প্রতীকী ছবি।
ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রণের জন্য মোদী সরকার নতুন আইন তৈরি করতে চাইলেও, তার উপরে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারির সম্ভাবনা আপাতত কম বলেই সরকারি সূত্রের দাবি।
আগামী সপ্তাহ থেকে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে খবর হয়, সেখানে কেন্দ্র ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিল এনে সমস্ত বেসরকারি ক্রিপ্টোকারেন্সির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চলেছে। তার পরেই বিটকয়েন-সহ সমস্ত ক্রিপ্টোকারেন্সির দামে ধস নামে। প্রায় সব ডিজিটাল কারেন্সির দরই ১৫ শতাংশ কমে যায়। চলতি মাসে ক্রিপ্টোকারেন্সির দর এতখানি নিচে নামেনি।
এর পরেই সরকারি সূত্রে জানানো হয়, কেন্দ্র প্রথমে ত্রিপ্টোকারেন্সির উপরে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞার কথা ভাবলেও, এখন সেই অবস্থান বদলেছে। কারণ সরকার মনে করছে, ক্রিপ্টোকারেন্সির উপরে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারি করা সম্ভব নয়। তার বদলে এতে লাগাম পড়াতে হবে। যাতে বিদেশে কালো টাকা পাচার, সন্ত্রাসে আর্থিক মদত বা বিপুল মুনাফার লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে পথে বসানো সম্ভব না হয়।
অথচ মঙ্গলবার রাতে সংসদের অধিবেশনে সরকার যে ২৬টি বিল পাশের পরিকল্পনা করছে, তাতে বলা ছিল, কিছু ছাড় দিয়ে সব রকম বেসরকারি ক্রিপ্টোকারেন্সির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি অ্যান্ড রেগুলেশন অব অফিসিয়াল ডিজিটাল কারেন্সি বিল’ নিয়ে আসা হবে। সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, গত বাজেট অধিবেশনের সময়ে যে বিল আসার কথা ছিল, তার লক্ষ্য ছিল ক্রিপ্টোকারেন্সির উপরে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারি করা। সম্ভবত সেই লক্ষ্যের কথাগুলোই আবার ‘কপি-পেস্ট’ হয়ে গিয়েছে!
সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, ক্রিপ্টোকারেন্সিকে কোনও ভাবেই আইনি মুদ্রা বলে চিহ্নিত করা হবে না। তা দেশের মুদ্রা ও কর ব্যবস্থার পক্ষে বিপজ্জনক। তবে তা নতুন লগ্নির ঠিকানা বা সম্পদ হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। তার উপরে কর বসানোর সম্ভাবনাও রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন। সংসদে পেশ করার আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় এই বিল নিয়ে আলোচনা হবে। বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠক হলেও এই বিল নিয়ে আলোচনা হয়নি বলেই সরকারি সূত্রের দাবি।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর ডি সুব্বারাওয়ের মতে, ক্রিপ্টোকারেন্সিকে মুদ্রার মাপকাঠিতে নিষিদ্ধ করে সম্পদ হিসেবে ছাড় দেওয়াই আদর্শ আইন। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আর এক প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনের আবার মত, এখন প্রায় ছ’হাজার ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে থাকলেও, শেষ পর্যন্ত কয়েকটি মাত্র টিকে থাকবে। এখন ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম বৃদ্ধিকে ‘বুদবুদ’-এর সঙ্গে তুলনা করছেন রাজন। তাঁর যুক্তি, অনেকে বোকামি করে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে টাকা ঢালছেন বলেই এর দাম বাড়ছে।
কেন্দ্র বেসরকারি ক্রিপ্টোকারেন্সি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে পারে বলে আশঙ্কায় বিটকয়েনের দর প্রায় ১৮ শতাংশের বেশি কমে গিয়েছিল। অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির দরেও একই রকম পতন হয়েছে। বিটকয়েনের মূল্য প্রায় ৫৫,৪৬০ ডলার পড়েছে। তবে সরকারের তরফে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হবে না বলে আশ্বাস মেলার পরে আবার দর কিছুটা বেড়েছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্পমহলের তরফে আজ বিনিয়োগকারীদের কাছে শান্ত থাকার আবেদন জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারের কাছে এ বিষয়ে ভারসাম্য রেখে চলার আবেদনও জানানো হয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নিজের সরকারি ক্রিপ্টোকারেন্সি চালু করবে। ইতিমধ্যেই যারা বেসরকারি ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লগ্নি করেছেন, তাদের সেখান থেকে বেরিয়ে আসারও সুযোগ দেওয়া হবে। অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সম্প্রতি ক্রিপ্টোকারেন্সির শিল্পমহলের সঙ্গে বৈঠক করেছিল। সেই বৈঠকেও এটাই মত হিসেবে উঠে আসে যে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারি করা মুশকিল। তার বদলে নিয়ন্ত্রণ জারি করতে হবে।