নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে নরেন্দ্র মোদী। বুধবার। ছবি: পিটিআই।
অর্থনীতির দুরবস্থা নিয়ে একের পর এক তিরে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছিলেন তিনি। রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বে বিরোধীদের পাশাপাশি যশবন্ত সিন্হা, অরুণ শৌরির মতো প্রবীণ বিজেপি নেতারাও তাঁকে নিশানা করছিলেন। এমনকী সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত ও সঙ্ঘ-পরিবারের সংগঠনগুলিও কৃষক, শ্রমিক, ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ীদের সমস্যা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানাচ্ছিলেন প্রকাশ্যেই।
এই ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে আজ আত্মরক্ষায় মুখ খুললেন নরেন্দ্র মোদী। নোট বাতিল, জিএসটি-তে অব্যবস্থা এবং এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৫.৭%-এ নেমে আসা— সমালোচকদের তিনটি অস্ত্রের মোকাবিলায় মাঠে নামলেন রীতিমতো হোমওয়ার্ক করে। বিজ্ঞান ভবনে ইনস্টিটিউট অব কোম্পানি সেক্রেটারিজের অনুষ্ঠানে এই প্রথম কোনও প্রধানমন্ত্রীকে বক্তৃতা দিতে দেখা গেল সঙ্গে নানা ছবি-গ্রাফিক্স নিয়ে। বিজেপি নেতারা বলছেন, ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’-এ যখন মোদী শিল্পমহলের সামনে রাজ্যের উজ্জ্বল ছবি তুলে ধরতেন, তখনও তাঁর এমন ছবি-গ্রাফিক্সের প্রয়োজন পড়েনি।
আরও পড়ুন: মোদীর কাজ ছ’মাসে করব, দাবি রাহুলের
আজ বিরোধীদের পাল্টা আক্রমণ করেছেন মোদী। কিন্তু তার থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ হলো, মোদী বলেছেন, তিনি কঠোর থেকে কঠোর সমালোচনা হৃদয় দিয়ে স্বীকার করেন। তাঁর সরকার সংবেদনশীল। সঠিক সমালোচনা হলে নম্রতার সঙ্গে সরকার তা গ্রহণ করবে। কিন্তু একই সঙ্গে মহাভারতে কর্ণের সারথি, শল্যের নেতিবাচক, অতিসাবধানী মনোভাবের কথা সমালোচকদের মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘‘দেশে নিরাশার আবহ তৈরি করাও উচিত নয়।’’
মোদীর ঢাল
উদারীকরণের পর থেকে বিদেশি লগ্নির অর্ধেক এসেছে গত তিন বছরে
শহরে ও গ্রামের বাজারে চাহিদা বাড়ছে, যা অর্থনীতির উন্নতির সূচক
জুনের পর থেকে গাড়ি বিক্রি, বিমান যাত্রা, বিমানে পণ্য পরিবহণ, টেলিফোনের গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে
নোট বাতিলের পরে কালো টাকার লেনদেনের আগে ৫০ বার ভাবতে হচ্ছে
সমালোচনারই জবাব দিতে গিয়ে আজ অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে কার্যত শ্বেতপত্র পেশ করেছেন মোদী। বিরোধীদের বিঁধে বলেছেন, এই প্রথম বৃদ্ধির হার ৫.৭%-এ নামেনি। মনমোহন-সরকারের আমলেও আট বার তা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি অর্থনীতিবিদ নই। তেমন দাবিও করি না। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের আমলেই কী করে ভারত পাঁচটি ভঙ্গুর অর্থনীতির তালিকায় ঢুকেছিল, তা বুঝিনি।’’ তাঁর আমলে গোড়ার দিকে যখন জিডিপি বেড়েছিল, তখন তা মাপার নতুন পদ্ধতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন সমালোচকেরা। এখন জিডিপি-র মন্দায় কেন তাঁরা একই সন্দেহ প্রকাশ করছেন না, তা নিয়েও কটাক্ষ করেছেন মোদী।
ইউপিএ-সরকারের শেষ তিন বছরের সঙ্গে নিজের তিন বছরের কাজ, বিদেশি লগ্নির তুলনা করে মোদী বোঝাতে চেয়েছেন, তিনি কতখানি এগিয়ে। গাড়ি, মোটরবাইক, ট্রাক্টর বিক্রি থেকে বিমানে যাত্রী, পণ্য পরিবহণ বৃদ্ধির হার দেখিয়ে যুক্তি দিয়েছেন, অর্থনীতিতে মন্দা ঘনায়নি। তাঁর বক্তব্য, তিনি খয়রাতিতে বিশ্বাস করেন না। মানুষের ক্ষমতায়নের চেষ্টা করেন। একই সঙ্গে বুক ঠুকে মোদীর দাবি, ‘‘বিদেশি লগ্নি শুধু নীতির ভরসায় নয়, আমাদের সদিচ্ছার ভরসাতেও আসছে।’’ এবং নোট বাতিলের পক্ষে বলেছেন, ‘‘ইতিহাস ৮ নভেম্বরকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধের সূচনা হিসেবে মেনে নেবে।’’ কোম্পানি সেক্রেটারিদের সাক্ষী রেখে দাবি করেছেন, নোট বাতিলের ফলে কালো টাকার লেনদেন আর সহজে হচ্ছে না। পাশাপাশি, ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, জিএসটি-তে যেখানে যত সমস্যা রয়েছে, সব দূর করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
যদিও মোদীর ব্যাখ্যাকে আমল দিতে নারাজ বিরোধী নেতাদের যুক্তি, আসলে প্রধানমন্ত্রী নিজেও বুঝতে পারছেন যে, হাওয়া ঘুরতে শুরু করেছে। তলায় তলায় মোদী সম্পর্কে সমালোচনা, কটাক্ষ, শুরু হয়েছে। তাই আত্মপক্ষ সমর্থনে এত প্রস্তুতি। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সূর্যেওয়ালা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর মিষ্টি কথায়, নাটকেই যদি অর্থনীতি শুধরে যেত, তা হলে এখনই ফল মেলা উচিত।’’
মোদীর অবশ্য আশ্বাস, ধীরে ধীরে শুধরে যাবে অর্থনীতি। চলতি অর্থ বছরের শেষেই বৃদ্ধির হার ৭.৭ শতাংশে পৌঁছবে। সে জন্য যা করা দরকার তা তাঁর সরকার করবে।