন, ‘ভারত মাতার সন্তান’ মনে করুন। সমাজে এমন লোকও আছেন, যাঁরা দলহিতে চলেন, নিজের দল টিকিয়ে রাখতেই হিমশিম খাচ্ছেন। আর আমরা দেশহিত থেকে অনুপ্রেরণা নিই। সেই লড়াইয়ের লক্ষ্যই ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’। বড় দুঃখ হয়, কিছু ব্যক্তি যখন ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগানকেও সন্দেহের চোখে দেখেন, তাতে দুর্গন্ধ পান। এ জন্য দেশপ্রেমীদের অনেক ক্ষোভ আছে।’’ নিজের বক্তব্যে জোর বাড়াতে বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়েও ‘বন্দে মাতরম’ স্লোগান নিয়ে সমস্যা তৈরি করা হয়েছিল। এখন ‘ভারত মাতা কি জয়’ নিয়ে হচ্ছে।

Advertisement

‘শান্তি’বচন (আগে যা বলেছেন)

নরেন্দ্র মোদী
সীলমপুর, জামিয়া বা শাহিন বাগে সিএএ-র বিরুদ্ধে বিক্ষোভের পিছনে দেশ বিভাজনের রাজনীতির ‘ডিজাইন’ রয়েছে।

অমিত শাহ
জিন্নাওয়ালি আজাদির স্লোগান ওঠে শাহিন বাগে। এত জোরে ভোটের বোতাম টিপুন, যাতে শাহিন বাগে ‘কারেন্ট’ লাগে।

প্রবেশ বর্মা
ওঁরা (শাহিন বাগের প্রতিবাদীরা) আপনাদের ঘরে ঢুকে মেয়ে-বোনেদের খুন, ধর্ষণ করবেন।

অনুরাগ ঠাকুর
দেশ কে গদ্দারোঁ কো... জনতা: গোলি মারো সালোঁ কো!

দলীয় সাংসদদের সভায় মোদীর আজকের বক্তব্যকে নিশানা করেছে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, আজ যে-প্রধানমন্ত্রী শান্তি, সম্প্রীতির কথা বলছেন, তিনিই জনসভায় দাঁড়িয়ে ‘পোশাক দেখে লোক চেনার’ মতো বিভাজনমূলক বক্তৃতা দিয়েছেন! তাঁর দলের নেতারা ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্যে’র জন্য সনিয়া-রাহুল গাঁধীর বিরুদ্ধে মামলা করছেন, অথচ তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য অনুরাগ ঠাকুর বা দলের নেতা প্রবেশ বর্মা-কপিল মিশ্রেরা ‘গোলি মারো’ বলেও নিশ্চিন্তে আছেন। মোদী ওই নেতাদের নিয়ে একটি শব্দও আজ পর্যন্ত
খরচ করেননি।

কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘দিল্লির হিংসায় এত লোক মারা গেলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন? এক বারও বলেছেন, তিনি তাঁদেরও প্রধানমন্ত্রী? বিজেপির সাংসদদের বৈঠকে ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান নিয়ে সস্তা রাজনীতি করছেন। অথচ তাঁর দলের যে-নেতারা এত দিন উস্কানি দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেছেন? নিজের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিন্দা করেছেন? উল্টে এমন নেতাদের নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে!’’ কংগ্রেসের ইঙ্গিত, বিজেপির বিতর্কিত নেতা কপিল মিশ্রের দিকে। দিল্লি হিংসার আগে বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা দেওয়ার অভিযোগের পরেও যাঁকে ‘ওয়াই প্লাস ক্যাটেগরি’ নিরাপত্তা দিচ্ছে অমিত শাহের অধীন দিল্লি পুলিশ। এক কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘‘কপিল মিশ্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলায় তো রাতারাতি বদলি হয়ে যেতে হল দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি মুরলীধরকে। তার পরেও মোদীর মুখে শান্তি-সম্প্রীতির কথা মানায় কি?’’

‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান নিয়েও মোদীর অবস্থানকে বিঁধেছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের খোঁচা, ‘‘শান্তির আবেদন করতে গিয়ে ঘুরেফিরে সেই উগ্র জাতীয়তাবাদের তাসই খেললেন মোদী! ভোটের আগে পুলওয়ামা, বালাকোট করে যে-তাসে লোকসভা জিতেছেন। তিনি কি আরএসএস-প্রধানের পরামর্শও মানছেন না?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement