ছবি পিটিআই।
দিল্লি, বেঙ্গালুরুর যে সংস্থার সঙ্গে আদা বিক্রির চুক্তি করেছেন, তারা কি শুধু আদা তুলে নিয়ে যাচ্ছে? নাকি বেহাত হয়ে যাচ্ছে চাষের জমিও? প্রধানমন্ত্রীর এই প্রশ্নে অরুণাচলপ্রদেশের চাষি গগন পেরিংয়ের উত্তর কী হতে পারে, তা আন্দাজ করা কঠিন নয়। তাই তা শুনেই নরেন্দ্র মোদী বললেন, “এখানে তো বলা হচ্ছে, চুক্তি চাষ করলে সংস্থা জমি কেড়ে নেবে। এত মিথ্যে কথা!”
হরিয়ানার হরি সিংহ বিষ্ণোইকে মোদীর প্রশ্ন, “সরকার নিয়ন্ত্রিত মান্ডির বাইরে ফসল বেচে দাম পাচ্ছেন?” মধ্যপ্রদেশের সয়াবিন চাষি মনোজ পাতিদারকে জিজ্ঞাসা করলেন, “বেসরকারি সংস্থাকে ফসল বিক্রির সময়ে তারা কি নানা কারণ দেখিয়ে টাকা কেটে নিচ্ছে?” তেমন সমস্যা নেই শুনে জানতে চাইলেন, “বিশ্বাস করেন, তিন কৃষি আইনে লাভ হবে?” উত্তরপ্রদেশের মহারাজগঞ্জের চাষি রাম গুলাবের কাছে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন, “কৃষি আইনে লাভ হবে বলে বিশ্বাস করেন? কেউ জমি কেড়ে নেবে না তো?’’ একই সঙ্গে বললেন, ‘‘মিথ্যে প্রচার চলছে। আপনারা বললে লোকের বিশ্বাস বাড়ে।”
পিএম-কিসানের টাকা বিলির অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকদের সঙ্গে কথোপকথনে শুক্রবার মোদী ফের বোঝানোর চেষ্টা করলেন, তিন কৃষি আইনে চাষিদেরই লাভ। কৃষকরাও সরকারের সঙ্গে রয়েছেন। চুক্তি-চাষ করলে কর্পোরেট সংস্থা জমি গ্রাস করবে, ফসলের দাম মিলবে না, এমন প্রচার মিথ্যে।
একই সঙ্গে, তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনের ২৯তম দিনে ফের প্রধানমন্ত্রীর দাবি, দিল্লি অবরোধের পিছনে রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। আছে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শ। প্রমাণ হিসেবে তাঁর যুক্তি, কৃষকদের আন্দোলন শুরু হয়েছিল ন্যায্য এমএসপির দাবিতে। কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী ও একটি রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকেদের হাতে রাশ চলে যাওয়ার পরে হিংসায় জড়িত অভিযুক্তদের মুক্তির দাবি উঠেছে। জাতীয় সড়ক টোলমুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। অভিযোগ, নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এই আন্দোলনকে ব্যবহার করছেন বিরোধীরা।
দিল্লির সীমানায় অবরোধকারী কৃষকেরা তাঁদের মঞ্চে সে ভাবে কোনও রাজনৈতিক দলকে ঘেঁষতে দেননি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ফের অভিযোগ তোলায় কৃষক নেতাদের প্রশ্ন, রাজনৈতিক মদতপুষ্ট আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তাহলে সরকার কেন কথা বলছে? কৃষি আইনের এত গুণ থাকলে, কেন্দ্র কেন তাতে একগুচ্ছ সংশোধনে রাজি?
প্রধানমন্ত্রী যখন ভিডিয়ো কনফারেন্সে বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলছেন, তখন সেই বক্তৃতা প্রচারে নজফগড়ে বিজেপির অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেছেন, “দু’এক বছরের জন্য পরীক্ষামূলক ভাবে আইন চালু হতে দিন। তারপরে যদি মনে হয়, চাষিদের লাভ হচ্ছে না, তা হলে দরকার মতো আইন সংশোধন করা হবে।”
আন্দোলনের পিছনে বিরোধীদের মদতের অভিযোগ শুনে কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, “মোদীজির এ সব কথা কৃষকদের সামনে গিয়ে বলার হিম্মত নেই। উনি যদি কৃষকদের কথা এত দরদ দিয়ে ভাবেন, তা হলে চাষিরা কেন এই ঠাণ্ডায় খোলা আকাশের নীচে বসে রয়েছেন?”
প্রধানমন্ত্রী অবশ্য এ দিনও বলেছেন, সরকার চাষিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে তৈরি। বৃহস্পতিবারই কেন্দ্রের তরফে ফের কৃষক নেতাদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তা নিয়ে অবশ্য কৃষক নেতারা কোনও সিদ্ধান্ত জানাননি। সূত্রের খবর, কেন্দ্রের সঙ্গে ফের আলোচনার বিষয়ে পরিকল্পনার জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি তৈরি হতে পারে। তবে দিল্লির সিংঘু, টিকরি সীমানার সঙ্গে এ বার গাজিয়াবাদের দিকে গাজিপুর সীমানাতেও বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। এ দিন ৫ হাজার নতুন কৃষক জড়ো হওয়ায় সেখানে এখন সংখ্যা ১২ হাজার ছাপিয়েছে।
রাজস্থান-দিল্লি জাতীয় সড়কে রাজস্থান-হরিয়ানা সীমানার শাহজাহানপুরে গত দু’সপ্তাহ ধরে কৃষকেরা রাস্তার একটি দিক অবরোধ করে বসেছিলেন। মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে এক হাজার কৃষক মিছিল করে এসে যোগ দেওয়ায় তাঁরা দিল্লির দিকে এগোতে চেষ্টা করেন। তাঁদের আটকাতে পুলিশ ব্যারিকেড, কন্টেনার এনে রাস্তার দু’দিকই আটকে দিয়েছে। হরিয়ানার জিন্দে বিক্ষুব্ধরা উপমুখ্যমন্ত্রী দুষ্যন্ত চৌটালার জন্য তৈরি অস্থায়ী হেলিপ্যাড খুঁড়ে ফেলায় তাঁকে জনসভা বাতিল করতে হয়।