সেপ্টেম্বর মাসে গোটা দেশে ২.৮৬ কোটি পরিবার একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কাজ চেয়েছেন। প্রতীকী ছবি।
একশো দিনের কাজের প্রকল্পকে ‘গর্ত খোঁড়ার কাজ’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। অর্থনীতির ইঞ্জিনে এখনও গতি ফেরাতে না পেরে মোদী সরকারকে সেই একশো দিনের কাজের প্রকল্পে এ বছরও বাড়তি অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষ সূত্রের খবর, গত বছর কোভিডের জন্য পরিযায়ী শ্রমিকেরা শহর থেকে কাজ হারিয়ে গ্রামে ফিরেছিলেন। একশো দিনের কাজের মজুরিই ছিল একমাত্র সম্বল। তাই কেন্দ্রীয় সরকারকে একশো দিনের কাজ বা 'নরেগা' প্রকল্পে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করতে হয়েছিল। এ বছর লকডাউন উঠে গিয়েছে। ফলে গ্রামে একশো দিনের কাজের চাহিদা কমবে বলে আশা করেছিল কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। বাজেটে গত বছরের তুলনায় অর্থও কম বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একশো দিনের কাজের চাহিদা এখনও যথেষ্ট। বাজেটে যা বরাদ্দ হয়েছিল, তা ইতিমধ্যেই শেষ। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, এই পরিস্থিতিতে একশো দিনের কাজে বরাদ্দ বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই। কারণ, রোজগার গ্যারান্টি আইনে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কেউ কাজ চাইলে তা দিতেই হবে।
গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক সূত্রের খবর, সেপ্টেম্বর মাসে গোটা দেশে ২.৮৬ কোটি পরিবার একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কাজ চেয়েছেন। অক্টোবরে এখনও পর্যন্ত যা অনুমান, তাতে এ মাসেও ২ কোটির বেশি পরিবারের কাজের চাহিদা মেটাতে হবে। কোভিডের বছরের তুলনায় কাজের চাহিদা অনেকখানি কমেছে ঠিকই। কারণ, গত বছর লকডাউনের পরে মে মাসে প্রায় সাড়ে তিন কোটি, জুন মাসে ৪ কোটির বেশি পরিবার নরেগা প্রকল্পে কাজ চেয়েছিলেন। কিন্তু কোভিডের আগের বছরের তুলনায় কাজের চাহিদা এখনও বেশি। ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে ১.২০ কোটি পরিবারকে কাজ দিতে হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘আর কোথাও কাজ না মিললে, এমনকি চাষের কাজও না থাকলে মানুষ একশো দিনের কাজে নাম লেখাতে বাধ্য হন। এখন শহরে, কলকারখানায়, নির্মাণ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হয়ে গিয়েছে। তার পরেও যখন একশো দিনের কাজের চাহিদা যথেষ্ট, বুঝতে হবে, অর্থনীতি এখনও প্রাক-কোভিড পরিস্থিতিতে ফেরেনি। যাঁরা কাজ হারিয়ে গ্রামে ফিরেছিলেন, তাঁদের অনেকেই কাজ ফিরে পাননি।’’
এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কেন্দ্রকে বরাদ্দ বাড়াতে হবে বলে মনে করছেন অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা। গত অর্থ বছরে, ২০২০-২১-এ এই খাতে প্রথমে ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। কোভিডের ধাক্কায় গ্রামে মানুষকে রোজগার দিতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ১ লক্ষ ১১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করতে হয়। চলতি অর্থ বছরে সেই তুলনায় ৩৪ শতাংশ কম বরাদ্দ হয়। সেই অঙ্ক ছিল, ৭৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের হিসেব বলছে, ইতিমধ্যেই ৮০ হাজার ২২২ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। অথচ রাজ্যগুলির কাছে গিয়েছে মাত্র ৭১ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৮ হাজার কোটি টাকার মতো ঘাটতি। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, বাজেটেই অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রয়োজনে একশো দিনের কাজে আরও অর্থ বরাদ্দ হবে। পরিস্থিতি যাচাই করে আসন্ন বাদল অধিবেশনে অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দের জন্য বিল আনা হবে।