বাজেটে এ বার চোখ গ্রাম ভারতে? ছবি- পিটিআই।
সামনে লোকসভা ভোট। বিরোধীরা জোট বেঁধেছেন। গত ডিসেম্বরের বিধানসভা ভোটে তিনটি বড় রাজ্য হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির। তাই সরকারের কাঁধে রাজস্ব ঘাটতি আর ঋণের বোঝাটা বাড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার তার শেষ বছরের বাজেটকে জনমোহিনী করবেন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের বক্তব্য, ভোটের কথা মাথায় রেখে গ্রামকে কার্যত ‘ডোল’ পাইয়ে দেওয়া হবে।
তার ফলে, গ্রাম কল্যাণে বরাদ্দ বাড়ানো হতে পারে প্রায় ১৬ শতাংশ। ছোট ব্যবসায়ীদের উৎসাহ দিতে নতুন কয়েকটি প্রকল্পেরও ঘোষণা হতে পারে। আবার মূলত শহুরে ভোটারদের কথা ভেবে আয়করদাতাদের ছাড়ের পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে। যার জেরে বাজেট ঘাটতি আরও বাড়ার আশঙ্কা যথেষ্টই জোরালো।
সরকারি সূত্রের খবর, চলতি অর্থবর্ষে গ্রাম কল্যাণে অর্থবরাদ্দের পরিমাণ ছিল ১.১২ লক্ষ কোটি টাকা। যা বেড়ে হতে পারে ১.৩০ লক্ষ কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এর ফলে সরকার যতটা বাজেট ঘাটতি থাকবে বলে আশা করেছিল, ঘাটতির পরিমাণ তার চেয়ে বেশি হবে। ভাবা হচ্ছিল, গড় জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) ৩.৩ শতাংশের মধ্যেই ধরে রাখা যাবে বাজেট ঘাটতিকে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, তা বেড়ে ৩.৫ শতাংশ হবে। হতে পারে এমনকি, ৬.৩ শতাংশও।
আরও পড়ুন- নিশানায় বেকারত্ব রিপোর্ট! মোদীকে হিটলারের সঙ্গে তুলনা রাহুলের, জবাবে ‘মুসোলিনি’ কটাক্ষ বিজেপির
আরও পড়ুন- বাজেটে ঘুরে দাঁড়ানোর দাওয়াই চায় ছোট শিল্প
বিজেপির হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বিরোধী দল কংগ্রেস তিনটি রাজ্য রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ়ে ক্ষমতাসীন হওয়ার পরেই যে ভাবে একের পর এক কৃষকবন্ধু প্রকল্প ঘোষণা করেছে, ঋণ মকুবের ঘোষণা করেছে কৃষকদের জন্য, গরীবদের কল্যাণে একগুচ্ছ প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী, তাতে ভোটের বৈতরণী পেরনোর জন্য কৃষক ও গ্রামের কল্যাণে বড়সড় ঘোষণা করা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী মোদীর সামনে আর কোনও রাস্তা খোলা নেই বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই এ বার বাজেটে কৃষকদের জন্য ক্যাশ ট্রান্সফার প্রকল্পেরও ঘোষণা করা হতে পারে। তার ফলে সরকারের খরচ বাড়বে আরও ৭০ হাজার কোটি টাকা।
সিঙ্গাপুরের আইএনজি গ্রুপ এনভির অর্থনীতিবিদ প্রকাশ সাকপাল বলেছেন, ‘‘ভোটের পর এনডিএ সরকার ফিরে আসুক বা ক্ষমতাসীন হোক কংগ্রেসের নেতৃত্বে জোট সরকার, এই বাজেটের ফলে, সবার উপরেই চাপ বাড়বে। বাধা পাবে অর্থনৈতিক সংস্কারের কর্মসূচি। অনেক আর্থিক নীতিকেই শিথিল করতে হবে।’’
সমীক্ষক সংস্থা এডেলউইস সিকিওরিটিজ প্রাইভেট লিমিটেডের অর্থনীতিবিদ মাধবী অরোরা বলছেন, ‘‘লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বাজেট ঘাটতিকে ধরে রাখার আশাটা এখনই প্রায় ছেড়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে যদি সেই ঘাটতিকে ৩.৩ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ধরে রাখতে হয়, তা হলে সরকারি খরচ ব্যাপক ভাবে কাটছাঁট করতে হবে।’’
মুডি’জ ইনভেস্টর্স সার্ভিসের আশঙ্কা, বাজেট ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ৩.৩ শতাংশ থেকে একলাফে বেড়ে গিয়ে ৬.৩ শতাংশেও পৌঁছে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, বাজেট ও রাজস্ব ঘাটতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নির্ধারিত সময়ের আগেই ডিভিডেন্ড দেওয়ার জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে মোদী সরকার। কিন্তু তার জেরে ক্ষুদ্র সঞ্চয়-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে সুদের হার কমতে পারে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ