লালকৃষ্ণ আডবাণী
নিজের ‘গুরু’ লালকৃষ্ণ আডবাণীকে অপ্রাসঙ্গিক করে তুলতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী— দেশ জুড়ে এমন একটা ধারণার প্রচলন রয়েছে। বিজেপির শীর্ষ সূত্রের খবর, সেই ধারণা বদলাতে আডবাণীকে আগামী বছর ‘ভারতরত্ন’ সম্মানে ভূষিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে মোদী সরকার।
অটলবিহারী বাজপেয়ীকে দু’বছর আগে নরেন্দ্র মোদী সরকার ‘ভারতরত্ন’ দিয়েছে। আডবাণীকে দেওয়া হয়েছে পদ্মবিভূষণ। বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন গুজরাতে দাঙ্গার পরে চন্দ্রবাবু নায়ডুর মতো শরিক নেতাদের দাবি মেনে মোদীকে মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আডবাণী তাঁকে সে কাজ থেকে বিরত করেন। তারও আগে কেশুভাই পটেলকে সরিয়ে মোদীকে মুখ্যমন্ত্রী করার প্রশ্নেও অমত ছিল বাজপেয়ীর। আডবাণীর সক্রিয় ভূমিকাতেই সেটা সম্ভব হয়। তবে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার যখন নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে, বিরোধিতা করেছিলেন আডবাণী। কিন্তু মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে আডবাণী কখনই কোনও বিরূপ মন্তব্য করেননি। বিরোধী দলের কিছু নেতা এ বিষয়ে তাঁকে সক্রিয় করতে চেয়েছিলেন। আডবাণী তাঁদের বলেছিলেন, ‘শেষ জীবনে বিক্ষুব্ধ নেতা হতে পারব না। দল এবং মোদী— দুই-ই আমার সন্তান-সম।’
এ বার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে অনেকে ভেবেছিলেন, আডবাণীকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করে গুরুদক্ষিণা দেবেন মোদী। কিন্তু শুধু প্রধানমন্ত্রী নয়, সঙ্ঘ পরিবারের প্রস্তাবিত নামের মধ্যেও আডবাণীর উল্লেখ ছিল না। এমনকী মুরলীমনোহর জোশী বা সুষমা স্বরাজের সম্পর্কেও নরম ছিল আরএসএস। কিন্তু আডবাণীকে তারা চায়নি। অথচ পরে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী রামনাথ কোবিন্দের মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়ে সংসদে হাজির হয়েছিলেন আডবাণী। মোদী এবং কোবিন্দের হাত তুলে ধরে ছবিও তুলেছেন। জিএসটি-র সূচনায় সংসদে মধ্যরাতের সম্মেলনেও তিনি থেকেছেন। আপাতত মোদী-ঘনিষ্ঠ অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন আডবাণীর সঙ্গে। মাসে এক বার আডবাণীর বাসভবনে যাচ্ছেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে।
আরও পড়ুন:
সীমান্তে বাড়ছে সেনা, আস্থা ‘ট্র্যাক টু’ দৌত্যেও
বিজেপির মার্গদর্শক মণ্ডলীর সদস্য, এনডিএ-র আহ্বায়ক, সংসদীয় এথিক্স কমিটির প্রধান আডবাণী। ভোটের আগে তিনি সরকারের সমালোচনায় মুখর হলে যে বিপদ বাড়বে, এ কথা বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব বিলক্ষণ জানেন। তবে আডবাণী শেষ পর্যন্ত এই প্রস্তাবে রাজি হবেন কি না, সেটা এখনও অজানা।
দু’বছর পরের লোকসভা নির্বাচনে গুজরাতের গাঁধীনগর থেকে ৮৯ বছরের আডবাণীর আর দাঁড়ানোর প্রশ্ন নেই। সে ক্ষেত্রে ওই আসনে তাঁর পুত্র বা কন্যা লড়বেন, নাকি গুজরাতের কোনও প্রার্থীকে মোদী দাঁড় করাবেন— সেটাও স্পষ্ট নয়। তবে দিল্লির পৃথ্বীরাজ রোডে তাঁর বর্তমান বাসভবনটি আডবাণীর সম্মানে তাঁকেই দিতে চায় মোদী সরকার। তিনি সাংসদ না-থাকলেও ‘ভারতরত্ন’ হিসাবে তাঁর আজীবন থাকার জন্য এই ব্যবস্থাটি করতে পারবে সরকার।